ভার্জিনিয়া, ২০ ডিসেম্বর : গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, প্রতিবেশী দেশের আধিপত্যবাদী চক্রান্ত প্রতিরোধ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক অধিকার, ন্যায় ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে এক এডভোকেসি সভা গত ১৫ ডিসেম্বর রোববার ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্স সিটির ৩০৬০, উইলিয়াম ড্রাইভস্থ এম্পায়ার হোম হেলথ সার্ভিস অডিটোরিয়ামে এক এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশিষ্ট লেখক, কবি ও সংগঠক সামছুদ্দীন মাহমুদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেজর (অবঃ) মনজুরুল হক, ডঃ নজরুল ইসলাম, নওশের আলী, রফিকুল হক, আনিস আহমেদ, শামীম সেলিমুদ্দীন, খুরশিদ সাব্বীর, হাসান চৌধুরী, কবিরুল আলম, কচি খান, স্যাম রিয়া, আকতার হোসেন, মেজর(অবঃ) শাফায়াত আহমাদ, ফাতেমা সিদ্দীক, শায়লা মনজুর, মুশফিকা হক, শার্লিন সেলিম, আবু সেলিমুদ্দীন, তাবাস্সুম রহমান, ডাঃ সাহিনা আকতার, আফসা রহমান প্রমুখ। আলোচকবৃন্দ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি নিরপেক্ষ ও বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
মেজর (অবঃ) মনজুরুল হক তার নাতিদীর্ঘ একটি পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, একটি দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে ফ্যাসীবাদি হাসিনার পতন হয়েছে কিন্তু সুষ্টু পরিকল্পনা ও লোকবলের অভাবে বর্তমান সরকার এ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা। অন্যদিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীচক্রও তৎপর। এ অবস্থায় এ সরকারকে সঠিক কর্মপন্থা প্রণয়ন করার জন্য তিনি বেশ কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ডঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনে তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারেনা, আগামী প্রজন্মের এ শক্তিতে দেশ পরিচালনায় যেকোন সহায়তা করার জন্য এ ফোরাম প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
নওশের আলী বলেন, বর্তমান ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যমত্য হতে হবে। নাহলে দেশে এ আধিপত্যবাদ যেকোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে।
রফিকুল হক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের একটি উদ্যোগের খুবই দরকার। আমরা যারা প্রবাসে বাস করি, আমাদের কন্ঠস্বর তুলে ধরতে হবে।
আনিস আহমেদ বলেন, আমাদের মার্কিন রাজনীতিবিদদের সাথে নিয়ে এ ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনকে এ বিষয়ে সঠিক খবরাখবর প্রদান করতে হবে।
শামীম সেলিমুদ্দীন বলেন, ছাত্র আন্দোলন কেবল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিলনা, এ আন্দোলন ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ সংগ্রাম। এ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
খুরশীদ সাব্বির বলেন, এ প্রজন্ম হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করেছে, তাই ভারতীয় আধিপত্যবাদিদের খেয়াল রাখতে হবে, তারা বাংলাদেশের উপর নজর দিলে কিভাবে তাদের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে হয়।
হাসান চৌধুরী বলেন, এই প্রথম ডিসি মেট্রো এরিয়ার এতো বুদ্ধিজীবি ও প্রফেশনাল লোকজনের সমাগম দেখলাম যারা নিরপেক্ষভাবে বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা করছে। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখতে এ ধরনের একটি ফোরামের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
কচি খান এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের ভালো কাজের সহায়তা ও খারাপ কাজের সমালোচনা করা উচিত।
আকতার হোসেন বলেন, দেশে বর্তমান একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফ্যাসিবাদ গেছে কিন্তু তাদের দোসররা এখনো দেশে বিরাজমান। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
মেজর (অবঃ) শাফায়াত আহমাদ বলেন, দেশ হাসিনা মাফিয়ার হাত থেকে মুক্ত হয়েছে সত্য, কিন্তু পুরাপুরি মুক্ত হয়নি। আমরা যারা প্রবাসে আছি তারা এ সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে যাতে তারা একটি সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনা করতে পারে এবং দেশ প্রয়োজনীয় সকল সংস্কার সম্পাদন করতে পারে।
সামছুদ্দীন মাহমুদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জ্ঞানী গুনিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারাও বিভিন্নভাবে এ সরকারকে সহায়তা করতে পারে। এ ধরনের প্লাটফর্মের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ও ভবিষ্যতে যেকোন গনতান্ত্রিক সরকারের সাথে এ ফোরাম কাজ করবে। ফ্যাসিবাদ, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ ফোরাম সবসময় সক্রিয় থাকবে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের এবং ২৪ এর গনআন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর খুরশীদ সাব্বীর এর পরিচালনায় বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের গান “ও আমার দেশের মাটি” সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয়।
অনুষ্ঠান শেষে স্যাম রিয়ার্স কিচেনের মজাদার খাবার বিশেষ করে চিকেন বিরিয়ানি, পায়েস, রসগোল্লা ও সুরাইয়া’স কিচেনের ভাপা পিঠা দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan