ছবি : শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা-র হাতে বিশেষ উপহার তুলে দিচ্ছেন মন্দিরের একনিষ্ট ভক্ত হীরালাল কপালী ও তার সহধর্মিনী প্রতিভা কপালী।
ওয়ারেন, ১৭ জানুয়ারী: উৎসাহ, উদ্দীপনায় আর নানা আয়োজনে গতকাল রবিবার রাজ্যের তিনটি মন্দিরে উদযাপিত হয়েছে পৌষ সংক্রান্তির পিঠা উৎসব। পিঠা বাঙালির চিরাচরিত ঐতিহ্যের অন্যতম একটি বাহক। এই ঐতিহ্য বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। গতকাল নগরীর শিব মন্দির- টেম্পল অব জয়, ডেট্রয়েট দুর্গা মন্দির এবং মিশিগান কালিবাড়িতে বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রবাসী বাঙালিরা পিঠা উৎসবের অয়োজনে অংশগ্রহণ করে।
এই উৎসব ও প্রতিযোগিতায় প্রবাসী বাঙালি নারীরা পিঠার ডালা হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। বাহারী এ সব পিঠা উৎসবকে রঙিন করে তোলে। পিঠা উৎসবের আয়োজনে তেলের পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপ্টা, চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, নারিকেল পুলি, নিমকি, নকশাসহ হরেক রকমের পিঠার বিপুল সমাহার ছিল। অনুষ্ঠানে সবাই মিলে পিঠা খেয়ে মুগ্ধ হন।
শিব মন্দিরের পিঠা উৎসবে গ্রাম-বাংলার প্রায় ৩০ রকমের পিঠার প্রদর্শনী হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা। বক্তব্য রাখেন রতন হাওলাদার, রাখি রঞ্জন রায়, অজিত দাস প্রমুখ । এসময় মন্দিরের একনিষ্ট ভক্ত হীরালাল কপালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ড. দেবাশীষ মৃধা এবং মন্দিরের কো-অর্ডিনেটর রতন হাওলাদারকে বিশেষ উপহার প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দেবাশীষ মৃধা বলেন, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। শুধু পৌষ পার্বনেই নয়, এ ধরণের পিঠা উৎসবের আয়োজন প্রতিনিয়ত করা উচিত। তবেই আমরা বাঙ্গালির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবো। এই পিঠা উৎসব সত্যিই আমাদের পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আজ আমরা হরেক রকমের পিঠার স্বাদ উপভোগ করছি। তিনি শিব মন্দিরে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসবের সুন্দর আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ পিঠা প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে ৬ জন বিজয়ী হয়েছেন। প্রথম হয়েছেন সুপর্না চৌধুরী, দ্বিতীয় শিল্পী পাল, ৩য় সঙ্গীতা পাল, ৪র্থ রত্না দেবনাথ, ৫ম সুম্মিতা চৌধুরী, ষষ্ট সুমা দাস। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন রতন হাওলাদার, পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু, চিন্ময় আচার্য্য, রাখি রঞ্জন রায় ও সুজন শীল। এছাড়াও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারি সকলকে শান্তনা পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। পরে একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন অত্রি রায়। তার গানে মুগ্ধ হন সকলেই।
এদিকে নানা আয়োজনে ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলে অনুষ্ঠিত হয়েছে জমজমাট পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতা। সকাল থেকেই শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি। নানা রংয়ের পিঠা তৈরী করে নিয়ে আসেন প্রবাসী গৃহবধূরা। উৎসবের শুরুতে সকাল ১১ টায় গীতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়। পরে নাম সংকীর্তন ও লুটের পর শুরু হয় বহু প্রত্যাশিত ও কাঙ্খিত পিঠা উৎসব ও প্রতিযোগিতা। এ সময় জমজমাট রূপ ধারণ করে উৎসবটি। এতে ঐতিহ্যবাহী নানা স্বাদের প্রায় ৪২ রকমের পিঠা ছিল। উল্লেখ্যযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল তেলের পিঠা, ভাপা পিঠা, খোলা চিতই, দুধ চিতই, দুধ পুলি,পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, ফুলঝুরি, সন্দেশ, চটপটি, সিঙ্গারা প্রভৃতি।
প্রতিযোগিতায় ১ম, ২য় ,৩য়, স্থান অর্জনকারীদের বিশেষ পুরষ্কার প্রদান করা হয়। তারা হলেন ১ম লাভলী দাশ, ২য় অনুপমা দাশ চৌধুরী, ৩য় মিনতি চৌধুরী । এছাড়াও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলকে সান্তনা পুরষ্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে শাড়ি। অনুষ্ঠানে হ্যামট্রাম্যাক সিটি মেয়র আমির গালিব অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মেয়র আমির গালিব এর কাছ থেকে ১ম পুরষ্কার গ্রহণ করেন লাভলী দাশের পক্ষে
তার স্বামী শম্ভু দাশ।
মিশিগান কালিবাড়িতেও বাঙালির ঐতিহ্যপূর্ণ পৌষ পার্বনের সুস্বাদু পিঠা উৎসবে বেশ আগ্রহ নিয়েই প্রবাসী বাঙালিরা অংশগ্রহণ করেন। সাময়িক সময়ের জন্য দেশীয় কৃষ্টিকালচারের স্বাদ আর ব্যতিক্রমধর্মী সাংস্কৃতিক আয়োজন নির্মল আনন্দের খোরাক যোগায় প্রাবাসীদের।
পৌষপার্বণ বা পিঠেপার্বণ একটি হিন্দু লোকউৎসব। বাংলা পৌষমাসের সংক্রান্তিতে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিন হিন্দুরা পিঠে প্রস্তুত করে দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করেন। পৌষ সংক্রান্তির অপর নাম তিলুয়া সংক্রান্তি বা পিঠে সংক্রান্তি। এই প্রাচীন উৎসবের একটি রূপ অদ্যাবধি পিঠেপার্বণের আকারে বাঙালি হিন্দু সমাজে প্রচলিত। মধ্যযুগের বাংলা মঙ্গলকাব্যে নানাপ্রকার পিঠে ও পিঠে গড়ার বিচিত্র সব উপাখ্যানের উল্লেখ রয়েছে।