ওয়ারেন, ০৪ এপ্রিল : অবসর নিয়েও ফুরসত নেই, নেই কোনো অলসতা! সত্তরের কোটা পাড়ি দিলেও বয়সের ভার প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলামের কোনো কাজেই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একসময়, আমাদের দেশে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনে নানা ধরনের আকর্ষণীয় বাক্য লিখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করা হতো, এগুলোর মধ্যে একটি প্রসিদ্ধ বাক্য ছিল "সময়ের চেয়ে জীবনের মুল্য অনেক বেশী "। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী হলেন চার দশকেরও বেশী সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশের সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের পুরুষপাল গ্রামের অধিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম আহমেদ। প্রায় দুই দশকের বেশী সময় ধরে চেনা এই মানুষটিকে কখনো কোথাও দেরী হতে দেখিনি। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পারিবারিক, ধর্মীয় অথবা ব্যক্তিগত যেকোনো অনুষ্ঠানে একেবারেই কাঁটায় কাঁটায় হাজির অর্থাৎ জীবনের চেয়ে সময়ের মূল্যটা তার কাছে বেশীই মনে হয়।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক সামাজিক জীবনের অধিকারী শফিকুল ইসলাম আহমেদের জন্ম পঞ্চাশ দশকের গোড়ার দিকে। বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন বিয়ানীবাজার কলেজে। নবনির্মিত বিয়ানীবাজার কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র শফিকুল ইসলাম কলেজ জীবনের শুরুতেই যোগ দেন ছাত্র রাজনীতিতে। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অন্যায় অবিচার আর শোষনের বিরুদ্ধে ফোঁসে উঠা ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের ব্যানারে ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েন তরুণ সংগঠক শফিকুল ইসলাম। ইতিমধ্যে, বিয়ানীবাজার কলজের প্রথম ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি বিপুল ভোটে কলেজ সংসদের এজিএস নির্বাচিত হন। ছয় দফা আন্দোলন, উনো-সত্তর এর গণ-অভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭১' সালে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা, দেশ মাতৃকায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে তরুণ শফিকুল ইসলাম যোগ দেন মহান মুক্তিযোদ্ধে। সেক্টর কমান্ডার মেজর সি আর দত্ত এবং ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন ৪ নম্বর সেক্টরে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের সাথে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন লাল সবুজের পতাকা, এবং পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের।
স্বাধীনতা উত্তর ঢাকায় ব্যবসা শুরু করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হলে শফিকুল ইসলাম পাড়ি জমান পশ্চিম জার্মানীতে এবং সেখান থেকে ১৯৮০ সালে আবারও পাড়ি জমান দুনিয়ার ইমিগ্র্যান্টদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। শুরু হয় আরেক জীবন যুদ্ধ, নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এবং ব্যয়বহুল জীবন যাত্রার শত ব্যস্ততার মাঝেও শফিকুল ইসলামের পিছু ছাড়েনি সংগঠন, জড়িয়ে পড়েন নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে। দলীয় রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি জালালাবাদ সমিতি এবং বিয়ানীবাজার সমিতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। নিউইয়র্কের ব্যস্ত ও ব্যয়বহুল জীবন, গগনচুম্বী ভবন আর আটলান্টিকের অফুরন্ত জলরাশীর মাধুর্যতাকে পিছনে ফেলে অবশেষে ২০০১ সালে পাড়ি জমান বিশ্বের মোটরগাড়ীর রাজধানী খ্যাত গ্রেট লেক বেষ্টিত রাজ্য মিশিগানে। এখানে এসেও পিছু ছাড়েনি সংগঠন, তবে এবার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি যোগদেন মুলধারার শ্রমিক সংঠন ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে। অটো ম্যানুফ্যাকচারীং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুবাদে ইউএডব্লিউ এর লোকাল ১৫৫ এ নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশী আমেরিকান এই শ্রমিক নেতা। উল্লেখ্য যে ২০০১ সাল থেকে একটানা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন অকল্যান্ড স্টাম্পিং নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। অকল্যান্ড স্টাম্পিং হচ্ছে বিগ থ্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
ব্যক্তিগত জীবনে সৎ নিষ্ঠাবান এবং কঠোর পরিশ্রমী শফিকুল ইসলাম আহমেদ জীবন সায়াহ্নে পৌঁছালেও তার জীবনের চাকা থেমে যায়নি। অভিবাসীদের এক আদর্শবাদ প্রতিনিধি হিসেবে এখনো তার জীবন যুদ্ধ শেষও হয়নি। তবে, এখন তাকে খুব বেশী বেশী হাতছানি দেয় ফেলে আসা শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের সোনালী দিনগুলো। জীবনের দীর্ঘ পথচলা শেষে আপন নীড়ে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা একসময় বাসা বাঁধে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় প্রতিটি মানুষের অন্তরে এবং এথেকে ব্যতিক্রম হতে পারেননি শফিকুল ইসলামও। সন্ধ্যা বেলা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই একটি স্বপ্নে তিনি বিভোর হচ্ছেন, চলে যেতে চান মা আর মাটির টানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। আবহমান বাংলার আলো বাতাস, মাঠ-ঘাট আর গোধূলি লগ্ন তাকে হাতছানি দিচ্ছে বার বার। সত্যিই কি তিনি আবার ফিরে যেতে পারবেন শৈশব কৈশোর এবং যৌবনের অম্ল মধুর স্মৃতি বিজড়িত ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলোর মাঝে!
তাইতো, ইন্দ্রাণী সেনের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয় " তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মন রে আমার"......
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক সামাজিক জীবনের অধিকারী শফিকুল ইসলাম আহমেদের জন্ম পঞ্চাশ দশকের গোড়ার দিকে। বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ম্যাট্রিক পাশ করে ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন বিয়ানীবাজার কলেজে। নবনির্মিত বিয়ানীবাজার কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্র শফিকুল ইসলাম কলেজ জীবনের শুরুতেই যোগ দেন ছাত্র রাজনীতিতে। পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর অন্যায় অবিচার আর শোষনের বিরুদ্ধে ফোঁসে উঠা ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের ব্যানারে ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েন তরুণ সংগঠক শফিকুল ইসলাম। ইতিমধ্যে, বিয়ানীবাজার কলজের প্রথম ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি বিপুল ভোটে কলেজ সংসদের এজিএস নির্বাচিত হন। ছয় দফা আন্দোলন, উনো-সত্তর এর গণ-অভ্যুত্থান এবং সত্তরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭১' সালে বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা, দেশ মাতৃকায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে তরুণ শফিকুল ইসলাম যোগ দেন মহান মুক্তিযোদ্ধে। সেক্টর কমান্ডার মেজর সি আর দত্ত এবং ক্যাপ্টেন আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন ৪ নম্বর সেক্টরে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে বীরত্বের সাথে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন লাল সবুজের পতাকা, এবং পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের।
স্বাধীনতা উত্তর ঢাকায় ব্যবসা শুরু করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হলে শফিকুল ইসলাম পাড়ি জমান পশ্চিম জার্মানীতে এবং সেখান থেকে ১৯৮০ সালে আবারও পাড়ি জমান দুনিয়ার ইমিগ্র্যান্টদের স্বর্গরাজ্য খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। শুরু হয় আরেক জীবন যুদ্ধ, নিউইয়র্কের ব্যস্ততম এবং ব্যয়বহুল জীবন যাত্রার শত ব্যস্ততার মাঝেও শফিকুল ইসলামের পিছু ছাড়েনি সংগঠন, জড়িয়ে পড়েন নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে। দলীয় রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি জালালাবাদ সমিতি এবং বিয়ানীবাজার সমিতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। নিউইয়র্কের ব্যস্ত ও ব্যয়বহুল জীবন, গগনচুম্বী ভবন আর আটলান্টিকের অফুরন্ত জলরাশীর মাধুর্যতাকে পিছনে ফেলে অবশেষে ২০০১ সালে পাড়ি জমান বিশ্বের মোটরগাড়ীর রাজধানী খ্যাত গ্রেট লেক বেষ্টিত রাজ্য মিশিগানে। এখানে এসেও পিছু ছাড়েনি সংগঠন, তবে এবার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি যোগদেন মুলধারার শ্রমিক সংঠন ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে। অটো ম্যানুফ্যাকচারীং ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুবাদে ইউএডব্লিউ এর লোকাল ১৫৫ এ নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশী আমেরিকান এই শ্রমিক নেতা। উল্লেখ্য যে ২০০১ সাল থেকে একটানা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন অকল্যান্ড স্টাম্পিং নামক একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। অকল্যান্ড স্টাম্পিং হচ্ছে বিগ থ্রির একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
ব্যক্তিগত জীবনে সৎ নিষ্ঠাবান এবং কঠোর পরিশ্রমী শফিকুল ইসলাম আহমেদ জীবন সায়াহ্নে পৌঁছালেও তার জীবনের চাকা থেমে যায়নি। অভিবাসীদের এক আদর্শবাদ প্রতিনিধি হিসেবে এখনো তার জীবন যুদ্ধ শেষও হয়নি। তবে, এখন তাকে খুব বেশী বেশী হাতছানি দেয় ফেলে আসা শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের সোনালী দিনগুলো। জীবনের দীর্ঘ পথচলা শেষে আপন নীড়ে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষা একসময় বাসা বাঁধে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন প্রায় প্রতিটি মানুষের অন্তরে এবং এথেকে ব্যতিক্রম হতে পারেননি শফিকুল ইসলামও। সন্ধ্যা বেলা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই একটি স্বপ্নে তিনি বিভোর হচ্ছেন, চলে যেতে চান মা আর মাটির টানে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। আবহমান বাংলার আলো বাতাস, মাঠ-ঘাট আর গোধূলি লগ্ন তাকে হাতছানি দিচ্ছে বার বার। সত্যিই কি তিনি আবার ফিরে যেতে পারবেন শৈশব কৈশোর এবং যৌবনের অম্ল মধুর স্মৃতি বিজড়িত ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলোর মাঝে!
তাইতো, ইন্দ্রাণী সেনের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে হয় " তুই ফেলে এসেছিস কারে মন, মন রে আমার"......