কলকাতা, ০৮ সেপ্টেম্বর : নির্বাচনের আগেই মাস্টারস্ট্রোক! জি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ কেন? ভারতের বিশেষ অতিথি কেন হলেন শেখ হাসিনা? শুধুই কি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক? ভেবে দেখেছেন? নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে বিশেষ বৈঠকে কি কথা হল শেখ হাসিনার সঙ্গে? জি20 তে বাংলাদেশের এত গুরুত্ব পাবার কারণটা কি? ভারতের উদ্দেশ্যে অন্য, নিজের স্ট্র্যাটেজি প্রমাণ করতে চাইছে পশ্চিমাদের কাছে!
ইন্দো প্যাসিফিক পলিসি ফ্রেমের পয়েন্ট হিসেবে ঢাকাকে তুলে ধরার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে জি-টোয়েন্টি। সম্মেলনের পরপরই ঢাকা যাবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। সম্মেলনের আগেই ঢাকা ঘুরে এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই প্রথম বাংলাদেশ জি-টোয়েন্টি ফোরামের অংশ হল। এটিই একমাত্র দক্ষিণ এশিয়ার দেশ যাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জি-টোয়েন্টির সদস্য না হয়েও বাংলাদেশ পাচ্ছে বিশেষ সম্মান। শীর্ষ সম্মেলনে দেশটার গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো প্রভাব ফেলবে গোটা বিশ্বে।
কিন্তু হঠাৎ এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে ডাকা হল কেন? কারণটা কি? তাহলে কি এটা ভারতের কৌশলের একটা অংশ? নির্বাচনের আগে একে অপরের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছে কি? কারনটা কিছুটা ভূরাজনৈতিক। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে কৌশলগত অবস্থান দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভারত চীন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া সহ বহু দেশের। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ছিল ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। কিন্তু গত এক দশকে দেশটার প্রবৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৭ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটা পরিণত হবে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচকে ছাপিয়ে গিয়েছে বহু প্রতিবেশী দেশকে। বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনামায় সোনার হাঁসের মতো। এমনটাই বলছে ফেয়ার অবজারভারের প্রতিবেদন। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব বাণিজ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্র। হয়ে উঠছে অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত বিনিয়োগের আকর্ষণীয় জায়গা। ঢাকার উপর লক্ষ্য রয়েছে শক্তিধর বহু রাষ্ট্রের। চীন ইতিমধ্যেই সফলভাবে বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে। বাংলাদেশ কিন্তু চীনকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রভাব বিস্তার করতে আর মালাক্কা প্রণালীতে বিকল্পের রুট তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তাই দেশটাকে চীনের প্রভাব মুক্ত রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে বহু রাষ্ট্র।
চলতি বছরের শুরুতেই ওয়াশিংটন বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভিষা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিল। যার কারণে যথেষ্ট চাপে রয়েছে দেশটা। এত সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কোন প্রভাব পড়েনি দিল্লি ঢাকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে। দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনের শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ত্রিপুরার সাথে রেল সংযোগ এবং রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্বোধন হয়েছে। এছাড়াও কথা হয়েছে টাকা ও রুপিকার্ডের সুবিধা নিয়ে। বৈঠকে জি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অবস্থান এটাই প্রমাণ করে যে, ভারত চলে তার নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে। তার নিজস্ব বৈদেশিক নীতির গতিপথ অনুযায়ী। ভারত এটা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিল পশ্চিমাদের । খুব ব্যালেন্স করে চলছে বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্বের মাঝে। নিরপেক্ষ ভাবে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে রাশিয়ার সঙ্গেও।
সূত্র : প্রথম কলকাতা
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan