ওয়ারেন, ১০ মার্চ : কেউ হয়তো অফিসে যাওয়ার জন্য ঘড়িতে সকাল সাতটার অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছেন। সাতটার সময়ই অ্যালার্ম বেজে উঠলো। কারণ আপনার ঘড়িতে সাতটাই বাজে তো। তবে বাইরে এসে দেখলেন না এখন সকাল আটটা বাজে। আপনার কপালে ভাঁজ। অফিসে দেরিতো সহ্য করা হবে না। চাকরিটা বুঝি গেল রে। তবে ভুলটা কিন্তু আপনার নয়। ভুলটা কারোই নয়, কেবল আপনার সচেতনতার অভাব। পাঠকককে সচেতন করতেই এই প্রতিবেদন।
গেলকাল শনিবার ৯মার্চ দিবাগত রাত ২ টায় ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে রাত ৩ টা করা হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় শনিবার দিবাগত রাতে মার্কিনীদের এক ঘণ্টা কম ঘুমাতে হবে। মার্চের দ্বিতীয় রবিবার এই কাজটি করা হয় যাকে বলা হয় ডে লাইট সেভিং টাইম বা ডিএসটি। অর্থাৎ মিশিগানের ডেট্রয়েটবাসীরা সকাল সাতটা ৫২ মিনিটের আগে সূর্যের আলো দেখতে পারবেন না এবং রবিবার সূর্যাস্ত দেখতে প্রায় সাতটা ৩৪ মিনিট লাগবে।
আইফোন বা অন্য কোনো ধরনের স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে সময় বদলে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে কোনো কোনো ঘড়ির ক্ষেত্রে পরিবর্তিত সময় মিলিয়ে নিতে হবে। নতুন এই সময়সূচি চালুর ফলে দিন হবে দীর্ঘ। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে মার্চে এবং নভেম্বরে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সিনেটে এটা স্থায়ী করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা স্থগিতই আছে।
ডে লাইট সেভিং টাইম কী
মার্চের দ্বিতীয় রবিবার এবং নভেম্বরের প্রথম রবিবার ডে লাইট সেভিং টাইম শুরু হয়। এটা হচ্ছে সূর্যের আলো কাজে লাগানোর রীতি। এই রীতি অনুযায়ী ১০ মার্চ রোববার থেকে মিশিগানের সময় রাত ২টায় ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে ৩টা করে দিতে হবে। একে স্প্রিং ফরোয়ার্ড বা সামার টাইম নামেও অভিহিত করা হয়। ৩ নভেম্বর রবিবার ভোর রাতে ঘড়ির কাঁটা আবার এক ঘণ্টা পিছিয়ে স্ট্যান্ডার্ড টাইমটেবল শুরু হবে। ১৯১৮ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন স্ট্যান্ডার্ড টাইম অ্যাক্ট বিলে স্বাক্ষর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই সিদ্ধান্ত কাজে লাগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসে ডে লাইট সেভিং টাইম নিয়ে বিল পাস হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের জনগণ ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে বা পিছিয়ে না নেয়ার পক্ষে ইতোমধ্যে দরখাস্ত দিয়েছে। অন্যদিকে আরিজোনা, হাওয়াই, পর্টোরিকো, গুয়াম ও ভার্জিন আইল্যান্ড এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত নয়।
ইতিহাসের কথা
প্রায় ২৪০ বছর আগের কথা। মার্কিন পলিম্যাথ তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা-জনক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন সর্বপ্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন এই বিশেষ ব্যবস্থাটির। দূরদর্শী ফ্র্যাঙ্কলিন হিসেব কষে দেখিয়েছিলেন, শুধুমাত্র গ্রীষ্মের দিনে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার জন্যই কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয় রাষ্ট্র। কমে যায় দেশের উৎপাদনশীলতা। একইভাবে শীতে দ্রুত ঘুম থেকে ওঠার কারণে খরচ করা হয় বেশি মোমবাতি। সেই বাড়তি খরচকেও বহন করতে হয় যে-কোনো দেশের প্রশাসনকে। আর সেই কারণেই সূর্যোদয়ের সময়ের ওপর নির্ভর করেই, ঋতুমাফিক বদলে ফেলা উচিত কোনো দেশের টাইম জোন।
গণিত, ব্যবহারিক প্রয়োগের উদাহরণ এবং কৌতুকে মোড়ে ফ্র্যাঙ্কলিনের এই প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছিল তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম পত্রিকা ‘দ্য জার্নাল অফ প্যারিস’-এ। যুক্তরাষ্ট্রেও সাড়া ফেলে দিয়েছিল বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিনের এই প্রস্তাব। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নীতি লাগু হতে সময় লেগে যায় প্রায় একশো বছর। ১৮৯৫ সাল। নিউজিল্যান্ডের জ্যোতির্বিদ জর্জ হাডসন ফের সরব হন ডিএসটি-র প্রচলন নিয়ে। তারপরই প্রথমে ব্রিটেন, পরে অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয় সময়ের বাঁচানোর এই আশ্চর্য কৌশল।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan