ঢাকা, ৯ নভেম্বর : বাংলাদেশে ইসকনের কার্যক্রম নিয়ে ইসলামপন্থী সংগঠনগুলির চাপ ক্রমশ বাড়ছে। চট্টগ্রামের হাজারীলেইনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতারা ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন উল্লেখ করে বাংলাদেশে এই সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বাদ জুম্মা চট্টগ্রাম মহানগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে থেকে এ দাবি জানান তারা।
সমাবেশে ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা। সমাবেশ থেকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় হেফাজতের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতা মাওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ‘ইসকন নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। ইসকনকে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের লালিত-পালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই আমাদের হিন্দু ভাইদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দিবেন না।’ ইসকন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত্রু উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের সনাতন ভাইয়েরা ইসকনের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছেন।’ ইসকনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও বাংলাদেশেও এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে সমাবেশে এ দাবি করেছেন,হেফাজত নেতারা।
ইমাম খতিব উলামা পরিষদ
উগ্র সংগঠন আখ্যা দিয়ে দেশে ইসকনের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে ইমাম খতিব উলামা পরিষদ। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার নাবিস্কো মোড়ে এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলেন তাঁরা।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে ইমাম ওলামা ঐক্য পরিষদের আমির ও তেজগাঁও রহিম মেটাল মসজিদের খতিব মাহমুদুল হাসান মমতাজি বলেন, ভারতের আরএস–এর নতুন সংস্করণ হচ্ছে বাংলাদেশের ইসকন। ভারতে যেমন আরএস সন্ত্রাসী সংগঠন, ইসকনও হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। এর প্রমাণ দিতে বেশি দূরে যেতে হবে না। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ তার প্রমাণ।
মাহমুদুল হাসান মমতাজি বলেন, চট্টগ্রামের হামলা ও বিদেশে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তা একই সূত্রে গাঁথা। দেশের মধ্যে যত যড়যন্ত্র হচ্ছে সবই একই সূত্রে গাঁথা। দেশে যাঁরা ইসকনের পৃষ্ঠপোষক, তাঁদেরও ধরার হুমকি দেন তিনি।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় না নামায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন মাহমুদুল হাসান মমতাজি। তিনি অবিলম্বে ইসকনের নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
খেলাফত মজলিস
সম্প্রতি চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইস্কন কর্তৃক যৌথবাহিনীর উপর হামলা এবং বেশ কয়েকজন সেনা ও পুলিশ সদস্যকে আহতের ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ইসকনের উগ্রবাদী কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের বাড়ী-ঘরে অগ্নি সংযোগ ও যৌথবাহিনীর উপর হামলার ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ। সেনা-পুলিশ সদস্যদের উপর এসিড দিয়ে হামলা চরম ঔদ্ধত্যের শামিল। এর আগে চট্টগামে স্বাধীনতা স্তম্ভে স্থাপিত জাতীয় পতাকার উপর ইসকনের গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। ইসকনের এহেন কর্মকাÐ কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এই সংগঠন এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বিদেশী এজেন্ট হিসেবে নানামুখী অপকর্মে লিপ্ত। তাই উগ্রবাদী ইসকনের অঢেল অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং অবিলম্বে তাদের উগ্রবাদী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সকল সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে মজলিস মাাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাহী সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম-মহাসচিব- এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক- এডভোকেট মিজানুর রহমান, মাওলানা শেখ সালাহউদ্দিন, প্রশিক্ষণ ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, আলহাজ¦ আবু সালেহীন, ডা. রিফাত হোসেন মালিক, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, খন্দকার শাহাবুদ্দিন আহমদ, মুফতি আবদুল হক আমিনী, মোঃ জহিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ফয়জুল ইসলাম, এডভোকেট শাইখুল ইসলাম, মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, আলহাজ¦ আমিনুর রহমান ফিরোজ, অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হক, হাজী নূর হোসেন, মো: আবুল হোসেন, মাওলানা মুহাম্মদ আজীজুল হক প্রমুখ।
ইনকিলাব মঞ্চ
ঢাকায় ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে যদি সরকার ব্যবস্থা না নেয়, তবে তারা ইসকনের ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম’ বন্ধ করতে রাস্তায় নামবে। গত সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি ইসকনকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের পৃষ্ঠপোষক’ আখ্যা দিয়ে দেশবাসীকে ইসকনের বিরুদ্ধে সচেতন হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইসকন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চায় এবং এ দেশে শান্তি বিনষ্ট করতে সক্রিয়।’ তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে ইসকনের সব কার্যক্রম বন্ধে পথে নামবেন।
ইসকন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একদল বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাজারী গলির ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এর আগে বুধবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি করেছিলেন সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সম্প্রতি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন হাজারী গলি এলাকায় হামলা-ভাংচুরসহ সহিংসতার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা সমাজের শান্তি, সৌহার্দ ও নিরাপত্তার ওপর বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘এ সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসকন বাংলাদেশকে নানাভাবে জড়িয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা এ ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এসব ঘটনার সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’’ তবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা তারা জানেন না বলে দাবি করেছেন ইসকন নেতারা।
উল্লেখ্য, এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ওসমান নামে এক ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরিবাজার এলাকার হাজারিগলিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন দুষ্কৃতিকারী হাজারী লেনে ওসমান ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়।
এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইনশিল্ড ভেঙে ফেলেছে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্তদের শনাক্তকরণে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজারিগলি এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথ বাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।”
সমাবেশে ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা। সমাবেশ থেকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় হেফাজতের পক্ষ থেকে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতা মাওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ‘ইসকন নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। ইসকনকে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের লালিত-পালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই আমাদের হিন্দু ভাইদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দিবেন না।’ ইসকন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত্রু উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের সনাতন ভাইয়েরা ইসকনের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছেন।’ ইসকনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলেও বাংলাদেশেও এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে সমাবেশে এ দাবি করেছেন,হেফাজত নেতারা।
ইমাম খতিব উলামা পরিষদ
উগ্র সংগঠন আখ্যা দিয়ে দেশে ইসকনের সব কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানিয়েছে ইমাম খতিব উলামা পরিষদ। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার নাবিস্কো মোড়ে এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলেন তাঁরা।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে ইমাম ওলামা ঐক্য পরিষদের আমির ও তেজগাঁও রহিম মেটাল মসজিদের খতিব মাহমুদুল হাসান মমতাজি বলেন, ভারতের আরএস–এর নতুন সংস্করণ হচ্ছে বাংলাদেশের ইসকন। ভারতে যেমন আরএস সন্ত্রাসী সংগঠন, ইসকনও হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন। এর প্রমাণ দিতে বেশি দূরে যেতে হবে না। চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ তার প্রমাণ।
মাহমুদুল হাসান মমতাজি বলেন, চট্টগ্রামের হামলা ও বিদেশে উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে হেনস্তা একই সূত্রে গাঁথা। দেশের মধ্যে যত যড়যন্ত্র হচ্ছে সবই একই সূত্রে গাঁথা। দেশে যাঁরা ইসকনের পৃষ্ঠপোষক, তাঁদেরও ধরার হুমকি দেন তিনি।
সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাস্তায় না নামায় রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন মাহমুদুল হাসান মমতাজি। তিনি অবিলম্বে ইসকনের নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
খেলাফত মজলিস
সম্প্রতি চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইস্কন কর্তৃক যৌথবাহিনীর উপর হামলা এবং বেশ কয়েকজন সেনা ও পুলিশ সদস্যকে আহতের ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ইসকনের উগ্রবাদী কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছে খেলাফত মজলিস। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের মাসিক সভায় খেলাফত মজলিস নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নানা অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরই অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের বাড়ী-ঘরে অগ্নি সংযোগ ও যৌথবাহিনীর উপর হামলার ঘটনা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ। সেনা-পুলিশ সদস্যদের উপর এসিড দিয়ে হামলা চরম ঔদ্ধত্যের শামিল। এর আগে চট্টগামে স্বাধীনতা স্তম্ভে স্থাপিত জাতীয় পতাকার উপর ইসকনের গেরুয়া পতাকা টাঙিয়ে আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। ইসকনের এহেন কর্মকাÐ কোন ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। এই সংগঠন এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। তারা বিদেশী এজেন্ট হিসেবে নানামুখী অপকর্মে লিপ্ত। তাই উগ্রবাদী ইসকনের অঢেল অর্থের উৎস খুঁজে বের করতে হবে এবং অবিলম্বে তাদের উগ্রবাদী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সকল সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আমীরে মজলিস মাাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাহী সভায় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম-মহাসচিব- এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক- এডভোকেট মিজানুর রহমান, মাওলানা শেখ সালাহউদ্দিন, প্রশিক্ষণ ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম, আলহাজ¦ আবু সালেহীন, ডা. রিফাত হোসেন মালিক, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, খন্দকার শাহাবুদ্দিন আহমদ, মুফতি আবদুল হক আমিনী, মোঃ জহিরুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ফয়জুল ইসলাম, এডভোকেট শাইখুল ইসলাম, মাওলানা রুহুল আমিন সাদী, আলহাজ¦ আমিনুর রহমান ফিরোজ, অধ্যাপক মাওলানা আজীজুল হক, হাজী নূর হোসেন, মো: আবুল হোসেন, মাওলানা মুহাম্মদ আজীজুল হক প্রমুখ।
ইনকিলাব মঞ্চ
ঢাকায় ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে যদি সরকার ব্যবস্থা না নেয়, তবে তারা ইসকনের ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম’ বন্ধ করতে রাস্তায় নামবে। গত সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ নামে একটি ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে। এই সম্মেলনে সংগঠনের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদি ইসকনকে ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের পৃষ্ঠপোষক’ আখ্যা দিয়ে দেশবাসীকে ইসকনের বিরুদ্ধে সচেতন হতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ইসকন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে চায় এবং এ দেশে শান্তি বিনষ্ট করতে সক্রিয়।’ তিনি আরও হুঁশিয়ারি দেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তবে তারা ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে ইসকনের সব কার্যক্রম বন্ধে পথে নামবেন।
ইসকন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একদল বিক্ষোভকারীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামের হাজারী গলির ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। এর আগে বুধবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি করেছিলেন সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সম্প্রতি চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন হাজারী গলি এলাকায় হামলা-ভাংচুরসহ সহিংসতার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা সমাজের শান্তি, সৌহার্দ ও নিরাপত্তার ওপর বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, ‘‘এ সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসকন বাংলাদেশকে নানাভাবে জড়িয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে। আমরা এ ধরনের অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করছি যে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এসব ঘটনার সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’’ তবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তা তারা জানেন না বলে দাবি করেছেন ইসকন নেতারা।
উল্লেখ্য, এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় ওসমান নামে এক ব্যক্তির ইসকন বিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরীর টেরিবাজার এলাকার হাজারিগলিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে আনুমানিক ৫০০-৬০০ জন দুষ্কৃতিকারী হাজারী লেনে ওসমান ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়।
এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীর টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইনশিল্ড ভেঙে ফেলেছে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্তদের শনাক্তকরণে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাজারিগলি এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা পুনরায় যৌথ বাহিনীর ওপর এসিড সদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮০ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে। বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।”