অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশেষ পূজায় পৌরহিত্য করেন মন্দিরের প্রধান প্রিস্ট পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু। পরে একযোগে গীতাপাঠে অংশ নেন মন্দিরের প্রধান প্রিস্ট পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু, আশুতোষ চৌধুরী, স্বদেশ রঞ্জন সরকার, অজিত দাশ, রাখি রঞ্জন রায়, চিন্ময় আচার্য্য, জিতেন গোপ, প্রার্থনা পাল সহ আরও অনেকে। প্রার্থনা সভায় উপস্থিত সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শোভা রানী দাসের জামাতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা।

তিনি বলেন, কেউ কখনও চলে যেতে পারে না। জীবনের সবচেয়ে অনিবার্য সত্য হল মৃত্যু। এখান থেকে কারো নিস্তার নেই, জন্মালে মৃত্যু ঘটবেই। কিন্তু আত্মার কোন মৃত্যু নেই, আমার শ্বাশুড়ী মা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। আমরা এই সময়ের সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে আমাদের নিজস্ব অস্তিত্ব এবং চির পরিচিত জীবন ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু আমাদের এমন জিনিষ আছে, যা চলে যেতে পারেনা। আমাদের প্রজ্ঞা চেতনা বেঁচে থাকে এই পৃথিবীতে। আমাদের শরীরটা চলে যায়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পৃথিবীতে চিরকালের জন্য আমাদের চেতনা আত্মা বেঁচে থাকে। তাই আমার শ্বাশুড়ী মাও মৃত্যুর পরে কোন না কোন জায়গায় বেঁচে আছেন । তিনি বলেন, আমরা ভাবছি উনি চলে গেছেন, কিন্তু উনি চলে যাননি।
শ্বাশুড়ীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমাদের সংসারে বিশেষ করে দিপাদের সংসারে তিনি ছিলেন কেন্দ্রবিন্দু। উনাকে কেন্দ্র করে সমস্ত সংসার-টা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি মাকে কেন্দ্র করে একটি সংসার গড়ে উঠে। ঠিক তেমনি ভাবে উনি জানতেন কোথায় কি হচ্ছে। যদিও মনি হতো উনি কিছু জানেননা, বুঝেন না। আমাদের কাছে যখন আসতেন সব কিছু দেখতেন খুব গভীরভাবে এবং আমাদের সেই ভাবে পরিচালনা করতেন। আমি সেই আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

চিনু মৃধা বলেন, আমার মা সহজ সরল একজন গৃহিনী ছিলেন, তাঁর কোন কমপ্লেইন ছিল না। তিনি সব কিছু পরিচালনা করতে পারতেন, খুবই বুদ্ধিমতি ও সংসারী মহিলা ছিলেন। এই যে আমরা বিদেশে চলে এসেছি, একবারও মা বলেনি যে তোরা বিদেশে থাকিস না, চলে আয়, বললে হয়তো আমরা চলে যেতাম। এই যে আমরা ভাল আছি, সুখে আছি নীরবে নিশ্চিন্তে আছি, সিকিউরড প্লেজে আছি এটা ভেবেই সারাজীবন আমাদের জন্য প্রার্থনা করে গেছেন। এবং আমরাও সেই মূল্য তাকে দেবার চেষ্টা করেছি। আমার মা তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের সকলের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন। তিনি বলেন, আমার মায়ের আত্মার জন্য আপনারা সবাই প্রার্থনা করবেন। তিনি প্রচন্ড ঠান্ডা ও বরফের মধ্যে এই আয়োজনে অংশগ্রহনের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। পরে বিশেষ প্রার্থনা ও নাম সংকীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে দুশতাধিক ভক্ত সমবেত হন। সবশেষে অনুষ্ঠানে আগত দুই শতাধিক ভক্তবৃন্দের মাঝে প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয় দারুণ সুস্বাদু নিরামিষের নানা পদ।

উল্লেখ্য, সাগিনা সিটির বাসিন্দা চিনু মৃধার মা শোভা রানী দাস গত বছরের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় ঢাকার বিক্রমপুরের ষোলঘর গ্রামে তাঁর জড়দেহ ত্যাগ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অনেক আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।