‎সিলেটে মানববন্ধন : ভূমি মালিকদের সেবা ঢাকায় সরিয়ে নেওয়ার প্রতিবাদ

আপলোড সময় : ২০-০৮-২০২৫ ১২:৪৪:৪০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২০-০৮-২০২৫ ১২:৪৪:৪০ অপরাহ্ন
সিলেট, ২০ আগস্ট : সিলেট বিভাগের ভূমি মালিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগে সিলেটজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সিলেটের সর্বস্তরের ভূমি মালিকদের ব্যানারে’ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মদনমোহন কলেজের সাবেক অধ্যাপক পীর হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর বিএনপির (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি সাবেক প্যানেল মেয়র জননেতা রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, সদর উপজেলা বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী জাহেদ আহমদ, সদর যুবদলের যুগ্ন ‎আহবায়ক খাদিম নগর ইউপি সদস্য মইন উদ্দিন আহমদ, সদর উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক তমিজুল ইসলাম, মহানগর জিসাসের সদস্য সচিব সাব্বির হোসেন জামিল, জেলা জিসাসের যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দিন নাসির সহ বিএনপি অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মী ও জামায়াত ইসলামী নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সিলেট নগরীর ভূমির মালিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে কয়েস লোদী বলেন, সিলেট বিভাগের জরিপের সাথে ঢাকার কর্মকর্তা কেন এত নাখোশ, কেন গোপনে সিলেটবাসীর সাথে প্রতারণা করছেন তারা। আমাদের না জানিয়ে সিলেট থেকে কি কারনে ঢাকায় প্রেস নিয়ে যাবেন। তিনি আর বলেন, আমাদের বাকী মৌজা গুলো সমাপ্তির পর ঢাকায় প্রেস নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান, অন্যতায় সিলেটবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। তিনি বলেন, সেটেলমেন্ট প্রেস সিলেটের মানুষের জন্য অনেক উপকার হচ্ছে। এখন যদি প্রেস ঢাকায় চলে যায় তা হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। তাই তিনি হুশিয়ারী দেন, যদি প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে আদেশ ৭ দিনের মধ্যে বাতিল না হয় তা হলে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ঘেরাও সহ লংমার্চের ডাক দিবেন বলে হুশিয়ারী দেন। তিনি জরিপ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এই আদেশ বাতিলের জন্য অনুরোধও জানান। তা না হলে আমরা যারা ফ্যাসিস হাসিনা কে যেভাবে বিদায় করেছি তাদের মত সিলেটবাসী কে নিয়ে লংমার্চ করে আমরা অফিস ঘেরাও করব।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, “সিলেট একটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। প্রবাসীরা সাধারণত অল্প কয়েকদিনের জন্য দেশে আসেন। এই স্বল্প সময়ে তাঁদের জমিজমার সংশোধন বা কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হয়। প্রেস যদি ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, তবে এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের বিভাগের সব মৌজার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল এখানকার প্রেস ঢাকায় নেওয়া যেতে পারে। তার আগে নয়।”
সভাপতির বক্তব্যে পীর হাবিবুর রহমান বলেন, “২০১২ সালে সিলেটে প্রেস স্থাপনের ফলে জরিপ কাজ দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছে। বর্তমানে মাত্র ৫০-৬০টি মৌজার ছাপার কাজ বাকি আছে, যা কয়েক মাসের মধ্যেই শেষ হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাহলে কেন এখন প্রেস ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে? এটি নিঃসন্দেহে এক ধরনের ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরও বলেন, “কোন স্বার্থে এবং কার স্বার্থে সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নেওয়া হবে—এ ব্যাপারে সিলেটবাসীকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। প্রয়োজনে লং মার্চ করে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ঘেরাও করা হবে।”
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে সিলেটে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অধীনে এই মিনি প্রেসটি সিলেট জোনাল অফিসে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপনের পর থেকেই প্রেসটি সুনামের সঙ্গে সিলেটের, ৪ জেলার ভূমি মালিকদের জন্য দ্রুত খতিয়ান ছাপার কাজ করে আসছে। এর ফলে এখানকার প্রবাসীরাও দ্রুত সেবা পাচ্ছিলেন, যা ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সহায়ক ছিল। এই প্রেসের কারনেই সিলেট জরিপ কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে। ১৯৮৭-৮৮ সিলেট জোনে জরিপ কাজ শুরু হয়। ধীরগতিতে চলা জরিপ কাজ এই সেটেলমেন্ট প্রেসের কারনে দ্রুততার সাথে কাজ সমাপ্তি পথে। ‎এই প্রেস নিয়ে অতীতেও নানা ষড়যন্ত্র চলেছিল, সেটা শান্তিপ্রিয় সিলেট বাসী রুখে দিয়েছেন। 
‎অভিযোগ উঠেছে, সাবেক জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার কাজী মাহবুব উর রহমান অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একটি লিখিত পত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরের প্রস্তাব দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনি না-কি সিলেটে প্রেসের প্রয়োজন নেই এমন মন্তব্য করে ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠান! তার এমন হঠকারী সিদ্ধান্তে সিলেটবাসী ক্ষুব্ধ।
‎যদিও তাকে তার নানাবিধ কর্মকাণ্ডের কারনে ইতোমধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে, তবুও তার এই প্রস্তাবের কারণে সিলেটবাসী এখন চরম উদ্বেগে রয়েছেন।
‎‎যদি এই প্রেসটি সিলেট থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, তবে ভূমি মালিকদের ভোগান্তি বহুগুণে বাড়বে। বর্তমানে সিলেটে খতিয়ান সংশোধনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়। প্রেস সিলেটে থাকায় ভূমি মালিকরা সংশোধিত খতিয়ান কয়েকদিনের মধ্যেই হাতে পেয়ে যান। কিন্তু প্রেসটি ঢাকায় চলে গেলে এই সেবা পেতে মাসের পর মাস লেগে যাবে।
‎সিলেট সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু মৌজা, যেমন সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজা, যেখানে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার শরিফ ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালত অবস্থিত, সেগুলোর খতিয়ান ছাপার কাজ এখনো বাকি আছে। একটি রিট মামলার কারণে প্রায় ১৫ হাজার ভূমি মালিকের সম্পত্তি আটকে আছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসটি স্থানান্তরিত হলে এই কাজগুলো আরও বিলম্বিত হবে।
‎‎ভূমি মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনোভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নন। ফয়েজ আহমেদ নামে একজন ভূমি মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের ছাপা খতিয়ান না পাওয়া পর্যন্ত সিলেট থেকে প্রেস ঢাকা নিতে দেওয়া হবে না।” তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। মিউনিসিপালিটি মৌজার বাসিন্দা জনাব কয়েস আহমদে ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, কোন মতে আমরা সিলেট থেকে এই প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরে হতে দিব না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।
‎সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত জিপি অ্যাডভোকেট তাজ রীহান জামানও এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, এমন হঠকারিতার কারণে ভূমি মালিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
‎সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নেয়ার বিষয়টি সিলেটের জনপ্রিয় সাবেক মেয়র জনাব আরিফুল হক চৌধুরী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খন্দকার আবদুল মুক্তাদির উনাদের কে ও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে বলে জানাগেছে।
 

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com