ডেট্রয়েটের ১২তম এবং ক্লেয়ারমাউন্টের সংযোগস্থলটি ১৯৬৭ সালের নাগরিক ঝামেলার কেন্দ্রস্থল ছিল। ২৩ জুলাই ভোরে, সড়কে ক্ষুব্ধ জনতার সহিংসতা/Photo : The Detroit News
হ্যামট্রাম্যাক, ৯ জুন : আপনি যদি হ্যামট্রাম্যাক শহর থেকে মাউন্ট এলিয়ট রাস্তা ধরে বেলে আইল্যান্ড (Belle Isle) যেতে চান তাহলে ডেট্রয়েট শহরে রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য পরিত্যক্ত বিশাল বিশাল প্রাসাদোপম (Mansion) বাড়ি দেখতে পাবেন। এরকম অসংখ্য পরিত্যক্ত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, চার্চ আপনি ডেট্রয়েট শহরে খুঁজে পাবেন যার সংখ্যা ৭৮ হাজারেও বেশি এবং সারা আমেরিকাতে এ রকম নজির আর কোথাও নেই। কিন্তু এর পিছনে কারণটা কি? কেন এত সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ছেড়ে মানুষ চলে গেল অন্যত্র? এককালের শখের বাড়ি কেন শ্যাওলা আর পরগাছার আগ্রাসনে আজ পরাস্ত? উত্তর জানতে হলে একটু পিছনে যেতে হবে, যেতে হবে ১৯৬৭ সালে। চলুন একটু আলোচনা করা যাক বিস্তারিত।
১৯৬৭ সালে ডেট্রয়েট শহরে শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের মধ্যে একটি বর্ণবাদী দাঙ্গা হয় যা "১২তম স্ট্রিট দাঙ্গা" নামেও পরিচিত, এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী এবং তীব্রতম দাঙ্গাগুলির একটি। এটি ২৩ জুলাই, ১৯৬৭ সালে শুরু হয়ে পাঁচ দিন ধরে চলেছিল এবং এর ফলে শহরের বৃহৎ অংশে ধ্বংসযজ্ঞ ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
১৯৬০-এর দশকে ডেট্রয়েট ছিল বর্ণবৈষম্য এবং সামাজিক অসাম্যতার এক প্রধান কেন্দ্র। কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। তাদের বেকারত্বের হার ছিল উচ্চ, শিক্ষার সুযোগ সীমিত, এবং পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা প্রতিনিয়ত লড়াই করছিল।
দাঙ্গার স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় ২৩ জুলাই, ১৯৬৭ সালে, যখন ডেট্রয়েট পুলিশ অবৈধ মদ বিক্রির অভিযোগে একটি অনুমোদনবিহীন বার (ব্লাইন্ড পিগ) রেইড করে। সেখানে ৮২ জন আফ্রিকান আমেরিকানকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয় এবং সহিংসতা শুরু হয়।
দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর দ্রুতই তা ডেট্রয়েটের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, বাড়িঘর, এবং অন্যান্য স্থাপনায় আগুন লাগানো হয় এবং লুটপাট শুরু হয়। স্থানীয় পুলিশ বাহিনী প্রথমে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, যার ফলে রাজ্য পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড, এবং পরে ফেডারেল সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়।
এই সময়ে ডেট্রয়েটের ১২তম স্ট্রিট ছিল দাঙ্গার কেন্দ্রবিন্দু। পাঁচ দিনের সহিংসতার পর, শহরে প্রায় ৭ হাজার ২শ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়, ১ হাজার ২শ এরও বেশি মানুষ আহত হন, এবং ৪৩ জন প্রাণ হারান। এছাড়া, প্রায় ২ হাজার বিল্ডিং ধ্বংস হয় এবং আনুমানিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯৬৭ সালের ডেট্রয়েট দাঙ্গা শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলে। শহরের বহু বাসিন্দা, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, শহর ত্যাগ করে এবং অন্য শহরে স্থানান্তরিত হয়, যা ডেট্রয়েটের জনসংখ্যার সামাজিক গঠনকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে এবং পরিত্যক্ত ভবনের সংখ্যা বাড়তে থাকে হুহু করে। যার ফলশ্রুতিতেই আজ ৭৮ হাজার পরিত্যক্ত ভবনের বোঝা নিয়ে ডেট্রয়েট ধুঁকছে।
দাঙ্গার পর, শহরে নতুন সামাজিক নীতিমালা ও প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হয়, যাতে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করা যায়। স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সংস্থা একসাথে কাজ করে যাতে বর্ণবৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অসাম্যতা কমানো যায়।
১৯৬৭ সালের ডেট্রয়েট দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। দাঙ্গার পরবর্তী পরিবর্তন ও উন্নয়নগুলো প্রমাণ করে যে সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনার জন্য একতা ও সহযোগিতা কতটা জরুরি। ডেট্রয়েট দাঙ্গা আমাদের শেখায় যে ন্যায়বিচার ও সমতার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে এবং সকল মানুষের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
হ্যামট্রাম্যাক, ৯ জুন : আপনি যদি হ্যামট্রাম্যাক শহর থেকে মাউন্ট এলিয়ট রাস্তা ধরে বেলে আইল্যান্ড (Belle Isle) যেতে চান তাহলে ডেট্রয়েট শহরে রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য পরিত্যক্ত বিশাল বিশাল প্রাসাদোপম (Mansion) বাড়ি দেখতে পাবেন। এরকম অসংখ্য পরিত্যক্ত বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা, চার্চ আপনি ডেট্রয়েট শহরে খুঁজে পাবেন যার সংখ্যা ৭৮ হাজারেও বেশি এবং সারা আমেরিকাতে এ রকম নজির আর কোথাও নেই। কিন্তু এর পিছনে কারণটা কি? কেন এত সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ছেড়ে মানুষ চলে গেল অন্যত্র? এককালের শখের বাড়ি কেন শ্যাওলা আর পরগাছার আগ্রাসনে আজ পরাস্ত? উত্তর জানতে হলে একটু পিছনে যেতে হবে, যেতে হবে ১৯৬৭ সালে। চলুন একটু আলোচনা করা যাক বিস্তারিত।
১৯৬৭ সালে ডেট্রয়েট শহরে শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের মধ্যে একটি বর্ণবাদী দাঙ্গা হয় যা "১২তম স্ট্রিট দাঙ্গা" নামেও পরিচিত, এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী এবং তীব্রতম দাঙ্গাগুলির একটি। এটি ২৩ জুলাই, ১৯৬৭ সালে শুরু হয়ে পাঁচ দিন ধরে চলেছিল এবং এর ফলে শহরের বৃহৎ অংশে ধ্বংসযজ্ঞ ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
১৯৬০-এর দশকে ডেট্রয়েট ছিল বর্ণবৈষম্য এবং সামাজিক অসাম্যতার এক প্রধান কেন্দ্র। কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। তাদের বেকারত্বের হার ছিল উচ্চ, শিক্ষার সুযোগ সীমিত, এবং পুলিশি নির্যাতন ও বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা প্রতিনিয়ত লড়াই করছিল।
দাঙ্গার স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয় ২৩ জুলাই, ১৯৬৭ সালে, যখন ডেট্রয়েট পুলিশ অবৈধ মদ বিক্রির অভিযোগে একটি অনুমোদনবিহীন বার (ব্লাইন্ড পিগ) রেইড করে। সেখানে ৮২ জন আফ্রিকান আমেরিকানকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের জন্ম দেয় এবং সহিংসতা শুরু হয়।
দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর দ্রুতই তা ডেট্রয়েটের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট, বাড়িঘর, এবং অন্যান্য স্থাপনায় আগুন লাগানো হয় এবং লুটপাট শুরু হয়। স্থানীয় পুলিশ বাহিনী প্রথমে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়, যার ফলে রাজ্য পুলিশ, ন্যাশনাল গার্ড, এবং পরে ফেডারেল সেনাবাহিনীকে ডাকা হয়।
এই সময়ে ডেট্রয়েটের ১২তম স্ট্রিট ছিল দাঙ্গার কেন্দ্রবিন্দু। পাঁচ দিনের সহিংসতার পর, শহরে প্রায় ৭ হাজার ২শ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়, ১ হাজার ২শ এরও বেশি মানুষ আহত হন, এবং ৪৩ জন প্রাণ হারান। এছাড়া, প্রায় ২ হাজার বিল্ডিং ধ্বংস হয় এবং আনুমানিক ৪৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯৬৭ সালের ডেট্রয়েট দাঙ্গা শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলে। শহরের বহু বাসিন্দা, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ, শহর ত্যাগ করে এবং অন্য শহরে স্থানান্তরিত হয়, যা ডেট্রয়েটের জনসংখ্যার সামাজিক গঠনকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে এবং পরিত্যক্ত ভবনের সংখ্যা বাড়তে থাকে হুহু করে। যার ফলশ্রুতিতেই আজ ৭৮ হাজার পরিত্যক্ত ভবনের বোঝা নিয়ে ডেট্রয়েট ধুঁকছে।
দাঙ্গার পর, শহরে নতুন সামাজিক নীতিমালা ও প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হয়, যাতে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নত করা যায়। স্থানীয় সরকার এবং বিভিন্ন কমিউনিটি সংস্থা একসাথে কাজ করে যাতে বর্ণবৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অসাম্যতা কমানো যায়।
১৯৬৭ সালের ডেট্রয়েট দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। দাঙ্গার পরবর্তী পরিবর্তন ও উন্নয়নগুলো প্রমাণ করে যে সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন আনার জন্য একতা ও সহযোগিতা কতটা জরুরি। ডেট্রয়েট দাঙ্গা আমাদের শেখায় যে ন্যায়বিচার ও সমতার জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে এবং সকল মানুষের জন্য একটি সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাজ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।