আমেরিকা , রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫ , ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সাহিত্য, সৃজন ও আনন্দের ছোঁয়া মিশিগান বইমেলায় ফেডারেল স্থবিরতা, কিন্তু ক্ষুধার বিরুদ্ধে সক্রিয় ডেট্রয়েট হার্পার উডস হাই স্কুলের ফুটবল খেলায় গুলিবিদ্ধ ১৭ বছরের এক কিশোর ডেট্রয়েট মেট্রোতে এফএএ নির্দেশে ফ্লাইট হ্রাস, যাত্রীরা উদ্বিগ্ন শনিবার রাত থেকে মেট্রো ডেট্রয়েটে তুষারপাতের সম্ভাবনা শেলবি টাউনশিপে অটো ডিলারশিপে দুই ব্যক্তির মৃতদেহ : তদন্তে পুলিশ মিশিগানে বইমেলার পর্দা উঠছে কাল মার্কিন রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের উত্থান মিশিগানে শুরু হচ্ছে মানুষ-পাখির প্রযুক্তিযুদ্ধ ফোন ও ইন্টারনেট বিভ্রাটের কারণে শুক্রবার বন্ধ থাকবে ফার্মিংটন পাবলিক স্কুল মিশিগানে ২ লাখেরও বেশি প্রবীণ নাগরিক আলঝাইমারে আক্রান্ত পশ্চিম ডেট্রয়েটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলিতে ২ জন নিহত  জামায়াত সেক্রেটারির নেতৃত্বে যমুনায় ৮ দলের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, একজন নিহতের খবর ১১ ভোটের ব্যবধানে হ্যামট্রাম্যাক মেয়র নির্বাচনে হারলেন মুহিত মাহমুদ ডেট্রয়েটে দুটি পৃথক গুলিবর্ষণে দুজন নিহত, আহত ১ দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানে এই সপ্তাহান্তে তুষারপাতের সম্ভাবনা ম্যাকিনাকের নীল জলে বিরল মৃত্যু : আত্মহত্যা বলছে পুলিশ নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি তিন শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতি
এক ঐতিহ্যের স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়ন

লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল : পটচিত্র

  • আপলোড সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১২:৫০:১০ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২২-০৪-২০২৫ ১২:৫০:১০ পূর্বাহ্ন
লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল : পটচিত্র
ওয়ারেন, ২২ এপ্রিল : গত রোববার নগরীর শিবমন্দিরে “পটচিত্র” পরিবেশনা দেখতে গিয়ে হঠাৎই মনে পড়ে গেল আমার ছোটবেলার কিছু অস্পষ্ট স্মৃতি। আমার যতদূর মনে পড়ে, গ্রামের মেলায় বা বর্ষাকালে মানুষের যখন কিছুই করার থাকত না, তখন বেশ কয়েকবার “পটচিত্র” বা “পটের গান” দেখার সুযোগ হয়েছিল। সে সময় এটাকে কেউ কেউ “পটের গান” বলত, কেউ বলত “পটুয়ার গান”—তবে নামের চেয়ে তা ছিল এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। একটানা গাওয়া গান, তার সঙ্গে ঝুলে থাকা চিত্রের সারি আর শিল্পীর আবেগময় গল্প বলা—এই সমন্বয় ছিল যেন এক ভ্রাম্যমাণ মঞ্চনাটক।
শিবমন্দিরের মঞ্চে যখন পৃথা দেব তার কণ্ঠে পটচিত্রের গান পরিবেশন করছিলেন, আর সেই গান অনুসারে একের পর এক ছবি ভেসে উঠছিল, আমি যেন ফিরে গেলাম আমার হারানো শৈশবে। এমন সাবলীল গায়কী, এমন জীবন্ত উপস্থাপনা সত্যিই অতুলনীয় ছিল।
“পটচিত্র” বাংলার অন্যতম প্রাচীন লোকজ শিল্পরূপ, যা একাধারে চিত্রশিল্প, সংগীত, ও গল্পবলা—তিনটির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। “পট” মানে কাপড় বা ক্যানভাস, আর “চিত্র” মানে ছবি।
এই শিল্পে সাধারণত এক টুকরো লম্বা কাপড়ে ধারাবাহিকভাবে আঁকা হয় কাহিনীভিত্তিক ছবি, এবং সেই ছবিগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে শিল্পী গান গেয়ে যান—এভাবেই দর্শক একসঙ্গে দেখতে পান ছবি ও শুনতে পান কাহিনী। পটচিত্রের সূচনা খ্রিস্টপূর্ব যুগের ভারতীয় লোকশিল্প থেকে বলে মনে করা হয়। বাংলায় এই শিল্পের প্রচলন প্রাক-মুসলিম যুগ, অর্থাৎ ৭ম বা ৮ম শতাব্দী থেকেই দেখা যায়। এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল ভারতের মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম ও বাংলাদেশের যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, রাজশাহী অঞ্চলে। 
প্রধান বিষয়বস্তু হিসেবে রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনী, মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল ও অন্যান্য মঙ্গলকাব্য, সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক বার্তা, সমসাময়িক দুর্যোগ বা সামাজিক বার্তা (যেমন প্লেগ, বন্যা, সামাজিক অনাচার ইত্যাদি)
পটচিত্র তৈরি ও উপস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন পটুয়া বা পটগায়েন। তাঁরা ছবি আঁকার পাশাপাশি গান গেয়ে সেই ছবির ব্যাখ্যা দেন। পটুয়াদের মধ্যেও ধর্ম-বর্ণের বিভাজন ছিল না—হিন্দু, মুসলিম, দলিত সবাই ছিলেন এই ঐতিহ্যের অংশ। এমনকি মুসলিম পটুয়ারা হিন্দু পুরাণ নির্ভর কাহিনী আঁকতেন—এটাই এই শিল্পের উদারতা ও অন্তর্ভুক্তির চিহ্ন।
কালের প্রবাহে পটুয়াদের অনেকেই পরবর্তীতে রিকশার পেছনে আঁকা শিল্পকলার মাধ্যমে তাঁদের সৃষ্টিকে আধুনিকরূপে নতুন করে উপস্থাপন করেন, যা “রিকশা আর্ট” নামে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ১৯৫০–৬০-এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে গ্রামীণ মেলা, ধর্মীয় উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে পটচিত্র দেখা যেত ব‍্যপক ভাবে, তবে ৯০ দশকের শুরু পর্যন্ত ধুঁকতে ধুঁকতে বেঁচে ছিল লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
শব্দকথা ট্যুরিজমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

শব্দকথা ট্যুরিজমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন