হ্যামট্রাম্যাক, ১১ জুন : শহরের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এক নাটকীয় সন্ধ্যায় বরখাস্ত হওয়া সিটি ম্যানেজার ম্যাক্স গারবারিনো সিটি কাউন্সিল চেম্বারে উপস্থিত হয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেন। শহরের মেয়র এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব, অভিযোগ এবং মামলার আবহে তার এই উপস্থিতি পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।  মেয়র আমের গালিবের পীড়াপীড়িতে শহরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার প্রায় তিন মিনিট আগে তিনি সেখানে ছিলেন, যিনি বলেছিলেন যে তিনি গারবারিনোর সাথে ভবনে নিরাপদ বোধ করছেন না।
হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র আমের গালিব বলেন, “আজ এখানে ম্যাক্সের থাকা অনুচিত।” তিনি অভিযোগ করেন, বরখাস্তকৃত সিটি ম্যানেজার ম্যাক্স গারবারিনোর উপস্থিতি কাউন্সিলের সদস্যদের আতঙ্কিত করে তুলতে পারে এবং পুলিশ প্রধান জামিল আলতাহেরিকে অপসারণের পেছনে তার ভূমিকা তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারে। উল্লেখ্য, আলতাহেরিও বর্তমানে ছুটিতে আছেন এবং তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
সিটি ম্যানেজার ম্যাক্স গারবারিনো হচ্ছেন সেই কয়েকজন হ্যামট্রাম্যাক নেতার একজন, যিনি একাধিক মামলা, স্থগিতাদেশ ও অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন — যা পুরো শহর প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কাউন্সিল কক্ষ ত্যাগ করার সময় তিনি হাত ঘষে “মামলা” শব্দটি উচ্চারণ করেন, যা অনেকের মতে নগর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতি ও বর্ণবৈষম্যের মামলার দিকেই ইঙ্গিত করে।
কয়েক মিনিট পর হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র আমের গালিব পুলিশকে জিজ্ঞাসা করেন, সিটি ম্যানেজার ম্যাক্স গারবারিনো ভবন ত্যাগ করেছেন কি না। পুলিশ জানায়, গারবারিনো এখনও হলওয়েতে অবস্থান করছেন। এর প্রেক্ষিতে গালিব স্পষ্ট নির্দেশ দেন, "তাকে সিটি হল থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে দিন।" তাঁর ভাষায়, "যদি তিনি এখনও এখানে থাকেন, তবে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। তার এখনই ভবন ছেড়ে যাওয়া উচিত।"
প্রায় ২৭,৪০০ জনসংখ্যার হ্যামট্রাম্যাক শহর বর্তমানে গভীর প্রশাসনিক অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শহরটি ২২ মে থেকে পুলিশ প্রধান ছাড়াই এবং ২৭ মে থেকে কোনও সিটি ম্যানেজার ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে।
গারবারিনো জানান, তিনি হ্যামট্রাম্যাক পুলিশ বিভাগের এক অফিসারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ প্রধান জামিল আলতাহেরিকে বেতনভুক্ত বরখাস্ত করেন। সেই তথ্য অনুযায়ী, আলতাহেরি যুক্ত ছিলেন এমন একটি প্রচেষ্টার সঙ্গে, যেখানে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন সহযোগীর মাধ্যমে একজন ফেডারেল বন্দীকে ক্ষমা করাতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ অনুযায়ী, সেই বন্দী ছিলেন একটি আর্থিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত, আর এই ক্ষমার বিনিময়ে ১ মিলিয়ন থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এই গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে গারবারিনো তদন্তের অংশ হিসেবে তাকে বরখাস্ত করেন।
পরে শহরের কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে ম্যাক্স গারবারিনোকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। গারবারিনো, যিনি একসময় হ্যামট্রাম্যাক শহরের পুলিশ প্রধান ছিলেন, বর্তমানে শহরের সিটি ম্যানেজার পদে ছিলেন।
মেয়র আমের গালিব অভিযোগ করেন যে গারবারিনো সিটি কাউন্সিলের এক সদস্য অ্যাডামসিজিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল পুলিশ প্রধান জামিল আলতাহেরির কাছ থেকে পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়া। মেয়রের মতে, এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা ছিল আলতাহেরিকে অপদস্থ ও অপসারণের জন্য।
শ্বেতাঙ্গ ম্যাক্স গারবারিনো এবং কাউন্সিল সদস্য অ্যাডামজিক — দুজনেই হ্যামট্রাম্যাক শহরের মেয়র আমের গালিব, কাউন্সিলের আরব-আমেরিকান সদস্যরা এবং পুলিশ প্রধান জামিল আলতাহেরির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
তাদের অভিযোগ, তারা যখন দুর্নীতি ও বর্ণগত পক্ষপাতের অভিযোগ প্রকাশ করেন, তখন এর প্রতিশোধ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মামলার আসামিরা সকলেই আরব আমেরিকান।
শহরের কেউ কেউ বাদীদের দিকে বর্ণবাদী অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছেন, যারা গত সপ্তাহে তাদের অ্যাটর্নি জোনাথন মার্কোর সাথে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
মঙ্গলবার কাউন্সিল সভায় বাসিন্দা বিল মেয়ার বলেন, "এটা দেখে মনে হচ্ছিল তিনজন শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি, যারা সাতজনের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ করছে, যারা সকলেই অশ্বেতাঙ্গ। আমি জানি না মার্কো হ্যামট্রাম্যাকে বর্ণবাদ এবং ইসলামোফোবিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে কতটা জানেন, তবে আমি আশা করি তিনি এটি গভীরভাবে অধ্যয়ন করবেন।"
গালিব রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শহরটি যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন। "আমরা হুমকির মুখে কাজ করতে পারি না ...," তিনি বলেন, "এখন আস্থা হারিয়ে গেছে। সেই লোকদের উপর আস্থার অভাব রয়েছে, কিছু লোকের উপর যাদের তদন্ত চলছে।"
অ্যাডামজিক বলেছেন যে তিনি গারবারিনো, মিশিগান স্টেট পুলিশ এবং এফবিআই-এর কাছে তার অভিযোগগুলি জানিয়েছেন। এফবিআই কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে তারা ২৩শে মে শহরে "আইন প্রয়োগকারী কার্যক্রম পরিচালনা" করছিলেন, একজন সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে, বেশ কয়েকজন কাউন্সিল সদস্য তাদের নিজস্ব অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। মুহিত মাহমুদ এবং আবু মুসার বিরুদ্ধে হ্যামট্রাম্যাক শহরের সীমানার বাইরে বসবাসের অভিযোগ রয়েছে। শহর কর্তৃক নিয়োগকৃত একটি বেসরকারি তদন্ত সংস্থা নির্ধারণ করেছে যে রাজনীতিবিদরা যথাক্রমে ওয়ারেন এবং ট্রয়ে থাকেন। কাউন্সিল সদস্যরা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং কাউন্সিল তাদের পদ থেকে অপসারণের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।
হ্যামট্রাম্যাক পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা তদন্তকারীদের অনুসন্ধানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং মামলাটি এমএসপি-তে প্রেরণ করেছেন।
গালিব তার এবং কাউন্সিলের কাছ থেকে ইনপুট ছাড়াই নিজের ইচ্ছায় অ্যাডভান্টেজ ইনভেস্টিগেশনস অ্যান্ড রিসার্চ ফার্ম নিয়োগের জন্য গারবারিনোকে তিরস্কার করেছেন। মাহমুদ এবং মুসা গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
আরেকটি চলমান তদন্তে চার কাউন্সিল সদস্য এবং একজন প্রাক্তন কাউন্সিল সদস্যের অনুপস্থিত ব্যালট জালিয়াতির দাবি জড়িত। অ্যাটর্নি জেনারেল ডানা নেসেল বিশেষ প্রসিকিউটর নিয়োগের অনুরোধ করার পর মনরো কাউন্টির প্রসিকিউটর এই মামলাটি তদন্ত করছেন।
Source & Photo: http://detroitnews.com