হ্যামট্রাম্যাক নির্বাচন : বিতর্কিত ব্যালটের ভাগ্য সিল : ফল ঘোষণার অপেক্ষা

আপলোড সময় : ১৫-১১-২০২৫ ১২:৫৩:১০ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-১১-২০২৫ ১১:০৩:১৮ পূর্বাহ্ন
৬ নভেম্বর হ্যামট্রাম্যাক ক্লার্ক রানা ফারাজের অফিসে পাওয়া ৩৭টি অনুপস্থিত ব্যালট গণনা করা হবে কি না—এই প্রশ্নে ওয়েইন কাউন্টি বোর্ড অফ ক্যানভাসার্স ২-২ ভোটে অচলাবস্থায় পড়ায়, হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র প্রার্থী অ্যাডাম আলহারবির (ডানদিকে) ১১ ভোটের সংকীর্ণ জয় শুক্রবারও বহাল থাকে/Photo : Daniel Mears, The Detroit News

হ্যামট্রাম্যাক, ১৫ নভেম্বর : ওয়েইন কাউন্টি নির্বাচন কর্মকর্তারা ৩৭টি অনুপস্থিত ব্যালট গণনা করা হবে কি না—এই প্রশ্নে দলীয়ভাবে ২-২ ভোটে বিভক্ত হয়ে অচলাবস্থায় পড়েছেন। ফলে ব্যালটগুলো কার্যত বাতিল হয়ে যায়, যা গণনা হলে হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বদলে যেতে পারত।
এই সিদ্ধান্তের অর্থ দাঁড়ায় আপাতত অ্যাডাম আলহারবির ১১ ভোটের জয় বহাল থাকছে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সিটি কাউন্সিল সদস্য মুহিত মাহমুদ, যিনি ডেট্রয়েটের বহুজাতিক শহর হ্যামট্রাম্যাকের নেতৃত্বে দৌড়ে আছেন, ইতোমধ্যেই নির্বাচন সংক্রান্ত অনিয়ম ও তদন্তের ঘূর্ণাবর্তে পড়েছেন।
রাজ্য আইনে বলা আছে, ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দুই সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ১৮ নভেম্বরের মধ্যে কাউন্টিকে পূর্ণাঙ্গ গণনা প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এরপর বোর্ড ফলাফল অনুমোদন করলে আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে ওয়েইন কাউন্টি ক্লার্কের দপ্তর।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বোর্ড আরও দেড় ঘণ্টা বৈঠক করে। হ্যামট্রাম্যাকের অগণিত বাসিন্দা ও কর্মকর্তা ভার্চুয়ালি অথবা সরাসরি উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনের দুই দিন পর শহরের ক্লার্ক অফিসে পাওয়া যায় ওই ৩৭টি অনুপস্থিত ব্যালট। খামগুলো সিল করা ছিল না এবং নির্ধারিত সিল করা কন্টেইনারেও রাখা হয়নি।যা রাজ্য নির্বাচন আইন লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে ওয়েইন কাউন্টি বোর্ডের আইনি উপদেষ্টা দল।
তবে বোর্ডের দুজন ডেমোক্র্যাট সদস্যের যুক্তি ব্যালট বাতিল করা নিজেই আইনের লঙ্ঘন, কারণ আইন অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তার ভুলের জন্য কোন ভোট অযোগ্য ঘোষিত হতে পারে না।
বোর্ড সদস্য এডওয়ার্ড কিলিয়ান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই ৩৭ জন ভোটার সময়মতো এবং সঠিকভাবে ক্লার্কের কাছে ব্যালট জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের কোনো ভুল নেই। হেফাজত নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ব্যালটগুলো গণনা করা উচিত।”
বোর্ডের চেয়ারপারসন লিসা ক্যাপাটিনা, যিনি রিপাবলিকান, ভোটারদের ব্যালট গণনা না করার জন্য ক্যানভাসার বোর্ডকে দায়ী করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। “ক্লার্কের অফিসে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা দায়ী নই,” মন্তব্য করেন ক্যাপাটিনা।
ব্যালট নিয়ে ২-২ সমতায় পৌঁছানো ভোটে, ক্যাপাটিনা এবং রিপাবলিকান সদস্য টনি সেলারস ব্যালট প্রত্যাখ্যানের পক্ষে অবস্থান নেন, অন্যদিকে ভাইস চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড কিলিয়ান এবং ডেমোক্র্যাট রিচার্ড প্রিউস ব্যালট গ্রহণের পক্ষে ভোট দেন।
বৃহস্পতিবার বোর্ডের সামনে উপস্থিত হয়ে হ্যামট্রাম্যাক সিটি ক্লার্ক রানা ফারাজ জানান, সাধারণ নির্বাচনের দুই দিন পর৬ নভেম্বর একজন ক্লার্ক অফিসের কর্মী ভুল স্থানে রাখা ৩৭টি অনুপস্থিত ব্যালট তাঁর অফিসে খুঁজে পান। ফারাজ জানান, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওয়েইন কাউন্টির কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। তবে ব্যালটগুলো কীভাবে ভুল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাল, তা ব্যাখ্যা করতে পারেননি ফারাজ, এবং তিনি এ বিষয়ে আরও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
ফারাজ বলেন, নির্বাচনের দিন থেকে তাঁর অফিসের দরজা বন্ধ ছিল, তবে স্বীকার করেন যে ব্যালটগুলো পাওয়ার পর থেকে তাঁর অফিসে দু’জন অ-নির্বাচনী কর্মকর্তা প্রবেশ করেছিলেন।
ক্লার্ক অফিসের একজন কর্মী দ্য ডেট্রয়েট নিউজ–কে জানিয়েছেন যে রানা ফারাজ এই সপ্তাহে অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। তবে ভারপ্রাপ্ত সিটি ম্যানেজার আলেকজান্ডার লাগ্রো ফারাজকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে অস্বীকৃতি জানান। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুহিত মাহমুদ বলেন, তাঁর ধারণা ফারাজকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বোর্ডের ভোটের পর মাহমুদ তাৎক্ষণিক আর কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি আগেই ঘোষণা করেছেন চূড়ান্ত গণনা শেষে যদি ব্যবধানে পিছিয়ে থাকেন, তিনি পুনর্গণনার (recount) আবেদন করবেন।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের বৈঠকে বহু হ্যামট্রাম্যাক বাসিন্দা বক্তব্য রাখেন। অনেকেই মত দেন যে নির্বাচনের দিন থেকে ব্যালট পাওয়া যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে কোনো ধরণের জালিয়াতি, ব্যালট টেম্পারিং, অথবা অন্ততপক্ষে অনিয়মের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
বৃহস্পতিবার বৈঠকে বোর্ডের একজন সদস্য হ্যামট্রাম্যাক সিটি হলের নিরাপত্তা ফুটেজ পর্যালোচনার মতো তদন্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তবে শুক্রবার চেয়ারপারসন লিসা ক্যাপাটিনা স্পষ্ট করে বলেন, কেরানি এবং সম্ভাব্য নির্বাচনী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করা বোর্ডের দায়িত্ব নয়; এসব তদন্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এখতিয়ার।
এদিকে ব্যালট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরও নির্বাচিত মেয়র অ্যাডাম আলহারবি অসন্তোষ প্রকাশ করেন যে বোর্ডের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বিতর্কিত ব্যালট গ্রহণের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সিটি ক্লার্কের অফিসে অননুমোদিত লোকজন প্রবেশ করেছিল। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কেউই এমন ব্যালট অনুমোদন করতেন না।”
হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র নির্বাচনটি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দলীয় হলেও, দুই প্রার্থীর রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্টভাবে ভিন্ন। ইউনিয়ন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে উঠে আসা মুহিত মাহমুদ নীতি অবস্থান ও শহর পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গিতে ফেডারেল সরকারের দীর্ঘদিনের প্রকৌশলী অ্যাডাম আলহারবির তুলনায় অধিক বামঘেঁষা বলে বিবেচিত। মাহমুদের আইনি প্রতিনিধিত্ব করছেন মিশিগান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট আইনজীবী মার্ক ব্রুয়ার।
অন্যদিকে আলহারবি ওয়েইন কাউন্টি সার্কিট কোর্টে মাহমুদ এবং সিটি ক্লার্ক রানা ফারাজের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ মাহমুদ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কিংবা দায়িত্ব গ্রহণের যোগ্য নন, কারণ তিনি ২০২৩ সালে সিটি কাউন্সিলের জন্য প্রার্থিতা দাখিলের সময় হ্যামট্রাম্যাকের বাইরে বসবাস করতেন। আলহারবির দাবি, এটি শহরের আবাসিক যোগ্যতার নিয়ম লঙ্ঘন। মামলায় আদালতের কাছে আরও অনুরোধ করা হয়েছে, বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাহমুদকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ থেকে বিরত রাখা হোক।
Source & Photo: http://detroitnews.com
 

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com