সুনামগঞ্জ, ৭ মার্চ (ঢাকা পোস্ট) :সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জলমহালে ইজারাদারদের অধিকার উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ মাছ লুটে অংশ নিচ্ছে। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। সর্বশেষ দিরাই উপজেলার বেতইর জলমহালে মাছ লুটের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দিরাই উপজেলার বেতইর জলমহালে পলো, টেঁটা ও জালের মাধ্যমে একদল মানুষ গত ৫ মার্চ ভোর থেকে দিনব্যাপী অবৈধভাবে মাছ ধরতে নামে। জলমহালের ইজারাদার কচুয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি লংকেশ্বর দাস থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি ছয়টি গ্রামের ২২ জনের নাম উল্লেখ করেন এবং আরও প্রায় ২ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। মামলায় তিনি দাবি করেন, মাছ লুটের ফলে তার জলমহালে প্রায় ১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে এবং মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করে।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলমহালে অবৈধভাবে মাছ ধরার যে কোনো ঘটনা কঠোরভাবে দমন করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা বেতইর জলমহালসহ অন্যান্য এলাকায় অভিযান চালিয়েছি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ছাড়া, ভরারগাঁও-গোপরাঘাট জলমহালেও জোরপূর্বক মাছ ধরার ঘটনা ঘটেছে, যার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাল্লা, দিরাই, মধ্যনগর ও জামালগঞ্জের প্রায় সব জলমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব জলমহাল থেকে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব আয় করে। কিন্তু বর্তমানে কয়েক হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে ইজারাকৃত জলমহাল থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জলমহালগুলোর ইজারা মূল্য কমে যাবে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে। ফলে দেশের উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হবে। যারা এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তারা নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধেই কাজ করছে।
জেলা প্রশাসক ইজারাদারদের আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, জলমহালে মাছ লুট বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।
সুনামগঞ্জের জলমহাল থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে সরকার। কিন্তু যদি মাছ লুটের ঘটনা এভাবে চলতে থাকে, তাহলে সরকার রাজস্ব হারাবে এবং জলমহালগুলোর ইজারা প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হবে। ফলে মৎস্য খাতের টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, জলমহাল রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। স্থানীয় জনগণকে এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে, গ্রেপ্তারকৃতদের বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan