হবিগঞ্জ, ৩০ আগস্ট : শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। এ নিয়ে বহু কবিতা ও গান রচিত হয়েছে। বাস্তবেও যেন তাই। শরতের নান্দনিক সৌন্দর্য এখন দেশের অনেক জায়গায় সেজেছে।
তেমনই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যােনের পাশের ছড়ায় প্রকৃতির এমন অপরূপ সাজ লক্ষ্য করা গেছে। তাই তো অনেকেই ছুটছেন সেখানে প্রকৃতির বুকে শ্বাস নিতে। ছড়ার সোনালি বালুগুলোতে লেপটে আছে দর্শনার্থীদের পায়ের চিহ্ন। যদিও করোনাকাল তবুও প্রকৃতি প্রেমীরা মনের বাড়ীকে প্রসারিত করতে সবসময়ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশেই কিছু সময় কাটাতে চান।
কখনো অঝোর ধারায় বৃষ্টি, কখনো বা থেমে থেমে, কখনো ঝম-ঝমিয়ে একেবারে ছালফাটা বৃষ্টি। শ্রাবণ মাস শেষে ভাদ্র মাসের শুরুতে তথা শরতের আগমনে বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতি বরণ করতে চলেছে শরৎকালকে।
শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। শিউলি ফুল, স্বচ্ছ আকাশ, মায়াবী জ্যোৎস্নার কারণেই এমন নাম হয়েছে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কাশফুল। আর শরৎকে স্বাগত জানাতে মেতে উঠেছে কাশ ফুলেরা।
সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির রাজ্য চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যােনের পাশেই সবুজ চা বাগানের মধ্যখানে ছড়ার পাড়ে মাথা উচু করে দোল খাচ্ছে শুভ্র সাদা এই কাশফুল গুলো। সেখানে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছে কাশফুলের বাগান। আর এই নজর কারা কাশফুলের হাতছানি মানুষের মনকে ভীষণ ভাবে কাশফুলের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
এজন্য এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয়রা ছাড়াও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যােনে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ভীড় জমাচ্ছে সেখানে।কাশফুল দেখতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন “যান্ত্রিক নাগরিক জীবনের একঘেয়েমী কাটানোর জন্য এই কাশফুলের সান্নিধ্যে আসি, এই কাশফুলের শুভ্রতা মনকেও শুদ্ধ করে দেয় “
হবিগঞ্জ শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা ইসরাত অপি জানান "কাশফুলের আমাদের এক নিবিড় সম্পর্ক, তাই আমরা এখানে এসেছি কিছু ছবি তোলার জন্য ৷ এখানের দৃশ্যগুলো সত্যি খুব মনোরম, শুভ্রতার রেশ যেন চারদিকে ছড়িয়ে আছে। "
বন্ধুদের নিয়ে কাশবন দেখতে আসা কবি এস এম মিজান বলেন, "বৃষ্টি আর রৌদ্রছায়ার খেলার মধ্য দিয়ে ধবধবে দুধসাদা ফুলে ভরে ওঠে কাশবনে। মৃদু বাতাসে যখন দোল খায় কাশফুল দেখে মন ভরে ওঠে আনন্দে। এ যেন এক মনোমুগ্ধকর সৃষ্টিকর্তার পরম দান। তখন মুগ্ধ হয়ে কবি রবিঠাকুরের সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠতে মন চায়- 'তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে, এসো গন্ধে বরণে এসো গানে, তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।' হোক না করোনাকাল। শরতের এই রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে।"
নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যে কাশবনের বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। কাশফুলের জাত ভাইয়ের নাম কুশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুরাণ-এ কুশের স্থান খুব উঁচুতে। সাহিত্যে কাশফুলের কথা নানাভাবে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক কাহিনী অবলম্বন করে শাপমোচন নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন।
কাশফুলের ইংরেজী নাম Kans Grass ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক নাম – Saccharum Sportaneum। এটি ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। কাশফুলের মঞ্জুরী দন্ড ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্ব হয়ে থাকে, বীজে সুক্ষ্ম সাদা লুম থাকে। কাশ উদ্ভিদ প্রজাতির, উচ্চতায় তিন মিটার থেকে পনের মিটার লম্বা হয়ে থাকে। আর এর শেকড় গুচ্ছমূল থাকে। পাতা রুক্ষ ও সোজা। পালকের মতো নরম এর সাদা সাদা ফুল। কাশফুল শুভ্রতার অর্থেও ভয় দূর করে শান্তি বার্তা বয়ে আনে। আর এ জন্যই শুভ কাজে ব্যবহার করা হয় কাশফুলের পাতা বা ফুল ৷
লেখক : কবি ও সাংবাদিক।