হবিগঞ্জ, ১৫ সেপ্টেম্বর : ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের দাবিতে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন করেছেন তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নগরীর খোয়াই নদীর তীরে অনুষ্ঠিত জলবায়ু ধর্মঘটের সময় জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি বিশেষ করে এলএনজি আমদানির ওপর দেশের নির্ভরতা কমানোর এ দাবি তুলে ধরে ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস হবিগঞ্জ জেলা। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে রূপান্তর প্রক্রিয়া যেন ন্যায্য হয়, মানবাধিকারকে সমুন্নত করে এবং কাউকে পেছনে ফেলে না রাখা হয় সেই দাবিও তরুণদের কাছ থেকে উঠে আসে। সুইডেনের জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের গড়ে তোলা স্কুলশিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আহ্বানে এই জলবায়ু ধর্মঘট পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্রমাগত মিথ্যা প্রতিশ্রতি দেয়ায় উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করে এসময় তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয়কর প্রভাবের কারণে বিশ্ব এখন একটি সংকটপূর্ণ সময় পার করছে। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে এখনই উদ্যোগী হতে হবে। সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই ক্ষতিকারক জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে জলবায়ু বিধ্বংসী কার্যকলাপের জন্য দায় নিতে হবে এবং সেখান থেকে সরে এসে অবিলম্বে উল্লেখযোগ্যভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। নানা ধরনের দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে দুই শতাধিক তরুণ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। দেশের ২৬টি জেলার তরুণ জলবায়ু কর্মীরা বিশ্বব্যাপী এই জলবায়ু ধর্মঘটের দাবিগুলোর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট এবং সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী নাজমুন নাহিদ বলেন, ‘যেভাবে প্রলয়ংকরী বন্যা, তাপ প্রবাহ ও দাবানল বিশ্ব জুড়ে চলছে তা রুখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করতেই হবে। আমরা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বদলে যে সেদ্ধ হওয়ার যুগে প্রবেশ করেছি সেই আগুনে আর জীবাশ্ম জ্বালানি ঢালা যাবেনা। নাহিদ আরো বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আমাদের অবিলম্বে ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর অত্যন্ত জরুরী। আমরা যত বেশি অপেক্ষা করব, আমাদের পৃথিবী এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তত বেশি খরচ বাড়বে, ক্ষয়-ক্ষতি বাড়বে। নতুন জীবাশ্ম জ্বালানিকে আমাদের না বলার এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির বিকল্প গ্রহণ করার এখনই উপযুক্ত সময় ।’’
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের হবিগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী নাওফাত আদিবাহ্ ইবশার বলেন, ‘আমরা আর গ্রীনওয়াশিংয়ের মাধ্যমে প্রতারিত হতে চাই না। বাস্তব সমাধান মানে কার্যকর পদক্ষেপ, ফাঁকা বুলি নয় নয়।’ আরও বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ জেলার সদস্যবৃন্দ।
বিশিষ্ট জলবায়ু বিজ্ঞানী ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সালিমুল হক তরুণদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এক বার্তায় বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি স্পষ্ট এবং একটি চলমান সংকট । বিশ্বের ধনীরা জলবায়ু সমস্যার জন্য দায়ী, যার জন্য দরিদ্ররা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সরকারকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী দূষণকারীদের চাপ দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোতে দ্রত রূপান্তর করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, "তরুণরা নির্ভীকভাবে জলবায়ু সুবিচার আদায়ের এই চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করেছে এবং আমি গর্বিতভাবে তাদের সাথে একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সংহতি জানাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়ায়ে প্রতিশ্রæতিগুলোকে অর্থপূর্ণ কর্মে পরিণত করে তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত এবং বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বাংলাদেশের তরুণরা বাস্তব জলবায়ুব্যবস্থা, অবিলম্বে পরিবর্তন এবং সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত দাবি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan