চিরবিদায় হে মায়েস্ত্রো

আপলোড সময় : ২১-১২-২০২৪ ১২:০০:৪০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২১-১২-২০২৪ ১২:০০:৪০ অপরাহ্ন
ওয়ারেন, ২১ ডিসেম্বর : ভারতের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন । তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তবলা মায়েস্ত্রোর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দুনিয়া। তাঁকে মায়েস্ত্রো বলা হয় কেন? মায়েস্ত্রো আসলে কী? মায়েস্ত্রো (Maestro) শব্দটি ইতালীয় ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ “গুরু,” “শিক্ষক,” বা “বিশেষজ্ঞ।” এটি সাধারণত সঙ্গীত ও শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং একজন অসাধারণ দক্ষ ও প্রতিভাবান ব্যক্তিকে বোঝায়।
বিশেষ করে, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মায়েস্ত্রো বলতে একজন বিখ্যাত সুরকার, বাদক বা সঙ্গীতশিল্পীকে বোঝানো হয়, যিনি তাঁর কাজে বিশেষ পারদর্শী এবং সম্মানিত। এই শব্দটি সাধারণত শ্রদ্ধা ও গৌরব প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের উপমহাদেশে পণ্ডিত রবিশঙ্করকে সেতারের মায়েস্ত্রো আর উস্তাদ জাকির হোসেনকে তবলার মায়েস্ত্রো বলা হয়। এটি সঙ্গীত বা শিল্পে অনন্য ব্যক্তিত্বকে বোঝাতে একটি সম্মানসূচক উপাধি।
এবার আসি, তাঁকে কেন মায়েস্ত্রো বলা হয়? কী করেছেন তিনি?
উস্তাদ জাকির হোসেনকে “মায়েস্ত্রো” বলা হয় কারণ রিদমিক বাদ্যযন্ত্র হিসাবে ড্রামের আধিপত্যের যুগে তবলা নামের আমাদের উপমহাদেশের প্রাচীন রিদমিক বাদ্যযন্ত্রটি যখন গুরুত্ব হারাতে বসেছিল, তখন তিনি তবলাবাদনে অসাধারণ দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং শিল্পসৌন্দর্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত তথা তবলাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিভা এবং অবদানের জন্য তাঁকে তবলার জগতে একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী বা “মায়েস্ত্রো” হিসেবে সম্মানিত করা হয়।
উস্তাদ জাকির হোসেন ১৯৫১ সালের ৯ মার্চ মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিখ্যাত তবলাবাদক উস্তাদ আল্লারাখার পুত্র। তাঁর তবলাবাদনের প্রাথমিক শিক্ষা বাবার কাছ থেকেই শুরু হয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন। মাত্র ৭ বছর বয়সে তবলা বাজানো শুরু করেন এবং ১২ বছর বয়সে একজন পেশাদার তবলা শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান।
উস্তাদ জাকির হোসেন শুধু শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেই নয়, আধুনিক এবং ফিউশন মিউজিকেও নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি “শক্তি” নামে একটি ফিউশন ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং জ্যাজ মিউজিকের সংমিশ্রণ ঘটান। তিনি পণ্ডিত রবিশঙ্কর, আলি আকবর খান, বিলি কনস, এবং জন ম্যাকলাফলিনের মতো বিশ্ববিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর তবলাবাদনের স্বতন্ত্র বোল এবং তাল বিশ্বজুড়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছে।
তিনি ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পদ্মশ্রী (১৯৮৮) এবং পদ্মভূষণ (২০০২) লাভ করেছেন। তাঁর অ্যালবাম “প্ল্যানেট ড্রাম” গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সংগীত উৎসবে তাঁকে মায়েস্ত্রো হিসেবে সম্বোধন করা হয়।
শুধু তাই নয়, উস্তাদ জাকির হোসেন তবলা বাজানোর পদ্ধতিকে নতুন রূপ দিয়েছেন। তিনি তবলাবাদনের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল পরীক্ষা করেছেন এবং একে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করেছেন। তবলার শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি নতুন ধাঁচের তাল এবং বোল তৈরি করেছেন, যা আজ তবলা শেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে উস্তাদ জাকির হোসেন বিবাহিত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ক্যাথরিন প্যানিয়ারও একজন সংগীতশিল্পী। তাঁদের দুই মেয়ে, আনিসা ও ইসাবেল, সৃজনশীল শিল্পকর্মের সঙ্গে যুক্ত।
জাকির হোসেন সংগীতশিল্পের ক্ষেত্রে ভারতীয় শাস্ত্রীয় তবলার একটি নতুন যুগের সূচনা করেছেন। তিনি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তবলার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে মর্যাদার উচ্চতায় তুলে ধরেছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ সারা পৃথিবীর সঙ্গীতপ্রেমীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান-ফ্রান্সিসকো শহরে ৭৩ বছর বয়সে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই মহারথী। তাঁর সৃজনশীলতা এবং অধ্যবসায় সংগীতপ্রেমীদের জন্য চিরকাল অনুপ্রেরণার উৎস এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com