আমেরিকায় মে দিবস নাই 

আপলোড সময় : ০৩-০৫-২০২৫ ০২:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৩-০৫-২০২৫ ০৩:৫৯:৫৪ পূর্বাহ্ন
ফ্লোরিডা, ৩ মে : এক সময় সিলেটে ছাত্র জীবনে বা সমসাময়িক সময়ে ১৯৯০ - ১৯৯৬ সালে আমরা ১ লা মে সিলেটে মে দিবসে জাসদ ছাত্রলীগের ব্যানারে আমরা বিশাল বর্নাট্য Rally করতাম৷ আজকের যারা সিলেটের বিএনপি করেন শীর্ষ নেতারা তাদের বেশীর ভাগ সেই Rally তে থাকতেন ৷ নাম বললে বিব্রত হবেন ৷ প্রসঙ্গে আসি। আমাদের শ্লোগান ছিল " কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না " দুনিয়ার মজদুর এক হও। আজও মজদুর বঞ্চনা/লাঞ্চনা কমে নাই ৷ মিডল ইস্ট এ শ্রমিকদের শোষণ চলছেই। এদের (মিডিলইস্টদের) শ্রমিকরা দাসের জীবনে বন্দি। 
মে দিবসের সেই সোনালী দিনের সিলেট শহরের মিছিলের সামনে আমরা থাকতাম। আর পছনে থাকতেন (গুরু) পারভেজ আক্তার কিনু সহ সিনিয়রদের বড় অংশ। নাট্যব্যাক্তিত্ব এজাজ আলম (নিউ ইয়র্ক) তার ফ্যাকাশে মোটরসাইকেল নিয়ে এসকর্ট করতেন। ঐ সময়ের আম্বরখানা থেকে বন্দর বাজারের শ্রমিকরা বুজত কিনা, এত আধুনিক পড়ালেখা জানা শহরের বনেদী পরিবারের ছেলেরা কি বলছে। কেন বলছে। কার কথা বলে!  
এর পর মে দিবসের Rally মনে পড়ে না। আমি ৯৪ সালের পর থেকে সংবাদমাধ্যম জড়িত হই। ১৯৯৭ সালের আগস্টে বাংলাদেশ সরকারের আনসার ভিডিপির সিলেট বিভাগীয় জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসাবে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে সরকারি চাকুরীতে জয়েন করি। ২০০১ সালের মাঝামাঝি তে আমেরিকা আসি ৷ স্থানীয় দৈনিক মে দিবস নিয়ে লিখতাম ৷  মে দিবসের গোড়াপত্তন আমেরিকায়, তখন শ্রমিকীরা ১২/১৪ কাজ করত। আফ্রিকান দাস কৃষ্ণাঙ্গরা কাজ করত ৷ শোষনের শেকলে শ্রমিকদের জীবন বন্দি ছিল ৷ সে এক করুন কাহিনী। আফ্রিকা থেকে মুসলমান দাস  এনে (১০০ ডলারে ১ জন) আমেরিকার সভ্যতা তৈরী হল ৷ হাইওয়ে, রেলপথ, সাবওয়ে, সব কিছুই তারা বানাল ৷  তারপর একটি আন্দোলন হল। আমেরিকার  শিকাগোর হে মার্কেটে। বড় একটি আন্দোলন। শ্রমিকরা মারা গেল শিকাগো শহরে। সেখানেই এই ইতিহাস। 
আমি ২ বার শিকাগো গিয়ে সেই জায়গাটা পাই নাই। জায়গাটা নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে ৷ আরো মজার বিষয় হল আমেরিকায় লেবার ডে (মে দিবস) ১লা সেপ্টেম্বর । শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে ধারাবাহিক রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর, কংগ্রেস অবশেষে ১৮৯৪ সালে ১ সেপ্টেম্বরকে শ্রমিক দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইন পাস করে, যা ১ মে তারিখের ঐক্যবদ্ধ, আন্তর্জাতিক শ্রমিক শ্রেণীর উদযাপন থেকে দূরে সরে যাওয়ার আশা করে। তবে আমেরিকায় শ্রমিকদের স্বার্থের সুরক্ষা ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে ৷ 
আমরা যারা আমেরিকায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেছি ৷ দেখেছি প্রত্যেকটি কাজের জায়গায় লেবার ডিপার্টমেন্ট এর নীতিমালা প্রদর্শন করতে হয় ৷ নুন্যতম মজুরী স্টেট নির্ধারিত দিতে হয়। ৮ ঘন্টা কাজে ৩০ মিনিট ব্রেক ৷ অভিযোগ করার নাম্বার দেয়া, ট্রেনিং এর মজুরী দিতে হয় ৷ এটাই নিয়ম, আবার ট্রেড ইউনিয়ন ও জড়িত থাকে ৷ ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের নায্য হিসাবের দরদাম করে ৷ 
আরেকটি চিত্র আছে, আমাদের নিউইয়র্কের ব্যবসায়ীরা দেশ থেকে যারা আসেন তাদের ট্রেনিং এর ২ সপ্তাহের টাকা দেন না ৷ ইংরেজি জানেননা বলে দেশী দোকানে কাজ করে অনেকে এটা মেনে নিতে বাধ্য হন ৷ দেশী অসাধু ব্যবসায়ীরা স্টুডেন্টদের এবং দুর্বল কাগজ যাদের তাদের ঘন্টা হিসাবে মজুরী কম দেন ৷ এই অপকর্মটা করে লজ্জিত হন না। অনেকে অভিযোগ করেন না লেবার ডিপার্টমেন্ট এ, এরকম চলছে। শুধু নিউইয়র্ক না সব জায়গায় এরকম। তারপর ২ সপ্তাহের পে চেক আটকানো থাক৷। অনেকে অন্য জায়গায় নিয়ে চেছড়াদের নিকট ২ সপ্তাহের বেতন রেখে চলে যান ৷ এরকম বিচার আমাদের করতে হয়। এই বৈষম্যমূলক আচরন গ্যাস ষ্টেশনের মালিকরা করেন বেশী ৷
বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নারী শ্রমিকদের কাজের পরিবেশের জন্য বিগত সরকার অনেক কিছুই করেছে ৷ সেগুলোর ধারাবাহিকতা ও আরও ভাল কিছু করতে হবে। মেটারনিটি লিভ মহিলা ও পুরুষদের দেয়া হয়েছে এগুলো আরও আপড করতে হবে ৷ মহিলা শ্রমিকদের সাথে বৈষম্যে করা যাবে না, সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বন্ধ করতে হবে এবং নায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে হবে। 
ইসলামে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, রাস্ট্রকেও শ্রমিকদের সব অধিকার দিতে হবে। ILO  ইন্টারন্যাশনাল লেবার ল এর সব শর্ত মানতে হবে ৷ 
দিবসটিকে মহান মে দিবস বলা হয়। কারন শ্রমিকরা মহান৷ তাদের ঘামেই রাষ্ট্র চলে, সমাজ চলে। আমাদের আমেরিকায় স্ট্রিট লেবার পাওয়া যায় ৷ হোম ডিপো বা রাস্তায় অনেক হোমলেস কাজ খুজে, বেশীর ভাগ আমেরিকার। যারা নি:স্ব হয়ে গেছে, আই ডি রিভোক, পরিবার লস্ট। করুন স্টোরী শুনি ৷ রাস্তায় থাকে ৷ ডিংক করে। আমি আমার গার্ডেন এর জন্য বা রেন্টাল হাউসে ক্লিনিং এর জন্য  নিয়ে আসি। তারা কয়েক ঘন্টা কাজ করে, তাদের লাঞ্চ করাই, যাবার সময় প্যান্ট, শার্ট, জুতা দিয়ে দেই ৷ হিসাবের চেয়েও বেশী টাকা দেই। গড ব্লেস ইউ বলে চলে যায়। আমরা সবাই ই শ্রমিক নানা মাধ্যমে। তাই সবাই এর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com