হবিগঞ্জের পর্যটন-ডালা খুললেই মেলে পাহাড়, ঝর্ণা আর ইতিহাসের কাব্য

আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০১:৪৯:৩৯ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৫ ০১:৪৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
বহুমাত্রিক সৌন্দর্যের হিরণ্ময় উদ্ভাসে বাংলাদেশ বিভাসিত। এ যেন সুন্দরতায় অনন্য এক অমরাবতী। এদেশের প্রতি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে হৃদয়রঞ্জন সৌন্দর্যের অমৃত হিল্লোল। রূপ পিয়াসি করি-কণ্ঠে তাই শোনা যায় বিমুগ্ধতার স্বতঃস্ফূর্ত গুঞ্জরণ,

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি,
তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।"(জীবনানন্দ)
বৃহত্তর সিলেট এক্ষেত্রে স্বমহিমায় ভাস্বর। এর সৌন্দর্য, মাধুর্য, নৈসর্গিক বিচিত্রতা কবি রবীন্দ্রনাথকে পুলকে আকুল করেছিল।  সিলেটবাসীর পরম গৌরবের বিষয় হল, শুধুমাত্র সিলেটকে নিয়েই কবি কবিতা লিখেছেন। আপন রূপমুগ্ধতা ব্যক্ত করেছেন শব্দের ললিতমোহন মূর্ছনায়,

"মমতাবিহীন কালস্রোতে /
বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হোতে/
নির্বাসিতা তুমি/
সুন্দরী শ্রীভূমি।"/
(সুশান্তকৃষ্ণ দাস এ কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, যা দিল্লি থেকে প্রকাশিত হয়েছে)
এই সুন্দরী শ্রীভূমির একটি জেলা হবিগঞ্জ। নিসর্গকন্যা হবিগঞ্জের একই অঙ্গে কত রূপ। এবার আমরা হবিগঞ্জের পর্যটন-ডালার অনিন্দ্য সুন্দর কয়েকটি উপচার বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করব।

বারো আউলিয়া : হযরত শাহ জালাল (রঃ) এর সাথে ধর্ম প্রচার কার্যে যুক্ত ৩৬০ জন আউলিয়ার মধ্যে বারোজনের পুণ্যপদধূলিতেধন্য হবিগঞ্জের মাটি। অধিকাংশের মাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যমান। তাঁদের মধ্যে সিলেট বিজয়ের অন্যতম সেনাপতি এবং তরফ বিজয়কালীন মুসলিম বাহিনীর সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) সৈনিক ছাড়াও কামেল ওলি হিসাবে খ্যাত। হবিগঞ্জের মুড়ারবন্দ নামক স্থানে অজস্র জামগাছের ছায়াবিতানে আরও অনেক ওলি আউলিয়ার সাথে তাঁর মাজার অবস্থিত।
মুড়ারবন্দ দরগায় পূর্ব-পশ্চিম লম্বায় যে কবরটি আছে, সেটিই সৈয়দ নাসির উদ্দিন (র:) এর কবর বলে চিহ্নিত। প্রতি পৌষ মাসের শেষ দিন থেকে মাঘের ৫ তারিখ পর্যন্ত এখানে ওরশ উদযাপিত হয়। এসময় এই দর্শনীয় স্থান অগণিত লোকজনের কলগুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে।

তেলিয়াপাড়া স্মৃতিস্তম্ভ : মহান মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ গর্ব গৌরবে সমুন্নত। মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাকবাংলোতে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মেজর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল ২য় ও ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের নিয়ে সমগ্র দেশকে প্রাথমিকভাবে ৪টি সেক্টরে ভাগ করেন, যা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ কৌশলগত পরিচালনায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে এখানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি। মহান মুক্তিযুদ্ধের  বর্ণ বিভাসায়  দীপ্ত এই স্মৃতি স্মারক জেলার  অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

পুণ্যসলিলা নদী : অগণিত নদীর কলগুঞ্জনে হবিগঞ্জ মুখরিত। হিন্দু শাস্ত্র 'বায়ু পুরাণ' 'তীর্থ চিন্তামণি' প্রভৃতি গ্রন্থে সিলেটের তিনটি নদীকে পবিত্র হিসেবে বিশেষিত করা হয়েছে। এর দুটি খোয়াই ও বরাক হবিগঞ্জের উপর দিয়েই প্রবাহিত। অচ্যুৎচরণ চৌধুরীর 'শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত' গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বরাক (বরবক্র) সর্ববিধ পাপ থেকে পরিত্রাণ দানে সক্ষম। প্রাচীন গ্রন্থ 'তীর্থ চিন্তামণি'তে এ তথ্যের সাথে খোয়াই (ক্ষমা) নদীর নামও পাওয়া যায়।

চাকলাপুঞ্জি প্রত্ন স্থল : চুনারুঘাট উপজেলার এ ক্ষেত্রটি সবিশেষ অভিনিবেশের দাবি রাখে। এখানকার বালুছড়া নামক পাহাড়ি ঝর্নায় এক সহস্রাধিক প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে। নবোপলীয় যুগের নিদর্শন হিসাবে চিহ্নিত এসব বস্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে রক্ষিত আছে। এগুলো হবিগঞ্জে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে পর্যটন ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করা যায়। যথার্থ গবেষণার আলোকে প্রত্নবস্তুগুলোর মাধ্যমে প্রাচীন ইতহাস তথা প্রাগৈতিহাসিককালের বহু অজানা তথ্য উদঘাটন সম্ভব। এ বিষয়ে বিজ্ঞজনেরা সহমত পোষণ করেন।

রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য : প্রকৃতির অনন্য শিল্পশৈলীর অপরূপ নিদর্শন চুনারুঘাটের এই বনাঞ্চল। এই চিরসবুজ মায়াবি  বনভূমি সংরক্ষিত এবং বন্য প্রাণির অভয়ারণ্যরূপে বিশেষ মর্যাদায় সমাসীন। সুন্দরবনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই
প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ৬৩৮ রকম প্রজাতির গাছপালা ও লতাপাতায় সমৃদ্ধ। ১৭ প্রজাতির উভচর প্রাণি, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৫ প্রজাতির কাঠ বিড়ালির সাথে বিরল প্রজাতির মালয়ান বড় কাঠবিড়ালিও এ বনে দেখা যায়। দেখা যায় ৩ প্রজাতির বানর। বাংলাদেশে শকুনের নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে ২টি এলাকাকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমাঝে রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ১টি। এই আশ্চর্য সুন্দর শ্যামলে শ্যামল এলাকাটি হবিগঞ্জের পর্যটনমালায় মহামূল্যবান রত্ন বিশেষ।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান : বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক উদ্যান হিসাবে এ অঞ্চল সমাদৃত। চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ে ২০০৫ সালে প্রায় ২৪৩ হেক্টর জায়গা নিয়ে এ উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সাতটি ছড়া বা ঝর্না আছে। যে নিরিখিকেই নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। পূর্বে এর নাম ছিল 'রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট'। ১৪৫ প্রজাতির গাছগাছালি, ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু, ৬ প্রজাপতির উভচর জীব, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি, ত্রিপুরা উপজাতির জীবন বৈচিত্র এসবকিছুর সমন্বয়ে সাতছড়ি নান্দনিকতায় চিত্তরঞ্জক। শরৎকালে এর সাথে ছড়ার পাড় জুড়ে বিস্তৃত কাশফুলের হাসি সৌন্দর্যের বহুবর্ণ অঙ্গরাগে ভ্রমণ পিয়াাসিদের অনায়াসেই বিমুগ্ধ করে। রবীন্দ্রনাথের সাথে হিল্লোলিয়া উঠে হৃদয়ের আনন্দ-মূর্ছনা-

"আমরা বেঁধেছি কাশেরগুচ্ছ আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা /
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি  ডালা।/
এসোগো শারদললক্ষ্মী  তোমার শুভ্র মেঘের রথে... /
এসো নির্মল নীল পথে"।/

শংকরপাশা শাহী মসজিদ : আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের পাশাপাশি অলঙ্করণ আর শিল্পনৈপুণ্যে মসজিদের এক স্বতন্ত্র আবেদন বিদ্যমান। এ ধারায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শংকরপাশা নামক স্থানের প্রাচীন মসজিদটি নানাদিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। এর নয়নরঞ্জন গঠনকৌশল আর শৈল্পিক উৎকর্ষ দেখে বিজ্ঞজনেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে, এটি সুলতানি আমল খুব সম্ভব হোসেন শাহের রাজত্বকালে নির্মিত। অলঙ্করণের চারুত্বে মসজিদটি অনন্য। খাঁজকাটা খিলান শোভিত প্রবেশপথ, চারকোনায় চারটি অষ্টভুজাকৃতির মনোরম বুরুজ, পোড়ামাটির চিত্র, অলংকৃত দেয়াল, মেহরাবের উপরিভাগ ও ভিতরে লতাপাতা পুষ্পের মনোরম কারুকাজ ইত্যাদি শিল্প-বৈভবে সমৃদ্ধ নয়নরঞ্জক মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।
এই হৃদয়রঞ্জন স্থাপত্য ইতিহাসের আন্তর্জাত আবেদনের সুরে  ডাকে।ডাকতেই থাকে ...
মন ভেসে যায়
দূর সুদূর কোন অজানা রহস্যলোকে।   

হাওড় :হবিগঞ্জের নিসর্গ বিচিত্রমাত্রিক। উঁচু উঁচু পাহাড় টিলার সৌম্যশান্ত প্রতিকৃতির পাশে এখানে আছে দিগন্ত বিস্তৃত হাওড়ের ভাব তন্ময়তা। শুকনো মৌসুমে যা অবারিত নিঝুম মাঠ, বর্ষায় সে মাঠই আবার জল থই থই সাগরকন্যা। ভাসমান গ্রামগুলো ছোটছোট দ্বীপের মায়ায় হাতছানি দিয়ে ডাকে। নানারকম নৌকার গতি-বিভঙ্গ ভালোলাগার এক উদাস বৈরাগ্যে মন ভরে দেয়। হবিগঞ্জে হাওড়ের সংখ্যা ১৪ টি। বিচিত্র মাছের আস্বাদ আর হরেকরকম পাখির কলগীতি হাওড়কে আরো চিত্তাকর্ষক ও মনোরম করে তুলেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট : জেলা সদরের নাগুরা নামক স্থানে এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত। 'নাগুরা ফার্ম' নামে ব্যাপক পরিচিত উপমহাদেশের প্রথম গভীর পানিতে চাষ উপযোগী ধান উদ্ভাবনকারী হিসাবে এ ফার্মের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে নতুন জাতের ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন কেন্দ্রসহ দেশবিদেশের বহু কর্মকর্তা তাঁদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসাবে এখানে আগমন করেন। ফার্মটি প্রকৃতির অবারিত আঙিনায় প্রতিষ্ঠিত। চারপাশে সবুজ আর সবুজ শ্যামল স্নিগ্ধ আঁচলে নিঃসীম নির্ভরতায়  আশ্রয় খোঁজে  অনন্ত নীলাকাশ। ফার্মের ভেতরে বড় বড় দুটি দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে শোনা যায় বাতাসের বাউল সুর। এ জায়গাটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য। এখানে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে।

ফ্রুটস ভ্যালি : শাহজিবাজার গ্যাস ফিল্ডের অভ্যন্তরে অবস্থিত এ বাগানে আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাকৃতিক পরিবেশে পালিত বিভিন্ন পাখি, সুদৃশ্য রেস্ট হাউস, কৃত্রিম ঝর্না ইত্যাদি। সমতল ও সুউচ্চ টিলায় বিন্যস্ত এ উদ্যান অত্যন্ত চিত্তরঞ্জী।

দ্য প্যালেস রিসোর্ট এন্ড স্পা : ১৫০ একর জমির উপর এই রিসোর্ট বাহুবল উপজেলায় পুটিজুরি নামক স্থানে অবস্থিত। অকৃত্রিম,অকপট  প্রকৃতি আর আধুনিকতার অপূর্ব মেলবন্ধনে অনিন্দ্যসুন্দর এই পাঁচ তারকা হোটেলে কী নেই? আছে চিত্তনন্দন বহুতল টাওয়ার ভবনে ১০৭টি কক্ষ, পাহাড় টিলার উপর দৃষ্টিহারী ২৩টি ভিলা, ৩টি হেলিপ্যাড, ৪টি বড়সড়ক, ২টি সিনেমা হল, সব ধরনের মৌসুমি ফলের গাছ, ছন্দিত ঝর্না, স্নিগ্ধ সরোবর, ২টি সুইমিং পুল, ৩০ হাজার গাছের অপূর্ব মায়াঞ্জন ইত্যাদি ইত্যাদি। অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্বলিত আন্তর্জাতিক মানের এই রিসোর্টে দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।

সাগর দিঘি : এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং প্রাচীন রাজ্য হিসাবে ইতিহা সে খ্যাত। বহু প্রাচীনস্থাপনা ইতিহাস ঐতিহ্যে এ গ্রাম সমুজ্জ্বল। প্রায় ৬৫ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত সাগর দিঘি এ গ্রামের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এর সাথে অনেক কাহিনী বিজড়িত। বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এ দিঘি কমলাবতীর দিঘি নামেও পরিচিত। দিঘি খননের উপাখ্যান নিয়ে সিনেমা, নাটক, গান ইত্যাদি রচিত হয়েছে। কবি জসীমউদ্দিন লিখেছেন কবিতা 'রানী কমলাবতীর দিঘি' যা কবির 'সুচয়নী' কাব্যে ঠাঁই পেয়েছে।

লক্ষ্মীবাওড় জলাবন : সাড়ে তিন বর্গকিলোমিটারব্যাপী বৃহত্তম এই সোয়াম্প ফরেস্ট বানিয়াচঙ্গে অবস্থিত। সিলেটের রাতারগুলের চেয়ে বড় এই জলাবনে পর্যটক আকর্ষণ করার মত বৈচিত্র্যময় উপকরণের অভাব নেই।

রাবার বাগান : হবিগঞ্জের ৩টি রাবার বাগানের সৌম্য শান্ত পরিবেশ প্রকৃতির অপূর্ব লীলা নিকেতন। মাধবপুর আর বাহুবলে অবস্থিত বাগানগুলি থেকে উৎপাদিত রাবার 'সাদা সোনা' নামে খ্যাত। রাবার উৎপাদন, আহরণ ও সংরক্ষণের নানা প্রক্রিয়া অত্যন্ত চিত্তবিমোহন।

বিথঙ্গল আখড়া : বানিয়াচং উপজেলার বিথঙ্গল গ্রামে এই প্রসিদ্ধ আখড়াটি অবস্থিত। জগন্মোহিনী- সম্প্রদায়ের রামকৃষ্ণ গোস্বামী কর্তৃক ষোড়শ শতাব্দীতে আখড়াটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ তীর্থ স্থানে কোনো মূর্তি স্থাপিত হয়নি। এখানে রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধি, সুদৃশ্য মঠ, নাটমন্দির, ভোগমন্দির ছাড়াও বৈষ্ণবদের থাকার জন্য ১২০ টি কক্ষসহ ভবনাদি রয়েছে। আখড়ার দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে আছে ২০ মন ওজনের শ্বেত পাথরের মঞ্চ, সুদৃশ্য ছাতা, পিতলের সিংহাসন, রথ, রূপার পাখি, সোনার মুকুট ইত্যাদি। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যকলার নিদর্শনসমৃদ্ধ আখড়াটি হবিগঞ্জের পর্যটন বলয়ে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগনায় আখড়ার সৌম্য শান্ত

খাসিয়াপুঞ্জি : বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলায় বসবাসরত খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীর বিচিত্রমাত্রিক জীবন-বৃত্ত, টিলায় ভাঁজে ভাঁজে নানাবিধ মসলার গাছের সাথে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাসিয়া পান গাছ, ব্যতিক্রমী পোশাক পরিচ্ছদসহ খাসিয়াদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরে পর্যটন শিল্পে অনায়াসেই নতুন মাত্রা যুক্ত করা যায়।

মনিপুরি জীবন ও সংস্কৃতি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় মনিপুরি সম্প্রদায় বসবাস করছে। এদের তাঁত শিল্পজাত সামগ্রী অত্যন্ত অভিজাত, আদৃত এবং দৃষ্টিনন্দন। রবীন্দ্রনাথ মনিপুরি নৃত্যে বিমোহিত হয়ে শান্তিনিকেতনে নৃত্যটি শেখাবার ব্যবস্থা করেন। মনিপুরিদের জীবন প্রবাহসহ উন্নত সংস্কৃতির নানা দিক বিশিষ্টতার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পর্যটক আকর্ষণ এবং মনোরঞ্জনের বলয়টি সম্প্রসারণ ও বর্ণিল করা যায়।
এছাড়া চাশ্রমিকসহ হবিগঞ্জে অসংখ্য আদিবাসীরা বসবাস করছে। তাদের বিচিত্র জীবনধারা, সংস্কৃতি পর্যটনক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে পারে-একথা বলাই বাহুল্য।

চা-বাগান : হবিগঞ্জের নিসর্গমালার মধ্যমণি হল ২৪টি চা বাগানের অপরূপ লাবণ্যপ্রভা। ১৩ টি বাগান চুনারুঘাট উপজেলার অন্তর্গত। সমতল ও টিলার উপর গাছের শৈল্পিক বিন্যাস, সবুজের মায়াবি হাতছানি, চা পাতা আহরণরত নারী শ্রমিকদের নিপুণ হাতের লীলায়িত ছন্দ ইত্যাদিসহ পর্যটকের নয়ন মন ভুলানোর বহু বিচিত্র উপচার চা-বাগানকে কাব্যিক মহিমায় দীপ্র করেছ। বিমুগ্ধ চিত্ত তাই হাজার তারের বীণার সুরে গেয়ে উঠে, 'তোমরা সেখানে সাধ চলে যাও, আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব'। (জীবনানন্দ)
প্রকৃতপক্ষে বিপুল অর্থনৈতিক আয়ের উৎস হিসাবে পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব অপরিমেয়। বিশ্বের বহু দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ পর্যটন খাত থেকে অর্জিত হয়। বাংলাদেশেও তা সৃষ্টি করা সম্ভব।

ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, প্রাকৃতিক ও ইতহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ হবিগঞ্জকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার ব্যাপকতর সুযোগ রয়েছে। সরকারি পর্যটন বিষয়ক উদ্যোগ ও তৎপরতার আলোকে হবিগঞ্জকে আরো গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে নানা পরিকল্পনা তৈরি ও যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন ডালায় মূল্যবান মণি কাঞ্চন যুক্ত করা সম্ভব -এ কথা দিবালোকের মতই সুস্পষ্ট। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার অনলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।  নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বালাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা। পর্যটন শিল্পেও লেগেছে উন্নয়নে অভিঘাত। কারণ, অর্থনৈতিক দিক থেকে এ দেশের জন্য এর গুরুত্ব সীমাহীন।
জাতীয় আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বৈশ্বিক যোগাযোগ স্থাপন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগবৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে পর্যটনের উপযোগিতা অসীম।
এ শিল্পে বিরাজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে- প্রয়োজনীয় রাস্তা ঘাটের অভাব, বিপজ্জনক রাস্তা, আধুনিক হোটেল মোটেল তথা আবাসনের অপর্যাপ্ততা ইত্যাদি। এসব নিরসন অতীব জরুরি।
পর্যটকদের নিরাপত্তা, তাদের মূল্যবোধের প্রতি সহনশীল হওয়া, আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ পর্যটনকর্মী নিয়োগ করা ইত্যকার বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানাবিধ কল্যাণকর পদক্ষেপের আলোকেই বহু বর্ণে বিকশিত হবে হবিগঞ্জ তথা সারা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প। প্রকৃতপক্ষে এদেশ রূপ লাবণ্যের এক অনন্য চিত্রলেখা। একারণেই রূপমুগ্ধচিত্ত উৎসারিত হয় শতধারায়। আকাশ ছাপিয়ে বাজে পুলক-বাঁশি,

"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে/
-সার্থক জনম মাগো তোমায় ভালোবেসে"। (রবীন্দ্রনাথ)

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com