বাংলা শিক্ষা শব্দটি এসেছে 'শাস' ধাতু থেকে। যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দান করা। অন্যদিকে শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ Education এসেছে ল্যাটিন শব্দ Educere বা Educatum থেকে। এই দিক থেকে Education অর্থ হলো 'নিষ্কাশন করা' বা নির্দেশনার সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর শিক্ষাদানের মহান ব্রত যার কাজ তিনিই শিক্ষক। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিতদেরই শিক্ষক বলা হয়। তবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলা হয় অধ্যাপক। শিক্ষকদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয়। কেননা একজন আদর্শ শিক্ষকই পারেন তার অনুসারীদের হৃদয়ে জ্ঞানের বীজ বপণ করতে, ন্যায়ের দীক্ষা দিতে, শিক্ষার্থীর মানবতাবোধকে জাগ্রত করতে। একজন শিক্ষক কেবল পাঠদানকে সার্থকই করে তোলেন না, পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরাণ্বিত করেন। স্বীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে তাদেরকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা কী? হ্যাঁ, সংকীর্ণ অর্থে প্রতিষ্ঠানভেদে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা আরো বড় কোনো ডিগ্রি, শিক্ষায় বিশেষ কোনো ডিগ্রি ইত্যাদি। কিন্তু ব্যাপক অর্থে যিনি তার সঞ্চিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের মাঝে উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদেরকে বিকশিত করতে পারবেন তিনিই শিক্ষক হওয়ার যোগ্য। শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শিক্ষার্থী আর শিক্ষক হবেন গুরু, পুরোহিত বা রাজা। অর্থাৎ শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষক হবেন শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড। তাহলে এ কথা পরিস্কার যে, একজন আদর্শ শিক্ষক অনন্য সব গুণাবলির অধিকারী হবেন। শিক্ষকের গুণাবলি প্রধানত দুই প্রকার। যথা: সহজাত গুণাবলি এবং অর্জিত গুণাবলি। সহজাত গুণাবলিগুলো হচ্ছে_
সুস্বাস্থ্য, সুকণ্ঠ, স্পষ্ট উচ্চারণ, রসজ্ঞান, তীক্ষ্ণবুদ্ধি, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ও সামাজিকতা। আর অর্জিত গুণাবলিগুলো হচ্ছ__ বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, শিক্ষামূলক প্রদীপনের ব্যবহার, মনোবিদ্যার জ্ঞান, শিক্ষা পদ্ধতির ধারণা, বিদ্যালয় পরিচালনা ইত্যাদি। একজন শিক্ষক এর মাঝে উপরিউক্ত সবগুলো গুণাবলি না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কি শিক্ষক হিসেবে মেনে নেবো না? অবশ্যই নেবো। শিক্ষকদের জানার চেয়ে বিতরণ বেশি হওয়াটাই আবশ্যক। শিক্ষক হবেন তার সমাজের তাজ স্বরূপ। তিনি হবেন সর্বজনীন, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ইংরেজি 'Sir' এর বাংলা প্রতিশব্দ জনাব হলেও আমরা কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে 'Sir' শব্দটি ব্যবহার করি। 'Sir' শব্দটি আজকাল চেয়ার বা পদকেও বলা হয়; যা অবিরাম উচ্চারিত না হলে আমলা, ডাক্তার, উকিল, পুলিশ লিঙ্গনির্বিশেষ সকলেই অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। কিন্তু সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত পেশার ব্যক্তিকে 'ভাই, 'মাস্টার ভাই' 'মাস্টার' বলি। বলা বাহুল্য আপনার সন্তান ও আপনাকে অনুকরণ করে তার শিক্ষককে ভাই, বড়ভাই জাতীয় কিছুই মনে করবে এবং ভাই সম্বোধন করবে। অথচ বিপদ পড়লে পুলিশ কনস্টেবল এমনকি অফিস-পিয়নকেও আমরা স্যার সম্বোধন করি। কেউ আবার নিজের ছাত্রজীবনের গান গাইতে থাকেন। আমার অমুক স্যার এমন ছিলেন, তমুক স্যার এই করেছেন সেই করেছেন। বর্তমানে কি সব আবর্জনা সব....ইত্যাদি, ইত্যাদি। আরে ভাই, একটু থামুন, দেখুন, শুনুন, জানুন। সে যুগে ত্যাগী শিক্ষক ছিলেন। হয়তো কেউ নিজ গ্রামে বা বাড়িতে থাকতে বা শহুরে জীবনের কোলাহল এড়িয়ে চলতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাইতেন গ্রামের কোনো পাঠশালায়। তাঁরা স্থানীয় রাজনীতি বা সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত থাকতেন। আর্থিক ভাবে না হলেও সমাজ তাঁকে বিভিন্ন ভাবে সম্মানের আসনে রাখত। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখিয়ে দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তখন শিক্ষকতা একটি অবহেলিত পেশার নাম। আজ যারা শিক্ষক তারা শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়। শিক্ষক হওয়ার সকল যোগ্যতা অর্জন করে। নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বছরের পর বছর বিনা বেতনে বা নামমাত্র বেতনে চাকরি করেন। কেউ কেউ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়ায় শিক্ষক স্বীকৃতি পেতে। শিক্ষক হওয়ায় পর শুরু হয় আরো বড় কষ্ট; প্রতিটি পদক্ষেপে রাষ্টীয় হস্তক্ষেপ। রাষ্ট্রের আদেশ, হুকুম-আহাকাম পালনের বাধ্যবাধকতা। যেনো শিক্ষক হিটলারের সৈনিক। কোথাও থাকে স্থানীয় রক্তচক্ষু। আবার কখনও উগ্র মৌলবাদের শিকার হন শিক্ষক। শিক্ষককে এখন শিক্ষাশ্রমিক ছাড়া কিছুই ভাবা যায় না। তাও একটা প্রশান্তি পেতেন, যদি সম্মানজনক মজুরি থাকত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। মাধ্যমিকও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অবস্থা আরো নাজুক; "বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।" বা "ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার!" এমপিও নামক আপাদমস্তক এক প্রবঞ্চনার ফাঁদ আছে এখানে। এ যেন এক নব্যদাসপ্রথা! দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষক এমপিওভুক্ত; যারা সরকারি কর্তৃপক্ষ এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। কেউ কেউ হয়তো হাজার মাইল দূরের কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োপ্রাপ্ত হয়ে নামমাত্র আর্থিক সুবিধায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। অথচ পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, পরীক্ষা পদ্ধতি সবই অভিন্ন। উন্নত বিশ্বে যখন প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয় তখন আমরা দিই চরম অবহেলা। শিক্ষক সবচে' জ্ঞানী হবেন এমন তো নয়। বরং তিনি তার শিক্ষার্থীদেরকে বা সমাজকে কতটা উজ্জীবিত করতে পারেন তাই মূখ্য। শতসহস্র উনুনের আগুন জ্বালাতে যেমন একটি মাত্র দিয়াশলাই কাঠির বারুদই যথেষ্ট তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন লক্ষ প্রাণের প্রেরণার উৎস। তবে এমন শিক্ষক তখনই আত্মপ্রকাশ করবেন যখন তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। শিক্ষকের বাকস্বাধীনতা থাকবে। ভিন্ন পেশাজীবী হিতাকাঙ্ক্ষী অনেকেই শিক্ষকতাকে ভালোবেসে একগাদা উপদেশ শুনিয়ে যান। শিক্ষকতাকে ভালোবাসেন অজুহাতে কেউ কেউ কালেভদ্রে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে আসেন। হতে পারেন তিনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, জনপ্রতিনিধি বা অন্য কিছু। হয়তো তিনি খুবই ভালো পাঠদানও করেন, তথাপি তা হবে কষ্টকরে মাতৃদুগ্ধ চুষা শিশুকে ফিডার খাওনোর মত। সরু লতায় ঝুলতে থাকা লাউ, কুমড়াটি যেমন মাতৃলতায় নিরাপদ বা আপাতদৃষ্টিতে দেখা গাছের ডালে দোদুল্যমান পাখির বাসাটি যেমন পাখির ছানার জন্য নিরাপদ আশ্রয় তেমনি শিক্ষকের হৃদয় তার শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়। সেখানে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না যাওয়াই সমীচীন। অতএব 'শিক্ষা ও 'শিক্ষক' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের মুক্তি এবং হানাদারমুক্ত গুরুগৃহ হোক শিক্ষক দিবসের প্রত্যাশা।
লেখক: মোস্তাক আহাম্মদ
সিনিয়র শিক্ষক (শারীরিকশিক্ষা)
[জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক (জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭,২০২২ এবং ২০২৩)
সুস্বাস্থ্য, সুকণ্ঠ, স্পষ্ট উচ্চারণ, রসজ্ঞান, তীক্ষ্ণবুদ্ধি, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতা ও সামাজিকতা। আর অর্জিত গুণাবলিগুলো হচ্ছ__ বিষয় সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, শিক্ষামূলক প্রদীপনের ব্যবহার, মনোবিদ্যার জ্ঞান, শিক্ষা পদ্ধতির ধারণা, বিদ্যালয় পরিচালনা ইত্যাদি। একজন শিক্ষক এর মাঝে উপরিউক্ত সবগুলো গুণাবলি না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কি শিক্ষক হিসেবে মেনে নেবো না? অবশ্যই নেবো। শিক্ষকদের জানার চেয়ে বিতরণ বেশি হওয়াটাই আবশ্যক। শিক্ষক হবেন তার সমাজের তাজ স্বরূপ। তিনি হবেন সর্বজনীন, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ইংরেজি 'Sir' এর বাংলা প্রতিশব্দ জনাব হলেও আমরা কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সম্মান জানাতে 'Sir' শব্দটি ব্যবহার করি। 'Sir' শব্দটি আজকাল চেয়ার বা পদকেও বলা হয়; যা অবিরাম উচ্চারিত না হলে আমলা, ডাক্তার, উকিল, পুলিশ লিঙ্গনির্বিশেষ সকলেই অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। কিন্তু সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত পেশার ব্যক্তিকে 'ভাই, 'মাস্টার ভাই' 'মাস্টার' বলি। বলা বাহুল্য আপনার সন্তান ও আপনাকে অনুকরণ করে তার শিক্ষককে ভাই, বড়ভাই জাতীয় কিছুই মনে করবে এবং ভাই সম্বোধন করবে। অথচ বিপদ পড়লে পুলিশ কনস্টেবল এমনকি অফিস-পিয়নকেও আমরা স্যার সম্বোধন করি। কেউ আবার নিজের ছাত্রজীবনের গান গাইতে থাকেন। আমার অমুক স্যার এমন ছিলেন, তমুক স্যার এই করেছেন সেই করেছেন। বর্তমানে কি সব আবর্জনা সব....ইত্যাদি, ইত্যাদি। আরে ভাই, একটু থামুন, দেখুন, শুনুন, জানুন। সে যুগে ত্যাগী শিক্ষক ছিলেন। হয়তো কেউ নিজ গ্রামে বা বাড়িতে থাকতে বা শহুরে জীবনের কোলাহল এড়িয়ে চলতে জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাইতেন গ্রামের কোনো পাঠশালায়। তাঁরা স্থানীয় রাজনীতি বা সামাজিক সংগঠনের সাথেও জড়িত থাকতেন। আর্থিক ভাবে না হলেও সমাজ তাঁকে বিভিন্ন ভাবে সম্মানের আসনে রাখত। কিন্তু স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লিখিয়ে দেশ যখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে তখন শিক্ষকতা একটি অবহেলিত পেশার নাম। আজ যারা শিক্ষক তারা শিক্ষক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়। শিক্ষক হওয়ার সকল যোগ্যতা অর্জন করে। নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে বছরের পর বছর বিনা বেতনে বা নামমাত্র বেতনে চাকরি করেন। কেউ কেউ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়ায় শিক্ষক স্বীকৃতি পেতে। শিক্ষক হওয়ায় পর শুরু হয় আরো বড় কষ্ট; প্রতিটি পদক্ষেপে রাষ্টীয় হস্তক্ষেপ। রাষ্ট্রের আদেশ, হুকুম-আহাকাম পালনের বাধ্যবাধকতা। যেনো শিক্ষক হিটলারের সৈনিক। কোথাও থাকে স্থানীয় রক্তচক্ষু। আবার কখনও উগ্র মৌলবাদের শিকার হন শিক্ষক। শিক্ষককে এখন শিক্ষাশ্রমিক ছাড়া কিছুই ভাবা যায় না। তাও একটা প্রশান্তি পেতেন, যদি সম্মানজনক মজুরি থাকত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। মাধ্যমিকও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের অবস্থা আরো নাজুক; "বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো।" বা "ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার!" এমপিও নামক আপাদমস্তক এক প্রবঞ্চনার ফাঁদ আছে এখানে। এ যেন এক নব্যদাসপ্রথা! দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৯৭ ভাগ শিক্ষক এমপিওভুক্ত; যারা সরকারি কর্তৃপক্ষ এনটিআরসি এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত। কেউ কেউ হয়তো হাজার মাইল দূরের কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োপ্রাপ্ত হয়ে নামমাত্র আর্থিক সুবিধায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। অথচ পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, পরীক্ষা পদ্ধতি সবই অভিন্ন। উন্নত বিশ্বে যখন প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয় তখন আমরা দিই চরম অবহেলা। শিক্ষক সবচে' জ্ঞানী হবেন এমন তো নয়। বরং তিনি তার শিক্ষার্থীদেরকে বা সমাজকে কতটা উজ্জীবিত করতে পারেন তাই মূখ্য। শতসহস্র উনুনের আগুন জ্বালাতে যেমন একটি মাত্র দিয়াশলাই কাঠির বারুদই যথেষ্ট তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন লক্ষ প্রাণের প্রেরণার উৎস। তবে এমন শিক্ষক তখনই আত্মপ্রকাশ করবেন যখন তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। শিক্ষকের বাকস্বাধীনতা থাকবে। ভিন্ন পেশাজীবী হিতাকাঙ্ক্ষী অনেকেই শিক্ষকতাকে ভালোবেসে একগাদা উপদেশ শুনিয়ে যান। শিক্ষকতাকে ভালোবাসেন অজুহাতে কেউ কেউ কালেভদ্রে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে আসেন। হতে পারেন তিনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, জনপ্রতিনিধি বা অন্য কিছু। হয়তো তিনি খুবই ভালো পাঠদানও করেন, তথাপি তা হবে কষ্টকরে মাতৃদুগ্ধ চুষা শিশুকে ফিডার খাওনোর মত। সরু লতায় ঝুলতে থাকা লাউ, কুমড়াটি যেমন মাতৃলতায় নিরাপদ বা আপাতদৃষ্টিতে দেখা গাছের ডালে দোদুল্যমান পাখির বাসাটি যেমন পাখির ছানার জন্য নিরাপদ আশ্রয় তেমনি শিক্ষকের হৃদয় তার শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়। সেখানে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না যাওয়াই সমীচীন। অতএব 'শিক্ষা ও 'শিক্ষক' শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থের মুক্তি এবং হানাদারমুক্ত গুরুগৃহ হোক শিক্ষক দিবসের প্রত্যাশা।
লেখক: মোস্তাক আহাম্মদ
সিনিয়র শিক্ষক (শারীরিকশিক্ষা)
[জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্কাউট শিক্ষক (জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭,২০২২ এবং ২০২৩)