ছবিতে ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে অতিথি বা প্রিয়জনের সামনে পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার/Photo : Robert L'Heureux/The Detroit News
ওয়ারেন, ২৮ নভেম্বর : আজ থ্যাঙ্কস গিভিং ডে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যতিক্রমী দিবসগুলোর মধ্যে থ্যাংকস গিভিং ডে অন্যতম। ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র অর্থ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন বা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস। প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। আজ ২৩ নভেম্বর, সেই বৃহষ্পতিবার। আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন। ‘থ্যাংকস গিভিং ডে'’ নামে এই দিনটি সরকারিভাবেও স্বীকৃত।
দিসবটিতে ধনী-গরিব সবাই মেতে ওঠেন ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলে টার্কি লাঞ্চ আর ডিনার। মূলত পরিবার-বন্ধুদের সাথে প্রিয় মুহূর্ত ভাগ করে নেয়াই উদ্দেশ্যেই দিনটি উদযাপন করেন খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় ক্রিসমাসের ক্ষণ গণনা। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যসব উৎসবের তুলনায় ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবই ক্রমশ: জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও। মূলধারার পাশাপাশি উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরাও পারিবারিক কিংবা সামাজিক পরিবেশে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালন করে চলেছে। থ্যাংকস গিভিং ডে’র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবন এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো।
থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিন শুক্রবার। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামে পরিচিত এই শুক্রবার ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কোনো কালো দিন নয়। বরং বছরের সেরা মূল্য হ্রাসের দিনটি ক্রেতাদের কাছে যেমন রঙিন তেমনি পণ্য বিক্রি করে লাভবান ব্যবসায়ীদের কাছেও আনন্দঘন।
এ দিনটির জন্যও মানুষের অপেক্ষার কমতি নেই। একবছর ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন আমেরিকার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন কম দামে ভালো একটা কিছু কেনার জন্য দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই টিভি ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেয়া তাদের পণ্যের মূল্যহ্রাসের তালিকা। শতকরা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মুল্যহ্রাস করা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির। তবে এই দিনে অনেকের চাহিদা ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য। এর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি দ্রব্যের প্রতি মানুষের বেশি চাহিদা বেশি। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে দোকানের সামনে লাইন ধরে ভোর ৬টায় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন দোকানে প্রবেশের জন্য। কিন্তু প্রতিবছরই ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা। ওইদিন রাত ১২টার পরিবর্তে রাত ৮-৯টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার মানুষ।
প্রথম কবে শুরু হয় এই দিবস
১৬২০ সালে 'মে ফ্লাওয়ার' নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। দুই-তিন মাস পর তারা ম্যাসাচুসেটস উপকূলে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কর্ন চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কিভাবে মেপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।
১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। কর্নের ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভোজের আয়োজন করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করায়। তারপর উপস্থিত সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
কবে প্রথম সরকারি ছুটি স্বীকৃতি পায়
১৮১৭ সালে নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর পর ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম ‘মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব’ রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, যেন ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি একটানা প্রচারাভিযান চালান থ্যাংকস গিভিং ডে’র পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সারাহ যোসেফের আবেদন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন।
ছুটি কেন পরিবর্তন হয়
১৯৩৯ সাল পর্যন্ত শেষ বৃহস্পতিবারই পালিত হচ্ছিল থ্যাংকস গিভিং ডে। কিন্তু ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং এরপর থেকে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালিত হয়।
ওয়ারেন, ২৮ নভেম্বর : আজ থ্যাঙ্কস গিভিং ডে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যতিক্রমী দিবসগুলোর মধ্যে থ্যাংকস গিভিং ডে অন্যতম। ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র অর্থ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন বা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবস। প্রতি বছর নভেম্বরের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। আজ ২৩ নভেম্বর, সেই বৃহষ্পতিবার। আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছুটির দিন। ‘থ্যাংকস গিভিং ডে'’ নামে এই দিনটি সরকারিভাবেও স্বীকৃত।
দিসবটিতে ধনী-গরিব সবাই মেতে ওঠেন ঐতিহ্যবাহী টার্কি ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলে টার্কি লাঞ্চ আর ডিনার। মূলত পরিবার-বন্ধুদের সাথে প্রিয় মুহূর্ত ভাগ করে নেয়াই উদ্দেশ্যেই দিনটি উদযাপন করেন খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয় ক্রিসমাসের ক্ষণ গণনা। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যসব উৎসবের তুলনায় ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবই ক্রমশ: জনপ্রিয় হচ্ছে বাংলাদেশী কমিউনিটিতেও। মূলধারার পাশাপাশি উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরাও পারিবারিক কিংবা সামাজিক পরিবেশে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালন করে চলেছে। থ্যাংকস গিভিং ডে’র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবন এবং দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো।
থ্যাংকস গিভিং ডে’র পরের দিন শুক্রবার। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ নামে পরিচিত এই শুক্রবার ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কোনো কালো দিন নয়। বরং বছরের সেরা মূল্য হ্রাসের দিনটি ক্রেতাদের কাছে যেমন রঙিন তেমনি পণ্য বিক্রি করে লাভবান ব্যবসায়ীদের কাছেও আনন্দঘন।
এ দিনটির জন্যও মানুষের অপেক্ষার কমতি নেই। একবছর ধরেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন আমেরিকার দুই তৃতীয়াংশ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষজন কম দামে ভালো একটা কিছু কেনার জন্য দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই টিভি ও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেয়া তাদের পণ্যের মূল্যহ্রাসের তালিকা। শতকরা ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ মুল্যহ্রাস করা হয় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির। তবে এই দিনে অনেকের চাহিদা ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্য। এর মধ্যে টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, আইফোন, আইপ্যাড ইত্যাদি দ্রব্যের প্রতি মানুষের বেশি চাহিদা বেশি। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে দোকানের সামনে লাইন ধরে ভোর ৬টায় পর্যন্ত অপেক্ষা করেন দোকানে প্রবেশের জন্য। কিন্তু প্রতিবছরই ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা। ওইদিন রাত ১২টার পরিবর্তে রাত ৮-৯টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে যান হাজার হাজার মানুষ।
প্রথম কবে শুরু হয় এই দিবস
১৬২০ সালে 'মে ফ্লাওয়ার' নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। দুই-তিন মাস পর তারা ম্যাসাচুসেটস উপকূলে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কর্ন চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কিভাবে মেপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।
১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। কর্নের ফলন এত বেশি ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভোজের আয়োজন করেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করায়। তারপর উপস্থিত সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
কবে প্রথম সরকারি ছুটি স্বীকৃতি পায়
১৮১৭ সালে নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর পর ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম ‘মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব’ রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, যেন ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি একটানা প্রচারাভিযান চালান থ্যাংকস গিভিং ডে’র পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সারাহ যোসেফের আবেদন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন।
ছুটি কেন পরিবর্তন হয়
১৯৩৯ সাল পর্যন্ত শেষ বৃহস্পতিবারই পালিত হচ্ছিল থ্যাংকস গিভিং ডে। কিন্তু ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং এরপর থেকে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালিত হয়।