ডেট্রয়েট শহরে দেয়ালচিত্র সংস্কৃতি :  শিল্পের এক অসাধারণ প্রকাশভঙ্গি

আপলোড সময় : ০২-০৬-২০২৪ ১০:৪৬:২৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০২-০৬-২০২৪ ১০:৪৭:০৫ অপরাহ্ন
দেয়ালে দেয়ালে রঙের কবিতা, গল্প বলে শত,
ম্যুরালের ছোঁয়ায় শহর জাগে, মুগ্ধ করে কত!

আপনি যদি ম্যাক এভিনিউ দিয়ে ডেট্রয়েট শহরের ডাউন টাউন প্রবেশ করতে চান তাহলে ভ্যান ডাইক স্ট্রিট পার হতে গেলে প্রথমেই একটি ছয়তলা উঁচু ভবনের পুরো দেয়াল জুড়ে একটি বিশাল দেয়ালচিত্র চোখে পরবে যার নাম “দ্যা স্পিরিট,"। ডেট্রয়েটের শিল্পী ওয়ালিদ জনসন এটি তৈরি করেছেন। ছয় তলা উঁচু এই মুরালটি সিটি ওয়ালস প্রোগ্রামের অংশ, যার লক্ষ্য হল গ্রাফিতির পরিবর্তে সুন্দর আর্টওয়ার্ক দিয়ে পাড়া-মহল্লাগুলিকে সাজানো। "দ্যা স্পিরিট" আফ্রিকান আমেরিকান মহিলাদের চিত্রিত করে, যা শহরের ইতিহাস ও বর্তমান সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ মহিলাদের অবদানকে প্রতিফলিত করে। যতদূর জানা যায় জনসন তার এক বন্ধুর প্রতিকৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এই ম্যুরালটি তৈরি করেন এবং একটি কৃষ্ণাঙ্গবাদের ধারক, বাহক হয়ে আজও সগৌবরে দাড়িয়ে আছে। ডেট্রয়েট শহরে এমন শত শত দেয়ালচিত্র বা ম্যুরাল রয়েছে, যার অনেকগুলোই খুব বিখ্যাত। 
ডেট্রয়েট শহরের দেয়ালচিত্র শিল্পের শুরুটা হয়েছিল ১৯৩০-এর দশকের গ্রেট-ডিপ্রেশনের সময় থেকে। মেক্সিকান শিল্পী ডিয়েগো রিভেরা ডেট্রয়েট ইনস্টিটিউট অফ আর্টসে তার বিখ্যাত দেয়ালচিত্র "ডেট্রয়েট ইন্ডাস্ট্রি ম্যুরালস" তৈরি করেন। রিভেরার এই কাজটি গাড়ি শিল্প ও শ্রমিকশ্রেণীর জীবনকে চিত্রিত করে এবং এটি ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্র আন্দোলনের জন্য একটি মূল অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে, ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্র শিল্প একটি বিশাল ও বৈচিত্র্যময় মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা এই চিত্রগুলি স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক শিল্পীদের মেধার ফল। অনেক শিল্পী শহরের ইতিহাস, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির মাধ্যমে তাদের শিল্পকর্মগুলির প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
ডেট্রয়েটের ইস্টার্ণ মার্কেট এলাকাটি দেয়ালচিত্রের জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। এখানে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক "মার্কেট ম্যুরালস" ইভেন্ট, যেখানে সারা বিশ্ব থেকে আসা শিল্পীরা তাদের সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে স্থানটি আলোকিত করেন। এই ইভেন্টটি শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের জন্য একটি চিত্তাকর্ষক অভিজ্ঞতা নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিকেও গতিশীল করে।
ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্রগুলি কেবলমাত্র চিত্রকলার প্রতীকই নয়, বরং এগুলি সামাজিক বার্তাও বহন করে। বর্ণবৈষম্য, অর্থনৈতিক অসমতা, এবং স্থানীয় ইতিহাসের মতো বিষয়গুলি প্রায়শই এই চিত্রগুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডেট্রয়েটের "ব্ল্যাক লাভ" মুরালটি আফ্রিকান আমেরিকান সম্প্রদায়ের গর্ব ও সংগ্রামকে তুলে ধরে। এই দেয়ালচিত্রগুলি একটি সম্প্রদায়ের আবেগ ও চেতনাকে আরও শক্তিশালী করে।
“নো হিউম্যান ইজ ইলিগাল বাই মেরিলিন রন্ডন” ম্যুরালটি সাউথওয়েস্ট ডেট্রয়েটে অবস্থিত, এই মুরালটি DACA প্রোগ্রাম বাতিল হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আঁকা হয়েছিল, যা আমেরিকার কয়েকশত বছরের অভিবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সংহতির একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে। এরকম অসংখ্য দেয়ালচিত্র ডেট্রয়েটে রয়েছে, গুগল করে খুঁজে নিতে পারেন এবং ঘুরে আসতে পারেন। তবে নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। 

ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্রগুলি শহরের পর্যটন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেয়ালচিত্র পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং স্থানীয় ব্যবসার বিকাশেও সহায়ক হয়। দেয়ালচিত্রগুলি শুধুমাত্র দর্শনীয় স্থান নয়, এগুলি শহরের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনেরও একটি প্রতীক।
ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্র সংস্কৃতি ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির সাথে এই মাধ্যমটি সমৃদ্ধ করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বাড়তি প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হওয়া ইন্টারেক্টিভ দেয়ালচিত্রগুলি ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্র সংস্কৃতিকে আরও একটি নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ডেট্রয়েটের দেয়ালচিত্র সংস্কৃতি শহরের শিল্প ও সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কেবলমাত্র দৃষ্টিনন্দন নয় বরং এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। এই দেয়ালচিত্র সংস্কৃতির মাধ্যমে ডেট্রয়েট তার চিত্রকলার ঐতিহ্যকে ধরে রেখে চলেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com