প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পরপরই উত্তর গেটের সিঁড়িতে অবস্থান নেওয়া হিযবুত তাহ্রীরের কর্মীরা কালিমা খচিত ব্যানার উঁচিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। “মার্চ ফর খিলাফা” কর্মসূচির অংশ হিসেবে কয়েকশো হিযবুত তাহরীরের সমর্থক পল্টনমুখী মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। কিন্তু জনবল কম থাকায় তারা সফল হয়নি। মিছিলটি প্রথমে নির্বিঘ্নে কিছুক্ষণ চলে। পরে পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পুলিশ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে, হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা পাল্টা ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে মিছিলকারীরা এক দফা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা আবারও একত্রিত হয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হিযবুত তাহরীরের কর্মীদের ইট-পাটকেল ছুঁড়তে দেখা যায়। কিছু সময়ের জন্য মিছিলটি আরও বিশৃঙ্খলার দিকে চলে গেলে পুলিশকে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে দেখা যায়। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটাও করা হয়। এ সময় পুলিশ সেনা সদস্যরা ১৫-২০ জনকে আটক করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিকভাবে আটককৃতদের মধ্যে আবু শোয়াইব, মাশফিউর রহমান, আশফাকসহ কয়েকজনের নাম জানা গেলেও বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ছত্রভঙ্গ হিযবুত তাহ্রীর সদস্যরা বিভিন্ন গলিতে প্রবেশ করলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেন। পুলিশের বাধার প্রথম দিকে তারা সড়কে অবস্থান করলেও পরে আর কাউকে সড়কে দেখা যায়নি। পরে পুরানা পল্টন থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।
পুলিশের রমনা বিভাগের পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, রায়তুল মোকাররম এলাকায় হিযবুত তাহ্রীরকে বাধা দেওয়া হয়নি। কেননা, সেখানে অনেক মুসল্লি ছিলেন। তাদের হালকা বাধা দিয়ে পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরের দিকে বের করে আনা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ থাকায় এই এলাকাতেই তাদের প্রতিরোধ করা হয়।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হিযবুতকে ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ছোড়া হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও এতে অংশ নেয়।
বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর আগে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ‘মার্চ ফর খিলাফত’ ব্যানারে মিছিল বের করে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। রাজধানীর পুরানা পল্টনে বায়তুল মোকাররমের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। তাদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল থেকেই পুলিশ ও সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। এত নিরাপত্তার মধ্যেও বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের করে পুরানা পল্টনের দিকে যায় সংগঠনের সদস্যরা।শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিলেও তা অতিক্রম করে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকে তারা। বেলা ২টার দিকে মিছিলটি বিজয়নগর এলাকায় অবস্থান করে।
হিযবুত তাহ্রীর ‘মার্চ ফর খিলাফত’ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর এক বার্তায় জানিয়েছে, হিযবুত তাহ্রীর একটি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সব কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর তৎকালীন সরকার হিযবুত তাহ্রীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটি আবার প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে শুরু করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকে তারা নানা দাবিতে মিছিল ও গোলটেবিল বৈঠক করেছে, এমনকি চট্টগ্রামেও কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ শুক্রবার সংগঠনটি রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে মার্চ ফর খিলাফত কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে পোস্টার লাগিয়ে ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তারা প্রচারণা চালায়।
এই কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক বিবৃতিতে জানায়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নিষিদ্ধঘোষিত যেকোনো সংগঠনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, পোস্টার-লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিযবুত তাহ্রীর যদি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরায় অভিযান চালিয়ে সংগঠনটির তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।