ওয়ারেন, ৮ অক্টোবর : বছরব্যাপী অপেক্ষার পালা শেষ। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। তারপরই দেবীর বোধন ও ষষ্ঠীপূজা। সাথে সাথে পূজোর ঢাকে পড়বে কাঠি। এর মধ্য দিয়ে মিশিগানে শুরু হচ্ছে বাঙালি সনাতন সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর তাই এখানকার বাঙ্গালি সনাতন সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে তাই এখন আনন্দ উচ্ছ্বাস। দেবী দুর্গার আগমনে মাতোয়ারা ভক্তকূল।
দুর্গা শব্দের অর্থ হলো বু্যহ বা আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দু:খ কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধা বিঘ্ন, ভয় দু:খ, শোক, জ্বালা যন্ত্রনা থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামের অন্য একটি অর্থ করেছেন। দু:খের মাধ্যমে যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দু:খ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। হিন্দু পুরান মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকালে বোধন হওয়া সত্বেও শরতেকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে আছে , দেবী গিরিরাজ হিমালয়ের কন্যা ও পর্বতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই তিনি পার্বতী। পরের অধ্যায়ে তিনি হয়ে উঠেন দানব দলনী দশভূজা। দুর্গ নামক দৈত্যকে দমন করে তিনি দুর্গা নাম প্রাপ্ত হন। শরৎকালের এ পূজাকে বলা হয় অকালবোধন। দেবী দুর্গার প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্তকাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা হয় তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। ভগবান রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করতে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। তাই এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবন বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন রামচন্দ্র। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকালবোধন। সনাতন ধর্মবলম্বীদের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।
এদিকে পূজাকে আনন্দ মুখর করে তুলতে মিশিগান জুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। গোটা মিশিগানে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাকঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠবে এখানকার বিভিন্ন পূজামন্ডপ। এবার মিশিগানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে এর মধ্যে মিশিগান শিব মন্দির টেম্পল অব জয়, মিশিগান কালিবাড়ি, ডেট্রয়েট দুর্গা মন্দির, বিচিত্রা, স্বজন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও মিশিগানের ট্রয়, ক্যান্টন, পন্টিয়াক সিটিসহ অন্যান্য সিটিতে অবাঙ্গালি হিন্দুরা মেতে রয়েছে নবরাত্রিতে। মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নয় রাত্রি ধরে মা দুর্গার নয়টি যে পূজো হয় তাকেই নবরাত্রি বলে।
এদিকে পূজাকে ঘিরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও নাচ, গান, আরতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটকের আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরে মন্দিরে বানোনো হচ্ছে তোরণ। করা হয়েছে আলোকসজ্জ্বা । বাহারি সাজে সাজানো হয়েছে মন্দির গুলো। এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবে মিশিগানে বেশ কজন ভারতীয় শিল্পীর আগমন ঘটছে। পূজা জুড়ে তারা মিশিগান মাতাবেন গানে গানে। ইতিমধ্যে স্থানীয় পূজা কমিটিগুলো আগত শিল্পীদের নাম ঘোষণা করেছে। ভারতের জনপ্রিয় এসব শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সৌরেন্দ্র - সৌম্যজিৎ, মন্ময় ও আকাশ, সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস, সাবেরী ভট্টাচার্য, শুচিস্মিতা চক্রবর্তী, সৌরভ দাশ, দ্বীপ চাটার্জি, সঞ্চিতা ভট্টাচার্য্য সহ আরও অনেকে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা।
আর এমন সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়েই আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন। বোধন শেষে ষষ্ঠীপূজা। ষষ্ঠীতে কল্পারম্ভ এবং দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। এর মধ্য দিয়েই শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা। দ্বিতীয় দিন বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) মহাসপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বৃহষ্পতিবার সকালে মহাঅষ্টমীর পূজা। শুক্রবার নবমী পূজা। পরদিন শনিবার সকালে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। রাতে সিদুর খেলা ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিন ব্যাপী এই শারদোৎসব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan