চট্টগ্রাম, ৮ এপ্রিল : আজ ২৫শে বৈশাখ বাঙালি জাতির কাছে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্কৃতিক উৎসবের দিন। প্রতিবছর এদিনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলসহ বিশ্ববাসী বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা এবং আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বিচিত্ররূপের সমাবেশে প্রাণের অপূর্বতা নিয়ে তাঁর অনন্য সৃষ্টিসমূহ নিয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হয় বারেবারে। অন্তরের সুব্যপ্ত তাগিদে আবহমান কালের মানুষের সান্নিধ্য অনুভব করেছেন তিনি। সবরকম তুচ্ছতা, সংকীর্ণতা এবং সম্প্রদায়গত সীমাবদ্ধতার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আজীবন ব্রতী ছিলেন অনির্বাণ প্রদীপ জ্বালানোর সাধনায়। রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার শক্তিকে প্রমাণ করেছেন। দ্বীপের চারদিকে যেমন থাকে অথৈজল বাঙ্গালির চারদিকে তেমনই রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছিলেন ধ্যানস্থ, আত্মস্থ, চেতনায় গভীর মগ্ন। কার ধ্যান করতেন তিনি? শূন্যতার? অসীমের? সে শূন্যতাও ছিল বাঙ্গময়, রূপময়। নিরুদ্দেশ সৌন্দর্যের উপসাক ছিলেন তিনি। নির্ঝরের মতো চলছে লেখা, গানও চলছে ফাঁকে ফাঁকে। সুর দেওয়া, নাটকের মহড়া, পড়া এবং পড়ানোও চলছে এরই মধ্যে- এ হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ। কবি, ছোটগল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক, পর্যটক, গায়ক, সুরস্রষ্টা, শিক্ষক এ মানুষটির তুলনা আমরা আর খুঁজে পাই না। নিস্তব্ধতার সংগীত সৃষ্টি হয় রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষের জন্যেই। অপরূপের গর্ভে জন্মায় রূপ। আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ দাঁড়িয়ে আছেন এক অনড় মহীরূহের মতো। রবীন্দ্রনাথ পার্থিব দেহ ছেড়েছেন কিন্তু আজও কতভাবে বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে বেঁচে আছেন। কত স্মরণে, সৃজনশীলতায়, মননে, উচ্চারণে এত জীবন্ত আর কাউকে ভাবা যায় না। রবীন্দ্র অনুধ্যান ও রবীন্দ্র জীবন দর্শন বিশ্লেষণের জন্যে আজও সারস্বত সাধনা অবিরত চলছে। এ এক সুস্থ অন্বেষণ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমস্ত অর্জনের মধ্যে একটি হল শান্তিনিকেতন। শান্তিনিকেতনই হচ্ছে জীবন্ত রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের আর একটি অর্জন "গীতাঞ্জলি" নামে কবিতার সংকলনের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ। আমার মনে হয় আরও কয়েকবার পেতে পারতেন। অন্তত গল্পগুচ্ছের জন্যে আরও একবার তো বটেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন তাঁর অমূল্য সব সম্পদ গুলি। তাঁর গান, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, শ্লোক, শৈলী, সেই সাথে কথ্য ভাষার ব্যবহার যা জীবনে চলার পথে প্রতিমুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন পড়ে। রবীন্দ্র অনুধ্যান ও রবীন্দ্র জীবন দর্শন বিশ্লেষণের জন্যে আজও সারস্বত সাধনা অবিরত চলছে। এ এক সুস্থ অন্বেষণ। আমরা যদি রবীন্দ্রনাথের উজ্জ্বল সৃষ্টিশীলতা ও মননশীলতার প্রদীপ জ্বালাতে পারি, তাহলে সামাজিক তমসা অনেকটা অপসারিত করতে পারব। ১৬৩তম জন্মজয়ন্তীর এই শুভ দিনে অঞ্জলি লহ মোর হে প্রিয় কবিগুরু।।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan