ডেট্রয়েটে শাকিরার জাদুকরী সুরের রাত

আপলোড সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ০৩:৪৯:৩৬ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ২৪-০৫-২০২৫ ০৩:৪৯:৩৬ পূর্বাহ্ন
মিশিগানের ডেট্রয়েটের লিটল সিজার্স এরিনায় শাকিরা তার 'লাস মুজেরেস ইয়া নো লোরান' ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়েছেন।/Daniel Mears, The Detroit News

ডেট্রয়েট, ২৪ মে : ডেট্রয়েটের হৃদয়ে বৃহস্পতিবার রাতে যেন এক যাদুকরী ঝড় বয়ে গেল। লিটল সিজার্স এরিনার মঞ্চে উঠলেন লাতিন পপের রাণী শাকিরা, আর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ছন্দ, আলো আর আবেগের বিস্ফোরণ। ‘লাস মুজেরেস ইয়া নো লোরান’ ওয়ার্ল্ড ট্যুরের এই কনসার্ট শুধু একটি সংগীতানুষ্ঠান ছিল না — এটি ছিল আত্মপ্রকাশ, বেঁচে থাকার জয়গান এবং ভালোবাসায় ভরা হাজারো ভক্তের সঙ্গে এক সন্ধ্যার অন্তরঙ্গ মিলন। সুরের ছন্দ আর শক্তিময় নৃত্যের মিশেলে ভক্তদের হৃদয় ছুঁয়ে গেলেন এই কলম্বিয়ান সুপারস্টার।
বিশ্বজুড়ে স্টেডিয়াম মাতিয়ে তোলা সফরের এক বিশেষ সন্ধ্যা ছিল এটি।  ৪৮ বছর বয়সী কলম্বিয়ান সুপারস্টার শাকিরা তার বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে এবার মঞ্চ মাতালেন ডেট্রয়েটে, যেখানে তার শক্তিশালী পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় হাজারো ভক্ত। বৃহস্পতিবারের ১২৫ মিনিটের কনসার্ট ছিল এক গভীর অনুভবের সন্ধ্যা — যেখানে শাকিরা তার সংগীতের মাধ্যমে শুধু বিনোদনই দেননি, বরং নিজের জীবনের উত্থান-পতনের গল্প শোনালেন প্রায় ১৪,০০০  ভক্তকে। স্প্যানিশ ও ইংরেজি—উভয় ভাষায় পরিবেশিত হিট গানের পাশাপাশি তিনি উপহার দেন সাহস, শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতার এক হৃদয়ছোঁয়া বার্তা। "আপনারা অনেকেই জানেন, গত কয়েক বছর আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিল না," বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মঞ্চ থেকে দর্শকদের উদ্দেশে বললেন শাকিরা। "তবে বলুন তো, জীবনে কে-ই বা কখনও ভেঙে পড়েনি? আমি যা শিখেছি, তা হলো—পতন মানেই পরাজয় নয়, বরং সেটা হতে পারে আরও সুন্দর, আরও শক্তিশালী এক নতুন যাত্রার শুরু।"


মিশিগানের ডেট্রয়েটের লিটল সিজার্স এরিনায় শাকিরা তার 'লাস মুজেরেস ইয়া নো লোরান' ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়েছেন।/Daniel Mears, The Detroit News

এই "শরৎ" শাকিরার জীবনের কঠিন অধ্যায়গুলোর প্রতীক—যার মধ্যে রয়েছে তার সাম্প্রতিক কর-সংক্রান্ত বিতর্ক, যেখানে জেল এড়াতে ২০২৩ সালে তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়, এবং প্রাক্তন সঙ্গী ফুটবল তারকা জেরার্ড পিকের সঙ্গে সম্পর্কবিচ্ছেদ। এমনকি নিউ জার্সিতে তার সাম্প্রতিক এক শো-তে হামের সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের কথাও আলোচনায় এসেছে। তবুও, শাকিরা এসব ব্যক্তিগত দুঃসময়কে রূপ দিয়েছেন শিল্পে—তার আলোচিত, ক্ষমতায়নকারী ডিস ট্র্যাক “বিজিআরপি মিউজিক সেশনস, ভলিউম ৫৩”-এর মাধ্যমে, যা বৃহস্পতিবার রাতে কনসার্টের সমাপ্তির মুহূর্তে পরিবেশন করা হয়।
২০১৮ সালের পর এই প্রথম ডেট্রয়েটের এলসিএতে (লিটল সিজার্স এরিনা) পারফর্ম করলেন শাকিরা। তিনি শো শুরু করেন এরিনা ফ্লোর ধরে হেঁটে, যেন বিজয়ী একজন যোদ্ধা ফিরেছেন মঞ্চে। র‍্যাম্পের এক প্রান্তে পৌঁছে তিনি ওঠেন মূল মঞ্চে এবং শুরু করেন “লা ফুয়ের্তে” দিয়ে—যেটি এসেছে তার সাম্প্রতিক অ্যালবাম “লাস মুজেরেস ইয়া নো লরোন” থেকে, যার বাংলা অর্থ “নারীরা আর কাঁদে না”। তিনি এটি পরিবেশন করেন ক্যাটওয়াকের একদম শেষে, উঁচু একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে—যেন প্রতিটি শব্দেই ব্যক্তিগত জয়ের বার্তা তুলে ধরছেন।
মঞ্চের ব্যাকড্রপে ছিল একটি বিশাল ভিডিও ওয়াল, যা প্রতিটি গানে আবহ তৈরি করেছিল দৃশ্যমান গল্পের মতো করে। আলো, আগুনের ঝলক (পাইরো), লেজার এবং দৃষ্টিনন্দন পোশাক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবেশনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন শাকিরা। তার প্রতিটি নাচের পদক্ষেপে ছিল ছন্দ, দেহের প্রতিটি কম্পনে ছিল ছড়িয়ে পড়া আবেগ—যা তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে জুড়ে দেন তার গানের সঙ্গে।
তিন দশকেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে শাকিরা আজও যেভাবে মঞ্চ দখল করে রাখেন, সেটি ছিল সত্যিকারের এক শিল্পীর পরিচয়। তার শুরুর দিকের জনপ্রিয় ভিডিও ক্লিপগুলো ভেসে ওঠে স্ক্রিনে—যেগুলো দেখে জনতা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে, যেন নস্টালজিয়ার ঢেউ ছুঁয়ে যায় পুরো এরিনা।
এটি ছিল সেইসব ভক্তদের জন্য একটি বিশেষ রাত—যারা শুরু থেকেই শাকিরার সঙ্গে রয়েছেন, তার প্রতিটি জয় ও ব্যর্থতার সাক্ষী। অনেকেই বেগুনি উইগ পরে এবং নেকড়ে কানের হেডব্যান্ড পরে এসেছিলেন, যেন তারা “শাকিরা ট্রাইব”-এর এক নিবেদিত সদস্য। গায়িকার প্রতি এমন আনুগত্যই প্রমাণ করে, কেন তিনি শুধুমাত্র একজন পপ তারকা নন—বরং এক প্রজন্মের অনুভূতির প্রতীক।
দর্শকদের মধ্যে অবশ্যই কিছু সাধারণ মানুষ ছিলেন, তবে অধিকাংশ দর্শকই ছিলেন শাকিরার তুমুল অনুরাগী ও কঠোর ভক্তরা। "হিপস ডোন্ট লাই", "আন্ডারনিথ ইওর ক্লোথস" এবং "হোয়েনেভার, হোয়েয়ার"সহ তার ক্রসওভার হিট গানগুলো শ্রুতিমধুর পরিবেশিত হয়। তবে ভক্তদের সবচেয়ে প্রিয় ছিল "এস্টয় অ্যাকুই" এবং "পাইজ ডেসকালজোস, সুয়েনোস ব্লাঙ্কোস" এর মতো গান, যা তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে উত্তর আমেরিকায় সাফল্যের পূর্বে গাওয়া হয়েছিল।

মিশিগানের ডেট্রয়েটের লিটল সিজার্স এরিনায় শাকিরা তার 'লাস মুজেরেস ইয়া নো লোরান' ওয়ার্ল্ড ট্যুরের অংশ হিসেবে মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়েছেন।/Daniel Mears, The Detroit News

শাকিরার কিছু ভিডিও প্যাকেজে এআই-এর মতো গ্রাফিক রেন্ডারিংয়ের উপস্থিতি হয়তো কিছু দর্শকের কাছে বিরক্তিকর লেগেছে, কিন্তু মঞ্চে গায়িকা ও ভক্তদের মধ্যে স্পর্শকাতর এবং আন্তরিক মিথস্ক্রিয়া ছিল অসাধারণ। নাচের প্রতিটি চালেই তার মুখে ছিল গভীর মনোযোগ ও একাগ্রতা, হাসি কমই দেখা গিয়েছে।
বিশ্বকাপ ২০১০-এর স্মরণীয় গান "ওয়াকা ওয়াকা (দিস টাইম ফর আফ্রিকা)" পরিবেশনের সময় শাকিরার সঙ্গে মঞ্চে তার নৃত্যশিল্পীদের দলও ছিল, যারা ঐক্যের প্রতীক হিসেবে রঙিন পোশাক পরেছিল, পরিবেশনায় প্রাণবন্ত উজ্জ্বলতা যোগ করে।
Source & Photo: http://detroitnews.com
 

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com