হবিগঞ্জ, ৩ ফেব্রুয়ারি : হবিগঞ্জশহরের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যবর্ধনের সাথে পুরাতন খোয়াই নদী একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নদীটিকে অব্যাহতভাবে দখল করার কারণে এর শেষ চিহ্ন মুছে যেতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে ভূমি দখলদারীদের অবৈধ দখল, ভরাট ও দূষণের কারণে পুরাতন খোয়াই নদীর অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। বৃষ্টির পানির প্রধান আঁধার পুরাতন খোয়াই নদী ক্রমাগত ভরাট ও অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে বর্তমানে অল্প বৃষ্টিপাতের ফলে বর্ষা মৌসুমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতাসহ কৃত্রিম বন্যায় রূপ নেয়। অনেক বছর ধরে চলে আসা এসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত মানববন্ধন ও পথসভায় বক্তারা একথা বলেন।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব এর সামনে গতকাল ২ ফেব্রুয়ারি ( শুক্রবার) বেলা ১১ টায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ ইকরামুল ওয়াদুদ, হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক জাহান আরা খাতুন, দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার সম্পাদক হারুনুর রশিদ চৌধুরী, দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস পত্রিকা সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পাবেল খান চৌধুরী, শিশু সংগঠক বাদল রায়, রূপান্তর সিলেট বিভাগের ক্লাসটার সমন্বয়কারি হাসান তারেক।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল শুরুতে সূচনা বক্তব্যে হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদীসহ অন্যান্য নদ-নদী ও জলাশয় গুলোর বর্তমানচিত্র তুলে ধরেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, বাপা হবিগঞ্জের যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকী হারুন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান এর সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন রুমি, কেন্দ্রীয় সদস্য ও খোয়াই থিয়েটার এর সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন খা, নাট্য সংগঠক বাবুল মল্লিক, সাংবাদিক আনিসুজ্জামান, পরিবেশকর্মী আব্দুল কাইয়ুম, ডা: বাহার উদ্দিন, মহিউদ্দন আহমেদ রিপন, সংস্কৃতিকর্মী বন্ধু মঙ্গল রায়, এডভোকেট শায়লা খান, জয়িতা চাঁদ সুলতানা চৌধুরী, মহিলা মেম্বার শামসুন্নাহার, মিতা রানী সাহা, গৌরাঙ্গ পাল, মো: ফারুক আহমেদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ওয়াদুদ বলেন, ২০০৬ সাল থেকে বাপা এবং নাগরিক সমাজ পুরাতন খোয়াই নদীটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করে আসছে। ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রশাসন নদী দখলমুক্ত কাজ শুরু করে। মাছুলিয়া থেকে উচ্ছেদ অভিযান সদর হাসপাতাল পর্যন্ত চলে। এই অংশে প্রায় এক কিলোমিটার নদীর উপর থেকে প্রায় ৪ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসককে বদলি হওয়ার কারণে উচ্ছেদ অভিযান ভাটা পড়ে এবং একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই উচ্ছেদকৃত অংশ পুনরায় দখলের আওতায় চলে গেছে। জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করার ব্যাপারে!
তোফাজ্জল সোহেল বলেন, এই শহরের ওয়াটার রিটেনশন পন্ড বা বারিপাত অঞ্চল হচ্ছে পুরাতন খোয়াই নদী, পুকুর, জলাশয় ও বাইপাস সড়কের খাল। পুরাতন খোয়াই নদীর অধিকাংশ সরকারি -বেসরকারি স্থাপনা ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। যেটুকু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে সেটুকুতেও ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কচু গাছ, কচুরিপানায় ভরে আছে। এছাড়া পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়গুলো দখল, ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে কয়েক বছর ধরে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হচ্ছে অহরহ। ঘর বাড়িতে ঢুকছে বৃষ্টির পানি। জনগণকে ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত পানির সঙ্গে বসবাস করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতার শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে হবিগঞ্জ।
তিনি আরো বলেন, কলকারখানার মাধ্যমে এই অঞ্চলের বাতাস দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। হাওর অঞ্চলের জলজ প্রাণী, দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। সুতাং নদীসহ অন্যান্য খাল-বিলে নিক্ষিপ্ত বর্জ্য নদী এবং খালের তলদেশে স্তর পড়ে গেছে। মেঘনা হয়ে সারাদেশে বিস্তৃত হচ্ছে দূষণ।
অসহনীয় দুর্গন্ধ এবং দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এছাড়া দিন দিন ক্রমাবনতি কারণে চরম প্রতিকুল অবস্থায় রয়েছে জলাভুমির উপর নির্ভরশীল উদ্ভিদ ও প্রানিকুল। আমাদের নদনদী, খাল-বিল, হাওর- বাওর, জলাশয়, পরিবেশ- প্রতিবেশ রক্ষা করলে আমাদের নিজেদেরকেই রক্ষা করা হবে। রক্ষা পাবে আমাদের সভ্যতা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan