আমেরিকা , শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ , ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ভার্জিনিয়ায় মুসলিম নারীকে লাঞ্ছনার অভিযোগে নর্থভিলের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার নির্বাচনী জালিয়াতি : বিচারের মুখে হ্যামট্রাম্যাক কাউন্সিলম্যান মোহাম্মদ হাসান  ইঙ্গাম কাউন্টিতে ছোট বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ৩ শুক্রবার সংসদে জুলাই সনদ সই, ড্রোন ওড়াতে নিষেধাজ্ঞা মিশিগান আসছেন জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান অবার্ন হিলসে সড়ক দুর্ঘটনায় ডেট্রয়েটের এক নারী নিহত মিশিগান রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগে প্রাক্তন কর্মকর্তার মামলা ক্যান্টন টাউনশিপে ছুরিকাঘাতে আহত ৩ : আত্মীয় গ্রেপ্তার সারা মিশিগানে ‘আরএক্স কিডস’ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হচ্ছে পুলিশ স্টেশন ‘উড়িয়ে দেওয়ার’ হুমকি : অভিযুক্ত লিভোনিয়ার বাসিন্দা মিশিগানে বাড়িতে গাড়ির ধাক্কা, বিছানা থেকে  উঠোনে ছিটকে পড়ে শিশু আহত পোর্ট হুরনে পেট্রোল পাম্পে গুলিবর্ষণে নিহত ১, নারী গ্রেপ্তার হবিগঞ্জে শিবির নেতা হত্যায় আমৃত্যু শফিকুল ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন মিশিগানে এক মঞ্চে বই, শিল্প ও সংগীতের মিলনমেলা ভুল পথে গাড়ি চালিয়ে হত্যায় জ্যাকসনের ব্যক্তির দীর্ঘ সাজা ট্রয় ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত সাবেক টেলার মেডিকেড প্রতারণায় অভিযুক্ত তিন মেট্রো ডেট্রয়েটবাসী ট্রাম্প নয়, শান্তিতে নোবেল পেলেন  ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা  ম্যাকডোনাল্ডস ম্যানেজারকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত মহিলা বিচার যোগ্য ঘোষণা ‘দ্য মিউল’-এর অনুপ্রেরণা সেই মাদকচক্রের সহযোগী ফের গ্রেপ্তার

ভ্রমণবৃত্তান্ত : হ্যামট্রাম্যাক থেকে ম্যাকিনাক আইল্যান্ড

  • আপলোড সময় : ১৫-০৭-২০২৪ ১০:৪৪:৩৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৭-২০২৪ ১২:১৬:২৩ পূর্বাহ্ন
ভ্রমণবৃত্তান্ত : হ্যামট্রাম্যাক থেকে ম্যাকিনাক আইল্যান্ড
আমরা ২০২২ সালের ২২ আগস্ট সকালে হ্যামট্রাম্যাক শহর থেকে ম্যাকিনাক আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। গাড়িতে যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য ছিল সত্যি মনোমুগ্ধকর। শহুরে কোলাহল থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গাড়ি চালানোর পর, নগরীর সুউচ্চ ভবনগুলি পেছনে ফেলে উপকণ্ঠের সবুজাভ প্রকৃতির দেখা মিলল। মিশিগান রাজ্যের এই অংশের রাস্তায় চলতে চলতে দেখতে পাবেন বিস্তীর্ণ মাঠ এবং খামারবাড়ি। গ্রীষ্মকালে হলুদ রঙের সূর্যমুখী এবং সোনালী গমের ক্ষেত দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। শীতকালে বরফে ঢাকা এই ক্ষেতগুলো আরেক রকম সৌন্দর্য উপহার দেয়। মাঝেমধ্যে রাস্তার পাশে দেখতে পাবেন ছোট ছোট শহর এবং গ্রাম, যেগুলি তাদের নিজস্ব ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ছোঁয়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি শহরের কেন্দ্রে আছে ছোট্ট চার্চ, স্থানীয় দোকানপাট এবং ক্যাফে, যেখানে থামলে বোঝা যাবে স্থানীয়দের আতিথেয়তা।


“ইন্টারস্টেট ৭৫” (I-75) রাস্তার দুই পাশে বিশাল বিশাল ওক এবং ম্যাপল গাছের সারি যেন সবুজ সুড়ঙ্গ, তার মধ্য দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে বিরামহীন, গন্তব্য ম্যাকিনাক সিটি। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন তা হল ফ্রিওয়ে থেকে এক্সিট। জনমানব শূন্য এলাকা হওয়ার সুবাদে এখানে এক্সিট খুব কম, তাই আপনার গাড়িতে পর্যাপ্ত জ্বালানী, খাবার ও পানির মজুদ রাখবেন। আর কিছুদিন পরেই শরত ঋতু (Fall Season) শুরু হবে। শরতের সময় যখন পাতা রঙ বদলায়, এই গাছগুলিতে তখন রঙের মেলা শুরু হয়। লাল, কমলা, হলুদ আর সবুজ পাতা মিলেমিশে এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। মিশিগানের ফল কালার খুবই বিখ্যাত ও নয়নাভিরাম, বিশেষ করে আপ-নর্থে বা আপার পেনিনসুলায়। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব অন্য একদিন।

যাত্রার এক পর্যায়ে হ্রদ এবং নদীর তীরও চোখে পড়ল। বিশেষ করে, হিরন হ্রদের মনোরম দৃশ্য ছিল যাত্রাপথের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ, যেন স্বচ্ছ জলের সাথে নীল আকাশের মিতালি।  রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে হরিণের পাল দেখতে পেলাম, যারা নির্ভয়ে ঘাস চিবিয়ে চলেছে। আরও দেখতে পেলাম ছোট ছোট পাখির ঝাঁক, যারা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। 
মিশিগানের এই রাস্তায় ভ্রমণ যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক অভূতপূর্ব সংযোগ। প্রায় ৪ ঘন্টার যাত্রা শেষে আমরা যখন ম্যাকিনাক সিটিতে পৌঁছলাম, তখন মনে হল একটি চমৎকার প্রাকৃতিক কাব্যের মধ্য দিয়ে আবারও এক শহরে এসে পৌঁছেছি।

ম্যাকিনাক সিটি, যা ম্যাকিনাও সিটি নামেও পরিচিত, উত্তর মিশিগানের একটি মনোমুগ্ধকর শহর। ম্যাকিনাক সিটিতে পৌঁছে প্রথমেই আমরা গেলাম ম্যাকিনাক ব্রিজ দেখতে। ৪.৯৯৫ মাইল দৈর্ঘ্যের ম্যাকিনাক ব্রিজ আমেরিকার একটি আইকনিক ব্রিজ যা মিশিগানের আপার পেনিনসুলাকে (আপ-নর্থ) মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত করে রেখেছে, এবং লেক হিরন ও মিশিগান লেক কে বিভক্ত করে রেখেছে। লেক হিরন ও মিশিগান লেক গ্রেট লেকসের অন্তর্গত দুটি লেকস, গ্রেট লেকস ওয়াটার সিস্টেম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিঠা পানির আঁধার, পৃথিবীর মোট মিঠা পানির ২০ শতাংশই সঞ্চিত রয়েছে এই গ্রেট লেকস এ।
ম্যাকিনাক ব্রিজের ঐ পারেই রয়েছে St. Ignace Township। ছবির মত সুন্দর একটি ছিমছাম শহর, যাকে আপার পেনিনসুলার প্রবেশদ্বারও বলা হয়। কিছু সময় St. Ignace Township ঘুরে এবং ব্রিজ ভিউ পার্ক থেকে ম্যাকিনাক ব্রিজের সুন্দর্য অবলোকন করে আমরা আবারও ফিরে এলাম ম্যাকিনাক সিটিতে। এবারের যাত্রা ম্যাকিনাক আইল্যান্ড। 

ম্যাকিনাক সিটি থেকে ৯ মাইলের নৌপথে যেতে হবে ম্যাকিনাক আইল্যান্ডে। ম্যাকিনাক আইল্যান্ডকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়াসে আমেরিকান সরকার কখনই চেষ্টাও করেনি ব্রিজ তৈরীর কারণ ম্যাকিনাক আইল্যান্ডে ইঞ্জিনচালিত যান চলাচল সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। এ নিয়ে আমরা বিস্তর আলোচনা করব পরবর্তী পর্বে। 


ফেরিই একমাত্র উপায় ম্যাকিনাক আইল্যান্ড পৌঁছার। ম্যাকিনাক আইল্যান্ড যাওয়ার জন্য দুটি জনপ্রিয় ফেরি লাইন রয়েছে, একটি স্টার লাইন ফেরি (Star line ferry) অন্যটি শেপ্লার’স ফেরি (Shepler’s ferry)। আমরা অনলাইনে অনেক ঘাটাঘাটি করে আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্টার লাইন ফেরি দিয়েই পৌঁছব স্বপ্নের ম্যাকিনাক আইল্যান্ডে। স্টার লাইন ফেরিটি খুবই দ্রুতগামী এবং এর পিছন দিকে ফোয়ারার মত জলরাশি অনেক উপরে উঠে আবার হ্রদের জলে পতিত হয়, যা এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। রাস্তায় হালকা কিছু খেয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম স্টার লাইন ফেরির পার্কিং লটে। যেহেতু গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না তাই গাড়িটি এই পার্কিং লটেই সযত্নে পার্কিং করে নিলাম ২ দিনের জন্য এবং প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র চার চাকার একটি হাতে টানা ওয়াগনে ভর্তি করে নিলাম। আমার দুই মেয়ে এবং আমার বন্ধুর দুই মেয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়ে গেল দূর থেকে ম্যাকিনাক আইল্যান্ড দেখে। টিকিট কেটে যথাশীঘ্র আমরা চলে গেলাম ফেরির লাইনে, প্রতি ২০ মিনিট অন্তর অন্তর ফেরি আসে। আমরা দূর থেকে দেখছিলাম ছবির মত সুন্দর ম্যাকিনাক আইল্যান্ড!, ম্যাকিনাক আইল্যান্ডের নামকরণ নিয়ে কথা বলব পরের পর্বে আপাতত উপভোগ করে নেই তার স্বর্গীয় সৌন্দর্য। 

যথাসময়ে পিছন দিকে বিশাল ফোয়ারা নির্গত করে ঘাটে নোঙর ফেলল আমাদের ফেরি, আমরা সুশৃংখলভাবে কয়েকশত মানুষ জিনিসপত্র নিয়ে উঠে গেলাম ফেরিতে। আমার বড় মেয়ের আবদার ছিল একদম উপরে তৃতীয় তলার ডেকে চড়ে আমরা যাব, তাই আমরা সরাসরি চলে গেলাম উপরে, যেখান থেকেই আসলে সবচেয়ে সুন্দর দেখা যাচ্ছিল প্রকৃতি। 
পিছনে ম্যাকিনাক সিটি, বামে ম্যাকিনাক ব্রিজ রেখে আমাদের ফেরি উন্মত্ত ঢেউ অগ্রাহ্য করে এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, গন্তব্য ম্যাকিনাক আইল্যান্ড। 
ফেরিটি যখন দ্বীপের কাছাকাছি পৌঁছালো, তখন বুঝতে পারলাম যে কোনো শব্দ বা ছবি সত্যিই এর মহিমা বর্ণনা করার জন্য যথেষ্ট নয়। লেক হিরনের স্ফটিক-স্বচ্ছ জল গ্রীষ্মের সূর্যের নিচে ঝিকিমিকি করছিল এবং দ্বীপটি সামনের দিকে প্রসারিত হয়ে একটি সবুজ রত্নের মতো দেখাচ্ছিল, যার চমৎকার স্কাইলাইনটি গ্র্যান্ড হোটেলের বিশাল আকার দ্বারা আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল।

বাকিটুকু আগামী পর্বে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
শাবিপ্রবিতে লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

শাবিপ্রবিতে লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু