গান গাইতে নিষেধ, থেমে গেছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারের জীবিকার পথ

আপলোড সময় : ০২-১২-২০২৫ ০১:৫১:৫৫ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ০২-১২-২০২৫ ০১:৫১:৫৫ পূর্বাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২ ডিসেম্বর : সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী হেলাল মিয়া (৬৫) প্রায় পাঁচ দশক ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু গত ছয় দিন ধরে তার সেই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তিনি, তার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে গানের আসর বসাতে পারছেন না।
জন্ম থেকেই দৃষ্টিশক্তিহীন হেলাল মিয়া জানান, গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) শহরের পৌর মুক্তমঞ্চ মাঠে প্রতিদিনের মতো সকাল ১০টা থেকে গান শুরু করতে গেলে কয়েকজন মাদরাসাছাত্র এসে তাদের গানের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। শুধু তাই নয়, গান ছেড়ে ‘ভিক্ষাবৃত্তি’ করার পরামর্শ দিয়ে বাদ্যযন্ত্র ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন তারা। এরপর থেকেই আতঙ্কে আর মুক্তমঞ্চে যেতে সাহস পাচ্ছেন না হেলাল মিয়া ও তার পরিবার।
হেলাল মিয়ার পরিবারে মোট নয়জন সদস্য। চার ছেলে, এক মেয়ে ও তিন নাতি-নাতনিসহ সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করে মারফতি, মুর্শিদী ও কাওয়ালীর মতো আধ্যাত্মিক গান শুনিয়ে এ পরিবারের জীবিকা চলত। প্রতিদিন তিন ঘণ্টা গান গেয়ে যে সামান্য আয় হতো, তা দিয়েই চলত তাদের সংসার।
হেলাল মিয়া বলেন, ‘গত ছয় দিন ধরে গান বন্ধ, সঙ্গে রোজগারও। আমরা দিন এনে দিন খাই। যে সামান্য টাকা ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। কিছু ঋণ করেও দিন কাটাচ্ছি। ভয় পেয়েছি—তাই আর গান গাইতে যেতে পারছি না। কয়েক মাস আগেও দুইবার এমন হুমকির মুখে পড়েছিলাম।’
ঘটনাটি ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি। তিনি জানান, অতীতে হেলাল মিয়ার পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে তিনি সহযোগিতা করেছেন। “তাদের গানে বাধা দেওয়া ঠিক হয়নি,” উল্লেখ করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার তিনি পরিবারটিকে অভয় দিয়েছেন এবং আবারও মুক্তমঞ্চে গান গাইতে বলেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা হেফাজতে ইসলামের সভাপতি ও জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুবারক উল্লাহ বলেন, তার জানা মতে তাদের কোনো শিক্ষার্থী গানে বাধা দেয়নি। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই। তবে শরীয়তে গান নিষিদ্ধ; তাই অনুমতির প্রশ্নও আসে না। তারা তাদের পথে চলুক। কারও পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে গান গাইতে বাধা দেওয়া সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ পুলিশ পায়নি। “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
ছয় দিন ধরে আয়বিহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে পুরো পরিবার। জীবিকার একমাত্র উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই শিল্পী ও তার পরিবার।

সম্পাদকীয় :

চিনু মৃধা : সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি

সম্পাদক ও প্রকাশক : চিন্ময় আচার্য্য, নির্বাহী সম্পাদক : কামাল মোস্তফা, সহযোগী সম্পাদক : আশিক রহমান,

বার্তা সম্পাদক : তোফায়েল রেজা সোহেল, ফিচার এডিটর : সৈয়দ আসাদুজ্জামান সোহান, স্টাফ রিপোর্টার : মৃদুল কান্তি সরকার।

অফিস :

22021 Memphis Ave Warren, MI 48091

Phone : +1 (313) 312-7006

Email : [email protected]

Website : www.suprobhatmichigan.com