ওয়ারেন, ০৯ মে : দুনিয়া জুড়েবদলে গেছে মানুষ। বেশিরভাগ মানুষ এখন প্রচারে পরিচিতি লাভ করতে চায়। অথচ এক সময় ছিল, মানুষ তার মহৎ কর্মের মাধ্যমে সমাজে সর্বজন শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠতো। কর্মের জন্য সাধারণ মানুষও বিখ্যাত হয়ে উঠতো। এখনো শত শত মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে নিজ নিজ এলাকায় কিংবদন্তি হয়ে আছেন। অথচ তাদের না-ছিল শিক্ষা না-ছিলো কাড়ি কাড়ি টাকা। শুধু মাত্র মহৎ কর্মের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন ।
আজো সমাজের অন্যান্য মানুষ তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। একজন মানুষের সৎ কর্মের প্রচার মুখে মুখে গ্রাম থেকে শহরে বন্দরে চাউর হয়ে যেতো। তখন এতো আধুনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বলে কিছু ছিল না ।
এখন বেশির ভাগ মানুষ কাজের চেয়ে প্রচার করে অনেক গুণ বেশি। ধনের চেয়ে দান দেখায় বেশি। যে কাজ কখনোই করেনি ভবিষ্যতে করার পরিকল্পনাও নেই এমন কল্পনা বিলাসী প্রচারেও আনন্দ উপভোগ করে। তাঁরা প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ ও সরল মানুষকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। একমাত্র খুব কাছের মানুষ ছাড়া অন্য মানুষ এই সুযোগ সন্ধানী মানুষদের চিনতে পারে না। এই সুযোগ সন্ধানী মানুষদের কারণে সমাজের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন হয়না। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো এই সুযোগ সন্ধানীদের সাথে, বুঝে না বুঝে আরেক শ্রেণীর অনুসারী থাকে। তাঁরাও নিজেদের দল রক্ষা এবং সামান্য পদ পদবির লোভে সুযোগ সন্ধানী দলে ভীড় করে।
সেলুকাস !!
দোষে গুণেমানুষ। আমার নিজেরও ব্যক্তিগত অনেক দোষ আছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক দুর্বলতা যাতে সামষ্টিক অথবা সামাজিক উদ্যোগকে ব্যাহত না করে সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকার চেষ্টা করি। আগে চেয়ারম্যান মেম্বার থেকে শুরু করে গ্রামের সর্দার বাছাইয়ের জন্য এলাকায় বা গ্রামে সভা করে যোগ্য লোক খুঁজে বের করা হতো । তাঁর পর নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বলা হতো। এখন যে খুশি সে দাঁড়িয়ে যায়। দেদারসে টাকা খরচ করে ভোট কিনে। যার যত টাকা, তার তত ভোট। ফলাফল টাকা ওয়ালা পাস। টাকা ওয়ালা পাস করে-ই তাঁর টাকা বানানোর নেশায় মত্ত হয়। এলাকার উন্নয়ন অগ্রগতি ও সাধারণ মানুষের দিকে তাকানোর তার ফুরসৎ নেই। এমন ভাইরাসে আক্রান্ত প্রবাসে গড়ে উঠা অনেক সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও ।
নির্বাচনি ইস্যু এলে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীও প্যানেলগুলো নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে ভোটার বানায়। যে যত বেশি ভোটার বানায়, সেই পাশ করে। পাশের পর দেশে বিদেশে জানান দেয়ার জন্য একটি বিশাল বড় অভিষেক অনুষ্ঠান করে । কারণ বিজয়ী দলের কাছে তখন বিরাট অঙ্কের অর্থ থাকে। এ যেন রাজা অশোকের সিংহাসনে আরোহনের “ অশ্বমেধ যজ্ঞ '’ ।
অভিষেক অনুষ্ঠান করার পর সংগঠনের আর কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না । নিকট অতীতের ইতিহাস তাই বলে। নির্বাচনের পর নেতারাও আর ফোন করে সাধারণ মানুষকে বিরক্ত করে না। অথচ ভোটের আগে তারা অনেকেই একাধিকবার শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষদের বিরক্ত করতো। এখানে উল্লেখ্য যে, বেশিরভাগ কর্মজীবী মেহনতি মানুষ এসব সভা সমিতিতে খুব একটা গা ঘেঁষেন না। তাঁরা নিজেদের পরিবারপরিজনদের আর্থিক সচ্ছলতার সংগ্রাম ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মুল্যবান সময় নষ্ট করার তাদের কোন আগ্রহ থাকে না । নৈতিক কারণে সভা সমিতিতে আসতে না চাইলেও তাকে বিভিন্ন কৌশলে চাপ প্রয়োগ করা হয় ।
তখন অনেক মানুষ বাধ্য হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও “ অনুরোধে ঢেঁকি গিলে '’।
কামাল মোঃ মোস্তফা
মিশিগান , যুক্তরাষ্ট্র।