ওয়ারেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি : মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাতে নগরীর শিব মন্দির-টেম্পল অব জয়ে মঞ্চস্থ হয়েছে বিশেষ নাটক ওঁম নম: শিবায়। নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন উদ্বোধন করেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মৃধা বলেন, কে এই শিব। কেন আমরা শিবের পুজো করি। শিব লিঙ্গ কেন। শিব লিঙ্গের আরাধনা কেন আমরা করি? শিব হলেন কনসাসনেস এর রুপক। শিব হলেন আমাদের চেতনা। এই চেতনা বা কনসাসনেস আমাদের সকলের মাঝে রয়েছে। সৃষ্টির আদিতে ছিল এক মহা শুন্য, শুধুই চেতনা, এই মহাশূন্য থকেই সৃষ্টি হয়েছে এই মহাবিশ্ব, এই চেতনার বিকাশের জন্য। এই চেতনারই রুপক শিব। আমরা প্রত্যেকেই এই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, শিবলিঙ্গ একটি সংকৃত শব্দ। শিব লিঙ্গ মানে চিহ্ন। এই চিহ্নটি বিন্দুর ও প্রতিক। এখানে লিঙ্গ শব্দটি পুরুষাঙ্গ বুঝায় না। এই কথাটি আপনাদের খুব সুন্দর ভাবে জেনে নিতে হবে কারণ আপনারা যদি না জানেন তাহলে অনেক বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা অনুধাবন করি বারো বা তের টি শিবরাত্রি। কিন্তু ফাল্গুন মাসে যে শিবরাত্রিটি আমরা উদযাপন করি এটিকে মহা শিবরাত্রি বলা হয়ে থাকে। কারণ এই দিনে সমগ্র গ্রহ উপগ্রহ এমনি ভাবে বিন্যস্ত হয় যে এই দিনে সমগ্র জীব জগৎ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে। তাই এই রাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ জগতের মঙ্গল কামনায় সারারাত জেগে উপাসনায় ব্রতী হন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর রাহুল দাশের রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ওঁম নম: শিবায়। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ড. দেবাশীষ মৃধা, চিনু মৃধা, রাহুল দাশ, অতুল দস্তিদার, কৃষ্ণা দাশ, রতন হাওলাদার, রাখি রঞ্জন রায়, স্বদেশ রঞ্জন সরকার, কমলেন্দু পাল এবং নিলীমা রায়। নাটকের স্ক্রিপ্ট রিডিং করেন চিনু মৃধা ও চিন্ময় আচার্য্য। নাটকে নৃত্যে অংশ নেন রিয়া রায়, কৃষ্টি পাল ও রিশিকা পাল।
সাউন্ড সিস্টেম ও লাইটিংয়ে ছিলেন সৌম্য চৌধুরী, সুমিত ধর, সুমিত দাশ এবং অয়ন চক্রবর্তী। মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু ও কমলেন্দু পাল। পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে শিব মন্দির নটরাজ থিয়েটার আয়োজিত নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন উপভোগ করেন হল ভর্তি দর্শক। সেই সাথে দর্শকরাও নাটকটি দেখে প্রশংসাও করছেন।
এদিকে গতকাল দুপুর থেকেই শিব মন্দির এবং মিশিগান কালিবাড়িতে ছিল পূণার্থীদের ভিড়। শিব বিগ্রহে অর্ঘ্য নিবেদন করেন ভক্তরা। শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করেন। একইভারে রাতেও ভক্তরা শিব মন্দির, মিশিগান কালিবাড়ি এবং ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলে ভিড় করেন। মন্দিরে মন্দিরে শিব লিঙ্গকে দুধ, গঙ্গাজলে স্নান করান তারা। উপোস করে ফুল, ফল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
কথিত আছে, এদিন শিবকে স্নান করিয়ে যে মনঃকামনা করা হয়, তাই পূরণ হয়। তাই শিবের মতো বড় পাওয়ার জন্য অবিবাহিত নারীরা সারাদিন উপবাস থেকে শিবের মাথায় জল ঢেলে পুজো সম্পন্ন করেন ৷ তবে বিবাহিত দম্পতিরাও স্বামীর সঙ্গে সুখে সংসার করার কামনায় শিবের পুজো করেন ৷ পুরুষরা সমৃদ্ধি কামনা করেন।
শিবরাত্রি সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই শিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। শিবরাত্রি হল হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য শিবব্রত পালিত হয়।
হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিব মহাপুরাণ অনুসারে এই রাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন । আবার এই রাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল । এর নিগুঢ় অর্থ হল, শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদিশক্তি বা পরাপ্রকৃতির মিলন। এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপ নাশ ও মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। আর তাই মহাদেব শিবের আশীর্বাদ লাভের আশায় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শিবব্রত পালন করে থাকেন।