আমেরিকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হ্যারিসের অনুষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়ায় মুসলিম ডেমোক্র্যাটের মামলা নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন হবিগঞ্জে ব্যারিস্টার সুমনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ ভারত থেকে ৫০ হাজার টন চাল কিনছে সরকার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া ৪ টি বাড়িতে হামলার পেছনে দক্ষিণ দক্ষিণ আমেরিকান গ্যাং প্রস্তাব পাস : ডেট্রয়েটে গাঁজা এবং ই-সিগারেটে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হচ্ছে মিশিগান মুসলিম গ্রুপকে হুমকিতে দোষী সাব্যস্ত ফ্লোরিডার বাসিন্দা ডেট্রয়েটে শিশু ও গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য বিনামূল্যে রাইডস টু কেয়ার প্রোগ্রাম একাত্তরের অপরাধ প্রমাণিত হলে ক্ষমা চাইব: জামায়াত আমির ওরিয়ন টাউনশিপে বিস্ফোরণে কন্ডো ভবন বিধ্বস্ত, নিখোঁজ ২ আজ রাতে মিশিগানে মৌসুমের প্রথম তুষারপাতের সম্ভাবনা প্রায় ২.৬ মিলিয়ন মিশিগানের বাসিন্দা থ্যাঙ্কসগিভিং ডেতে ভ্রমণ করবেন হাসিনা ইস্যুতে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিলেন ড. ইউনূস সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২, অধ্যাদেশ জারি মহাখালীতে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের রেল ও সড়ক অবরোধ ডেট্রয়েটের একটি পরিত্যক্ত স্কুলকে কমিউনিটি সেন্টারে রূপান্তরে পরিকল্পনা  শেখ হাসিনাকে ভারতেই মরতে হবে : পিনাকী ভট্টাচার্য মিশিগান হাউসে দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্বেষমূলক অপরাধের কয়েকটি বিল অনুমোদন ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা অল্প, কিন্তু প্রচার সম্পূর্ণ অতিরঞ্জিত : ড:  মুহাম্মদ ইউনূস

নারীদের উত্তরাধিকার

  • আপলোড সময় : ১৩-১০-২০২৩ ০২:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৩-১০-২০২৩ ০২:২৫:১৭ পূর্বাহ্ন
নারীদের উত্তরাধিকার
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর : নারীকে ছোটবেলা থেকেই অবলা বলা হয়ে থাকে। অবলা বলে বলে নারীর মনকে বালিকা বয়স থেকেই দুর্বল করে তোলা হয়। ভাই-বোন একত্রে বড় হয়। কিন্তু ভাইকে পরিবারে সবসময়ই প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। তাই ছোট ভাই বড়বোনকে শাসনের অধিকারও রাখে। এটাকে বাড়ীর গুরুজনেরা সমর্থন করেন। এতে করে ভাই ছোটবেলা থেকেই ভাবে আমি সব কিছুর উপরে। 
এখন আসা যাক হিন্দু ধর্মের বিষয়। হিন্দু ধর্মে হিন্দু পুরোহিতরা নারীকে ধাবিয়ে রাখার জন্য নানা নিয়ম কানুন তৈরী করে শাস্ত্রীয় বিধান বলে প্রচার করে। তারাই ছিল এ সবের প্রবক্তা। সতীদাহ প্রথা ছিল কত নির্মম। স্বামীর মৃতদেহের সাথে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হতো ৷ এখন মনে হয় একজন পুরুষের জন্যই তার জন্ম হয়েছিল। যাক তৎকালীন সময়ের হিন্দু কিছু কিছু জ্ঞানীলোক ও বৃটিশদের সরাসরি হস্তক্ষেপে বৃটিশ পার্লামেন্টে এর বিরুদ্ধে আইন পাশ হয়। এই প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। তারপর বিধবা বিবাহ। কখনও কখনও একজন বয়স্ক বিপত্নীক লোকের সাথে বালিকা/কিশোরীকে বিয়ে দেয়া হতো। এই বৃদ্ধ লোকটা মেয়েটার পরিনত বয়সে মারা যেত। মেয়েটার চুল ন্যাড়া করে দেয়া হতো। সারাজীবন সাদা শাড়ী পরা এবং তাকে নিরামিষ খেয়ে জীবন কাটাতে হতো (আমি স্বচক্ষে ছোটবেলায় আমার গ্রামের বাড়ীতে এ চিত্র দেখেছি)। এ ছাড়া রোগে কোন স্বামী মারা গেলে তার ক্ষেত্রে এ নিয়মই প্রযোজ্য ছিল। বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের  জন্য প্রথমে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর আন্দোলন শুরু করেন। পরে রানী রাসমনি,  রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ও সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তি শরীক হন।ব্রাহ্মণ সমাজ, তৎকালীন রাজা ও জমিদারদের বহু বাধা বিপত্তির মুখে বিষয়টি ইংরেজ লাটদের দৃষ্টিগোচর হয়। পরবর্তীতে বৃটিশ পার্লামেন্টে আইনরূপে স্বীকৃতি লাভ করে। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর প্রমুখ তাদের ছেলেদের বিধবার সাথে বিয়ে দিয়ে সমাজের কঠোর নিয়মের পরিসমাপ্তি ঘটান। 
হিন্দু ধর্মে তৎকালীন সময়ে দশ রকম বিয়ে চালু ছিল। এখনও চালু আছে। বিয়ের সময় মেয়েকে যৌতুক দেয়া বাধ্যতামুলক। মেয়েকে গোত্র ছিন্ন করে বিয়ে দেয়া হত। বিয়ে পর বিদায়ের সময় মেয়ের হাতে চাল দেয়া হতো। মা শাড়ীর আচল পাতেন নববধু কনে তিন মুটো চাল মাথার উপর দিয়ে মায়ের আচলে দিয়ে বলেন সারাজীবনের ঋণ শোধ করে গেলাম। এটাও ব্রাহ্মণদের তৈরী নিয়ম। ছোটবেলা থেকেই হিন্দু মেয়েদের ধারণা দেয়া হতো স্বামী দেবতা। সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বামীর পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রনাম ও পা ধোয়া পানি খাওয়া ছিল একটা মেয়ের প্রথম কাজ ৷ এভাবে একটা মেয়ের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটতোনা। পরগাছা হয়ে বেঁচে থাকা তাদের ধাতস্ত করা হতো। 
হিন্দু ব্রাহ্মণদের প্রচলিত শাস্ত্রীয় আইন থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্যই রাজা রামমোহন রায় মানব ধর্ম চালু করেন। পরবর্তীতে তিনি পিতার রাজত্ব হারান। তবে তার ধর্ম ভারত তথা বাংলাদেশেও প্রসার লাভ করে। শিক্ষিত নামী-ধামী ব্যক্তিরাই এ ধর্মের অনুসারী। যা এখনও হিন্দু সমাজে প্রচলিত আছে। 
এখন আসা যাক উত্তরাধিকারের ব্যাপার। ভারত স্বাধীনতার পর ভারতীয় নারীরা আন্দোলন শুরু করে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ সালে সম্ভবতঃ ভারত সংসদে নারীর উত্তরাধিকার আইন পাশ হয়। ভাই-বোন পৈত্রিক/মাত্রিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়ার অধিকার লাভ করে। 
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা পৈত্রিক সম্পত্তির আজও উত্তরাধিকার নয়। বাংলাদেশে মিতক্ষরা ও দায়ভার এই দুইটা আইনের বই আছে। বাংলাদেশে দায়ভার আইনের বই প্রচলিত।  সম্ভবতঃ ১৯২৯, ১৯৩৭, ১৯৪৬ সালে উত্তরাধিকারের ব্যাপারে কিছুটা চর্চা হলেও আলোর মুখ দেখেনি। পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারী নিগৃহীত হয়েই আছে। 
বাংলাদেশে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন গুরুজনেরা হিন্দু, খৃষ্টান ও বৌদ্ধ ঔক্য পরিষদ গঠন করেছেন। ভাল ও প্রসংশনীয় প্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি যে দেশে চারটি ধর্ম বিরাজমান সেখানে মুসলিম ধর্ম বাদ দেয়া হলো কেন? আজ পর্যন্ত কোন নেতা হিন্দু নারীদের উত্তরাধিকারের প্রসংগ নিয়ে কোন আলোচনা করেন নাই। আমার জানা মতে বংশে কোন পুত্র সন্তান না থাকায় সম্পত্তি আইনগত ভাবে কন্যা সন্তানের মালিকানা না থাকায় পিতার সম্পত্তি সরকারী  সম্পত্তি রূপে গণ্য হয়েছে। অনেক নামী-ধামী ব্যক্তিত্বকে দেখেছি শেষ বয়সে মেয়ের আশ্রয়ে থেকেছেন। মেয়ে চাকুরী করে বাবা-মাকে লালন পালন করেছে। মেয়ের কাছে থেকেই মৃত্যুর ঘন্টা বেজেছে। 
বাংলাদেশে হাইকোর্ট, সুপ্রীমকোর্ট, জজকোর্টে বহু হিন্দু নারী আইনজীবি রয়েছেন। প্রশাসন, সংসদ, মন্ত্রী, মানবধিকার কর্মী হিন্দু নারী রয়েছেন। কেউ নিজেদের উত্তরাধিকারের জন্য লড়ছেননা কেন? কি হবে যারা মানুষ সবাই পাশে দাড়াবে। একবার সাহস করেন। পুরুষ প্রধান সমাজ ব্যবস্থায় নারী কম-বেশী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। হিন্দু নারীদের বলছি তার কতকাল বঞ্চিত হবেন। একবার অস্তিত্বের লড়াই করুন। এইতো যুগান্তকারী রায় হলো বিধবা মহিলা কৃষি জমিতে স্বামীর অংশ পাবেন। 
এখন আসা যাক মুসলিম মহিলাদের উত্তরাধিকার নিয়ে। মুসলিম মহিলাদের ব্যাপারে মুসলিম পারিবারিক আইন বাংলাদেশে চালু আছে। যা আয়ূব খান ১৯৬১ সালে কিছুটা সংশোধন ও সংযোজন করে আইন পাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য মুসলিম মহিলাদের যদি স্বামী তালাক দিতেন এবং পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে সমঝোতার লক্ষ্যে মহিলাকে তিনমাস দশদিনের জন্য অন্য পুরুষকে বিয়ে করে সেই পুরুষের সংগে স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস করতে হতো। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর নুতন স্বামী তাকে তালাক দিতেন। তারপর আগের স্বামীর সাথে বিবাহ দেয়া হতো।  পুরুষের ঘৃন্যতম কাজের জন্য অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হতো মহিলাকে। এটা বাতিল হওয়াতে নারী জাতির ইজ্জত রক্ষা পেল। তাছাড়া পুরুষ তিনবার তালাক উচ্চারন করলেই তালাক হয়ে যেত। এখন তিনমাসে তালাক  কার্যকরী হয়। সিটি কর্পোরেশন অফিসে অথবা পারিবারিক আাদালতে তিনমাস পূর্বে নারী বা পুরুষ তিনমাস পূর্বে তালাকনামা পেশ করবে। এই তিনমাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষ তিনবার সমঝোতার লক্ষ্যে উভয় পক্ষের সাথে সমঝোতা বৈঠক করবে। যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তালাক কার্যকরী হবে। নারী অন্ততঃ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেল। 
এখন আসা যাক মুসলিম নারীর উত্তরাধিকার। একজন ভাইয়ের অর্ধেক সম্পত্তির মালিক বোন। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর বেশীরবাগ ভাই বোন সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এমন কি মাকেও বঞ্চিত হতে হয়। মা তার স্বামীর দুই আনা সম্পত্তির মালিক। তাকেও বঞ্চিত করা হয় এবং পুত্র ও বৌদের সাথে নিঃগৃহিত জীবন যাপন করতে বাধ্য করা হয়। সামাজিক অবস্থা ও ভাইদের প্রতিপত্তির কারনে বোনেরা বঞ্চিতই থেকে যায়। মা-বাবা মারা গেলে বাপের বাড়ীতে একবেলা খাওয়াও জুটেনা। এমনকি ভাইয়ের ছেলেও আধিপত্য বিস্তার করে। এ দুঃখ আমরা রাখি কোথায়? প্রসংগতঃ বলতে হয় ইসলামিক আইনে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রী মালিকানা দুইআনা। আর স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর মালিকানা চার আনা। কতবড় বৈষম্য? এ গুলো সংশোধন অতীব জরুরী। 
আরও দুঃখের ব্যাপার কেটারটেকার সরকারের আমলে শুনেছি ছেলেমেয়ে সমান সম্পত্তি পাওয়ার জন্য আইন পাশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্ত কোন কোন উপদেষ্টাদের আপত্তির মুখে পাশ হয়নি। 
এখন আসা যাক কন্যা সন্তান প্রসঙ্গে। যদি কোন দম্পত্তির কন্যা সন্তান থাকে পুত্র সন্তান না থাকে তাহলে এই দম্পতির মৃত্যুর পর কন্যা সন্তান অর্ধেক সম্পত্তির মালিক হবে। বাকী অর্ধেকের মালিক হবে ভাই - বোন। দেশে বহু আলীম উলামা আছেন। যারা সত্যিকারের ইসলামের ধারক ও বাহক। তাদের সমন্বয়ে ইসলামিক আইনের সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া বাঞ্চনীয়। পাকিস্তান আমলে যদি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ূব খান ইসলামিক আইন সংশোধন করতে পেরে ছিলেন এখন বাংলাদেশ আমলে সংশোধন করার উদ্যোগ অতীব জরুরী। খৃস্টান ধর্মে স্বামী/স্ত্রী সমান ভাবে স্থাবর অস্হাবর সম্পত্তির মালিকানা লাভ করে। ছেলেমেয়েও সমানভাবে সম্পত্তির উত্তরাধিকার পায়।  বৌদ্ধ ধর্মে নারীর উত্তারাধিকার হিন্দু আইনের অনুরুপ।
বর্তমান শেখ হাসিনার সরকার নারীর সম্পত্তির বন্টনের ব্যাপারে আইনের পরিবর্তন করতে চেয়েছেন। কিন্তু সাংসদদের অসহযোগিতার কারণে সম্ভবপর হয়ে উঠে নাই। নিজে ধর্ম কর্ম করুক বা নাই করুক। সম্পত্তির ক্ষেত্রে শরীয়া আইন নিয়ে হয়ে কথা বলেন তারা। এমনকি অনেক পিতা নিজের পুত্র সন্তান না থাকলেও নিজের কন্যা সন্তানকে জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি হেবা করে যায় নাই। ফলে বাবার মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়-স্বজন কর্তৃক নানা অবাঞ্চিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আশা করি পুরুষতান্ত্রিক অবস্থার পরিবর্তন হবে সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে। সম্প্রতি ভুমি আইনের পরিবর্তন পরিবর্ধন করা হয়েছে। বাস্তবায়নের প্রতীক্ষায় আছি।

 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

নতুন সিইসি সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন