তিনি বলেন, মানুষ ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে যায়। প্রয়োজনে লক্ষ লোককে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু পাগলামি কমে যায় যখন মাথার উপর ঢান্ডা পড়ে। রোমানিয়ার চসেস্কুর ক্ষমতার লোভের পরিণতি ছিল তাকে ৫০টি গুলি দিয়ে হত্যা করা হয়। লোভী মানুষরা যেখানে টাকা ও জমি দেখে সেখানে হামলা করে। টাকার জন্য এই পাগলামি বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে চোর,ডাকাত ও ঘুষকোরদের হজ্বও আল্লাহ কবুল করেন না।
উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার ৮মাস দায়িত্ব পালনকালে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়েছে। এবার হজ্বের খরচ ১ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারী টাকায় এখন কেউ হজ্বে যেতে পারবে না। এবার আমরা হাজীদের সেবার জন্য ২শ সরকারী ডাক্তার,নার্স, ফার্মাসিস্ট ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়ে যাব। সেখানে আমরা ৪টি হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছি যেখানে ডায়ালাইসিস ও হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হবে। হজ্ব সেবার জন্য আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি। ২০ এপ্রিল সেটির উদ্বোধন হবে। হাজীরা মোবাইলে টিপ দিয়ে তার লাগেজ কোথায় তা জানতে পারবে এ্যাপস এর মাধ্যমে। হজ্বে দিনের কি কি আমল ও কর্মসূচি তাও জানা যাবে। হজ্ব সিস্টেমকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা হয়েছে। সকল হাজীকে ইসলামী ব্যাংক থেকে কার্ড দেয়া হবে। এতে কারও সাথে করে টাকা নিতে হবে না। এই কার্ড দিয়ে সৌদি আরবের যে কোন এটিএম বুথ থেকে রিয়াল উঠানো যাবে। মার্কেটে কেনাকাটা করা যাবে। দেশের ব্যবহৃত মোবাইল সিমকে রুমিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বল্প ব্যয়ে মক্কা, মদীনা ও জেদ্দায় দেশী সিম ব্যবহার করা যাবে। হাজীদের সেবার জন্য সৌদিতে অধ্যয়নরত ছাত্রসহ লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্নস্থানে যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছি তারা সবাই আল্লাহ ওয়ালা। তারা কোন ঘুষ খায়না। আমরা মসজিদ পরিচালনার জন্য নতুন নীতিমালা তৈরি করেছি। এখান কেউ চাইলেই কোন ইমামকে বহিস্কার করতে পারবে না। ইমাম নিয়োগেরও নীতিমালা হবে। ইমাম মোয়াজ্জিনের বেতনের জন্য ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুযায়ী বেতন কাঠামো করা হবে। ইমাম ও মোয়াজ্জিনের মর্যাদা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিবছর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ৬৪ জেলার সেরা ইমাম ও মোয়াজ্জিনকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করব।
তিনি আরও বলেন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাদেরকে সুদ ও জামানত ছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ঋণের কোন খেলাপী নেই। ৩০ মার্চ পর্যন্ত ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের মধ্যে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।অসুস্থ ইমামদের জন্য এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি শায়খে ধুলিয়ার কর্মজীবন ও মানুষের কল্যানে জীবন বিলিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্টানে প্রধান অতিথি ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সহ- সভাপতি স্যায়িদ আসজাদ মাদানী। তিনি বলেন, রাসুলের আদর্শ আমাদেরকে মানতে হবে। রাসুলের আদর্শই আমাদের মুক্তির পথ। আমাদেরকে ৪টি বিষয়ে আমল করতে হবে। সেটি হল একলাছ, কোন কাজে দৃঢ় থাকা, সৃষ্টির সেবা করা এবং সুন্নাহর অনুসরন করা।
আর-রাহমান ফাউন্ডেশন ধুলিয়া ঘাটুয়া,আমিরপুর বানিয়াচং এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধুলিয়া র. এর সাহেবজাদা মাওলানা হাবিবুর রহমান। অতিথি হিসাবে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আহমদ আলী মুকিব, মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক শাহ নজরুল ইসলাম, মাওলানা জুনাইদ আহমেদ কাটখালীসহ দেশ বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম। অনুষ্টান পরিচালনা করেন মিম সুফিয়ান।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার ধুলিয়া গ্রামের আলোকিত ব্যাক্তিত্ব ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক আল্লামা আব্দুর রহমান শায়খে ধুলিয়া বহু মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্টপোষক ছিলেন। এই দেশ বরেণ্য আলেম ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর সেনানী স্যায়িদ হোসাইন আহমেদ মাদানীর ছাত্র ও খলিফা। মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, আব্দুর রব ইউসুফি, নুরুল ইসলাম ওলিপুরী ও নুরুল ইসলাম খানের মত দেশ বরেণ্য ওলামাদের সৃষ্টি করেছেন শিক্ষক হিসাবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনবার অংশ নেয়া এই কৃতি পুরুষ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিলেন খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর।