ঢাকা, ২১ জুলাই : কোটা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে, কোটার নতুন বিন্যাস হবে - মেধা ৯৩%; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান ৫%, প্রতিবন্ধী ১%, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী ১%। সরকারকে ৩ মাসের মধ্যে নতুন কোটা ব্যবস্থার গেজেট জারির নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
কারফিউয়ের মধ্যেই রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে কোটা নিয়ে শুনানি শুরু হয় । সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পর দুপুর দেড়টায় রায় দেয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার জন্য পাঁচজন আইনজীবীকে অনুমতি দেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অংশ নেয়া নয়জন আইনজীবীর মধ্যে আটজনই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করার পক্ষে মত দেন। একজন আইনজীবী কোটা সংস্কারের পক্ষে মতামত দেন।
শুনানির পর বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিনউদ্দীন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায় বেআইনি ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে পাঁচ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। অন্যান্য শ্রেণির জন্য থাকবে আরও দুই শতাংশ সংরক্ষণ।’
রায়ের পর কোটার পক্ষে রিটকারীদের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেছেন, “রায়ে বলা হয়েছে যেহেতু বিষয়টি পলিসি ম্যাটারতাই নির্বাহী বিভাগ পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংস্কার করতে পারবে। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে গেজেট জারি করে আপিল বিভাগকে জানাতে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন”।
শাহ মঞ্জুরুল হক আরো বলেন, আদালত আশা প্রকাশ করেছেন যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এখন যেন ক্লাসে ফিরে যায় এবং আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করে। একই সঙ্গে অভিভাবকদের বলা হয়েছে, অভিভাবকরা যেন শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে ফিরে যেতে বলে।
তিনি বলেন,“এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় যেন সবাই মেনে নেন। শিক্ষার্থীরা যেন ঘরে ফিরে যান। তৃতীয় পক্ষ যেন ঘোলা পানিতে আর মাছ শিকার না করেন,” ব্রিফিং এ বলছিলেন মি. হক।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা, মহিলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী- এই পাঁচ শ্রেণির জন্য মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষণ ছিল। ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিট করা হলে চলতি বছরের ৫ জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা ও কোটা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। পরদিন থেকে কোটা ব্যবস্থার বাতিল চেয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে অবশ্য তারা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশ জুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ চলেছে। সহিংসতায় সারা দেশে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে দেশে কার্ফু জারি করেছে সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan