
ওয়ারেন, ২ অক্টোবর : সিঁদুর খেলা ও ধুনুচি নাচের মধ্য দিয়ে মিশিগানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটল। দশমীর দিন বাঙালি হিন্দু নারীরা দুর্গাকে বিদায় জানানোর আগে হাসি-আনন্দে মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়। বিদায়ের বেদনার মুহূর্তেও লাল রঙে রাঙিয়ে ওঠে পূজামণ্ডপ। বিশ্বাস করা হয়, সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সৌভাগ্য আসে এবং স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
এ বছরের শারদীয় উৎসব শুরু হয়েছিল গত ২০ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে। এরপর মহাষষ্ঠীর পূজা দিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় দুর্গাপূজা, যা একে একে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পেরিয়ে দশমীতে এসে পূর্ণতা পায়। মিশিগানের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রতিটি দিনই ছিলো পূজারীদের ভক্তিপূর্ণ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নানা আচার-অনুষ্ঠানে ভরপুর।

বিজয়ার দিনে ভক্তরা জড়ো হয়েছিলেন মিশিগান শিব মন্দির টেম্পল অব জয়-এ শান্তির জল ও প্রশস্তি বন্ধনের জন্য। বিকেল থেকেই মন্দির চত্বরে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। রাত ৯টায় শুরু হয় মনোমুগ্ধকর আরতি ও ধুনুচি নাচ। অন্তরা অন্তির কোরিওগ্রাফিতে ঢাকের তালে তাল মিলিয়ে আয়োজিত এই বিশেষ পর্ব সকলের নজর কাড়ে। ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও ভক্তিভরে ভরা এই মুহূর্তে মন্দির প্রাঙ্গণ যেন হয়ে ওঠে এক অনন্য সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
বিশেষভাবে চোখে পড়ে কলকাতা থেকে আসা প্রবাসী নারীদের অংশগ্রহণ। তারা ঢাকের বাজনায় পা মিলিয়ে ধুনুচি হাতে নেচে ওঠেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। তাদের নৃত্যে ভক্তি আর উৎসবের আনন্দ একাকার হয়ে ওঠে।

ধুনুচি নাচ আসলে দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয়। পুরাণে উল্লেখ আছে, দেবী দুর্গা নিজেই একসময় ধুনুচি হাতে নেচেছিলেন শক্তির সঞ্চারের জন্য। দেবতারা যখন তাঁকে জাগিয়ে তুলেছিলেন মহিষাসুরবধের জন্য, তখন নিজের ভেতর শক্তি বৃদ্ধি করতে তিনি এই নৃত্যে অংশ নেন। সেই বিশ্বাস থেকেই আজও এই নাচকে পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পালন করা হয়। সেই প্রাচীন আচার আর পুরাণকথার আবহেই মিশিগানের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হলো ধুনুচি নাচ, যা ভক্তদের হৃদয়ে ভরে দিল আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর এক অপরিমেয় ভক্তির অনুভূতি।
কথিত আছে, বিজয়া দশমীর দিনে সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিবাহিতা নারীরা সৌভাগ্যবতী হওয়ার বর পান। স্বামীর দীর্ঘায়ু ও দাম্পত্যজীবনের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এ আচার পালন করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আচার আজ আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন শুধু বিবাহিতাই নন, অবিবাহিতা তরুণী, বিধবা নারী এমনকি পুরুষরাও সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। ভক্তদের বিশ্বাস—এ উৎসব কেবল সৌভাগ্যের প্রতীক নয়, পরিবারের কল্যাণের জন্যও এক পবিত্র আয়োজন। যদিও সিঁদুর খেলার প্রাথমিক ইতিহাস স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় প্রায় চারশো বছর আগে এ রীতি শুরু হয়েছিল।

দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয় দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে। বিসর্জনের পর অনুষ্ঠিত হয় শান্তিজল গ্রহণ ও প্রশস্তি বন্ধন অনুষ্ঠান। শিব মন্দিরে প্রধান পুরোহিত পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী ভক্তদের মাথায় শান্তির জল ছিটিয়ে দেন। এ সময় ভক্তরা উচ্চকণ্ঠে ধ্বনি তোলেন- ‘বল দুর্গা মা কি জয়’। মায়ের চরণে শেষ প্রণাম নিবেদন শেষে নারী-পুরুষ সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের শেষে মিষ্টিমুখে সম্পন্ন হয় বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়।
প্রবাসের জীবনে এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, আবেগ ও সামাজিক বন্ধনেরও এক মহোৎসব। কয়েক দিনের এই আনন্দ শেষে প্রবাসীরা আবারও ফিরে যাবেন কর্মমুখর ও রুটিনমাফিক জীবনে। বিজয়ার পর্দা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রতিটি হৃদয়ে বাজে চিরন্তন মনখারাপের সুর।
সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিনে কন্যারূপে ধরায় আসেন দেবী দুর্গা। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে কৈলাসে ফিরে যান তিনি। এই বিদায়ের দিনই বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে টানা নয় দিন যুদ্ধ শেষে দশমীতে বিজয়ী হন দেবী দুর্গা। তাই বিজয়া দশমী দিনটি শুভতার বিজয় এবং অশুভের পরাজয়ের প্রতীক।

শাস্ত্র অনুসারে, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন “গজে” অর্থাৎ হাতিতে হয়েছিল। গজে আগমন অর্থাৎ দেবীর আগমন যখন হাতিতে হয়, তখন মর্ত্যলোকে সুখ-শান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং ধরাধামে আসে সমৃদ্ধি ও মঙ্গল।
অন্যদিকে, দেবীর গমন “দোলায়” অর্থাৎ পালকিতে ঘটছে। শাস্ত্রমতে, পালকিতে বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর প্রতিক্রিয়া মহামারী, ভূমিকম্প বা অতিমৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি করে। ফলে এই বছরের দেবীর আগমন-গমন মেলায় সুখ-সমৃদ্ধি ও সতর্কতার বার্তা দুটোই নিহিত।
এ বছরের শারদীয় উৎসব শুরু হয়েছিল গত ২০ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে। এরপর মহাষষ্ঠীর পূজা দিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় দুর্গাপূজা, যা একে একে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পেরিয়ে দশমীতে এসে পূর্ণতা পায়। মিশিগানের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে প্রতিটি দিনই ছিলো পূজারীদের ভক্তিপূর্ণ প্রার্থনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নানা আচার-অনুষ্ঠানে ভরপুর।

বিজয়ার দিনে ভক্তরা জড়ো হয়েছিলেন মিশিগান শিব মন্দির টেম্পল অব জয়-এ শান্তির জল ও প্রশস্তি বন্ধনের জন্য। বিকেল থেকেই মন্দির চত্বরে ভক্তদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। রাত ৯টায় শুরু হয় মনোমুগ্ধকর আরতি ও ধুনুচি নাচ। অন্তরা অন্তির কোরিওগ্রাফিতে ঢাকের তালে তাল মিলিয়ে আয়োজিত এই বিশেষ পর্ব সকলের নজর কাড়ে। ভক্তদের উচ্ছ্বাস ও ভক্তিভরে ভরা এই মুহূর্তে মন্দির প্রাঙ্গণ যেন হয়ে ওঠে এক অনন্য সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
বিশেষভাবে চোখে পড়ে কলকাতা থেকে আসা প্রবাসী নারীদের অংশগ্রহণ। তারা ঢাকের বাজনায় পা মিলিয়ে ধুনুচি হাতে নেচে ওঠেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। তাদের নৃত্যে ভক্তি আর উৎসবের আনন্দ একাকার হয়ে ওঠে।

ধুনুচি নাচ আসলে দেবী দুর্গাকে উৎসর্গ করা হয়। পুরাণে উল্লেখ আছে, দেবী দুর্গা নিজেই একসময় ধুনুচি হাতে নেচেছিলেন শক্তির সঞ্চারের জন্য। দেবতারা যখন তাঁকে জাগিয়ে তুলেছিলেন মহিষাসুরবধের জন্য, তখন নিজের ভেতর শক্তি বৃদ্ধি করতে তিনি এই নৃত্যে অংশ নেন। সেই বিশ্বাস থেকেই আজও এই নাচকে পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পালন করা হয়। সেই প্রাচীন আচার আর পুরাণকথার আবহেই মিশিগানের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হলো ধুনুচি নাচ, যা ভক্তদের হৃদয়ে ভরে দিল আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর এক অপরিমেয় ভক্তির অনুভূতি।
কথিত আছে, বিজয়া দশমীর দিনে সিঁদুর খেলার মাধ্যমে বিবাহিতা নারীরা সৌভাগ্যবতী হওয়ার বর পান। স্বামীর দীর্ঘায়ু ও দাম্পত্যজীবনের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এ আচার পালন করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আচার আজ আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন শুধু বিবাহিতাই নন, অবিবাহিতা তরুণী, বিধবা নারী এমনকি পুরুষরাও সিঁদুর খেলায় অংশ নেন। ভক্তদের বিশ্বাস—এ উৎসব কেবল সৌভাগ্যের প্রতীক নয়, পরিবারের কল্যাণের জন্যও এক পবিত্র আয়োজন। যদিও সিঁদুর খেলার প্রাথমিক ইতিহাস স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় প্রায় চারশো বছর আগে এ রীতি শুরু হয়েছিল।

দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানো হয় দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে। বিসর্জনের পর অনুষ্ঠিত হয় শান্তিজল গ্রহণ ও প্রশস্তি বন্ধন অনুষ্ঠান। শিব মন্দিরে প্রধান পুরোহিত পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী ভক্তদের মাথায় শান্তির জল ছিটিয়ে দেন। এ সময় ভক্তরা উচ্চকণ্ঠে ধ্বনি তোলেন- ‘বল দুর্গা মা কি জয়’। মায়ের চরণে শেষ প্রণাম নিবেদন শেষে নারী-পুরুষ সবাই একে অপরকে আলিঙ্গন করেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানের শেষে মিষ্টিমুখে সম্পন্ন হয় বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়।
প্রবাসের জীবনে এই উৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, আবেগ ও সামাজিক বন্ধনেরও এক মহোৎসব। কয়েক দিনের এই আনন্দ শেষে প্রবাসীরা আবারও ফিরে যাবেন কর্মমুখর ও রুটিনমাফিক জীবনে। বিজয়ার পর্দা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রতিটি হৃদয়ে বাজে চিরন্তন মনখারাপের সুর।
সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিনে কন্যারূপে ধরায় আসেন দেবী দুর্গা। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে কৈলাসে ফিরে যান তিনি। এই বিদায়ের দিনই বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। পুরাণ মতে, মহিষাসুরের সঙ্গে টানা নয় দিন যুদ্ধ শেষে দশমীতে বিজয়ী হন দেবী দুর্গা। তাই বিজয়া দশমী দিনটি শুভতার বিজয় এবং অশুভের পরাজয়ের প্রতীক।

শাস্ত্র অনুসারে, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন “গজে” অর্থাৎ হাতিতে হয়েছিল। গজে আগমন অর্থাৎ দেবীর আগমন যখন হাতিতে হয়, তখন মর্ত্যলোকে সুখ-শান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং ধরাধামে আসে সমৃদ্ধি ও মঙ্গল।
অন্যদিকে, দেবীর গমন “দোলায়” অর্থাৎ পালকিতে ঘটছে। শাস্ত্রমতে, পালকিতে বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর প্রতিক্রিয়া মহামারী, ভূমিকম্প বা অতিমৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি করে। ফলে এই বছরের দেবীর আগমন-গমন মেলায় সুখ-সমৃদ্ধি ও সতর্কতার বার্তা দুটোই নিহিত।