যশোর, ২৭ ডিসেম্বর : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেছেন, ক্ষমতায় যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, দেশে সুশাসন কায়েম করা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা যদি দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করি তাহলে আপনাদের অন্তরের ভালোবাসা চাই। জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যেন আপনাদের পাশে পাই। শুক্রবার সকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়ার পরিচালক মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সহকারী পরিচালক মাওলানা আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, ঝিনাইদহ জেলা আমীর অধ্যাপক আলী আযম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর শহিদুল ইসলাম মুকুল, মাগুরা জেলা আমির এম বি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহিদ আব্দুল্লাহর পিতা আবদুল জব্বার, যশোর জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল আজীজ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাবেক ভিপি আবদুল কাদের, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আরশাদুল আলম, কেশবপুর থানা আমির অধ্যাপক মুক্তার আলী, যশোর শহর আমির অধ্যাপক শামসুজ্জামান, শহর শিবিরের সভাপতি মোস্তফা কামাল, পশ্চিম জেলা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, পূর্ব জেলা সেক্রেটারি আশিকুজ্জামান প্রমুখ।
কর্মী সম্মেলন পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিক, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ও শুরা সদস্য নূর-ই-আলী নূর মামুন। সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী অ্যাড. রোকনুজ্জামান ও তরঙ্গ শিল্পী গোষ্ঠীর শিল্পীরা।
সম্মেলনে সকাল ছয়টা থেকে নেতা-কর্মীরা আসা শুরু করেন। সাড়ে আটটায় কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ শুরু করেন বক্তৃতা। নয়টার মধ্যে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত আছড়ে পড়ে আশপাশের সব রাস্তায়। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে শহর। এ কারণে শহরে সব ধরনের যান চলাচল এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়। বিশাল এই কর্মী সম্মেলনের শৃঙ্খলা দেখে প্রশংসা করেন শহরের মানুষ।
আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত ইসলামী দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পেলে এদেশে চাঁদাবাজির অস্তিত্ব থাকবে না। দখলদারের অস্তিত্ব থাকবে না। ঘুষ থাকবে না। আমরা ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদের প্রশ্রয় দেবো না। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা চাই না। দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? শুধু হাতবদল হয়েছে। এ জন্য তো এতো মানুষ শহিদ হননি। আমরা যেন শহিদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করি। এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহিদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না। ফুটপাত, হাটঘাট, বালুমহাল, জলমহল দখল ও চাঁদাবাজিতে কোন নেতাকর্মী পা দিবেন না।
যশোর জেলা উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন জেলা যশোর। পুরাতন জেলা হিসেবে যশোরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যশোরবাসী ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। পার্ক নেই, মাঠ নেই, জলাকার নেই। উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পা ছুঁয়ে নেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা সব ভুলে যায়। ভাবে পাঁচ বছর পর আবার পা ছুঁয়ে নিলে হয়ে যাবে। মাঝখানে তারা মানুষকে মনে রাখে না।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা যাদেরকে চোর ডাকাত হিসেবে চিনি তাদের সক্ষমতা কতটুকু। কলমের খোঁচায় যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে তারাই বড় চোর-ডাকাত। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক। তিনি বলেন, আমরা সুযোগ পেলে এই দেশটাকে সুশিক্ষা দিয়ে গড়ার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ। শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেটের সাথে যেন কর্ম নিয়ে বের হতে পারে সেই চেষ্টা করব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan