উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, "আমাদের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে অহংকার ছিল, তা আজ নষ্ট করার অপচেষ্টা চলছে। একটি অপশক্তি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাইছে। মুক্তিযোদ্ধারা আজ লাঞ্ছিত হচ্ছেন।" তিনি আরও বলেন,
"এই বইমেলায় এসে আমি দেখলাম, প্রবাসীরা কীভাবে এই দেশকে ধারণ করে আছেন। এখানে যেন পুরো বাংলাদেশ উপস্থিত। মুক্তিযোদ্ধারাও এসেছেন, তাদের যথাযথ সম্মান জানানো হচ্ছে। বইমেলায় প্রবেশ করে দেখি, চারপাশে দেশের কৃতি পুরুষদের প্রতিচ্ছবি, নারী-পুরুষ সবাই শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে এসেছেন—এই দৃশ্য দেখে মনে হলো, আমি বাংলাদেশের মাঝেই আছি।"
গত ২৮ জুন (শনিবার) দুপুর ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় এই বইমেলা। এবারের মেলায় অংশ নেয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা, নালন্দা প্রকাশনী, অনন্যা, অন্বয় প্রকাশনী, লেখক সারওয়াত জাবীন লুবনা এবং লেখক গোলাম রাব্বানী রঞ্জুর স্টল।
সাউথ কাউন্টি সিভিক সেন্টারে বিকাল ৫ টায় নাট্যজন মামুনুর রশিদ ফিতা কেটে বই মেলার উদ্বোধন করেন, এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বজিত সাহা, লেখক শিব্বির আহমেদ, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ুন কবির ঢালি, প্রকাশক জুয়ে্ল, মীম খান, দিপু খান, আতিকুর রহমান সহ ঢাকা ক্লাবের সদস্যরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলার কার্যকরী সভাপতি আনোয়ারুল খান দীপু।
কোরআন তেলাওয়াত করেন ঢাকা ক্লাবের সহ সভাপতি শেখ বাবুল। জাতীয় সংগীতের পর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রবাসী কবি, লেখক ও সংগঠক জুয়েল সাদতের কবিতার সিডি “অনুভবে আলিঙ্গন” এর মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে। মোড়ক উন্মোচন করেন নাট্যজন মামুনুর রশিদ, লেখক বিশ্বজিত সাহা, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ুন কবির ঢালি প্রমুখ। মামুনুর রশীদ প্রবাসী কবি জুয়েল সাদতের সিডির ভুয়সী প্রশংসা করেন।
ফ্লোরিডা বইমেলার মূল আকর্ষণ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান, যা প্রবাসে বসে বাংলাদেশের ইতিহাসকে স্মরণ ও উদযাপনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। মুক্তিযোদ্ধা এম. ফজলুর রহমান ও নান্নু আহমদকে সম্মাননা প্রদান করেন উপদেষ্টা রানা খান। মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল চৌধুরী ও আলমগীর পাটোয়ারীকে সম্মাননা দেন লেখক শিব্বির আহমেদ। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মাননা প্রদান করেন প্রকাশক বিশ্বজিত সাহা। মুক্তিযোদ্ধা আফরোজা খানমকে সম্মাননা জানান রানা খান। সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয় যখন মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন মামুনুর রশিদকে বিশেষ সম্মাননা জানান উপস্থিত সব মুক্তিযোদ্ধা।
নানা সেগমেন্ট ছিল ৬ ঘন্টা জুড়ে, সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গান, নৃত্য ও কবিতা, পরিবেশন করেন আহমেদ রুশো, রাজিব, নাহিদুল ইসলাম, আফিয়া তানজুম নিলয় ,শোভন, মেরিনা মজুমদার, সাকিব, রজিনা করিম, ফেরদৌসী নাহার মুন্নীর গান ও ইউথ প্রজেক্ট । ডক্টর কেয়া রোজারিও এর কবিতা - গান এর সমন্বিত পরিবেশনা “আজি এ আনন্দ সন্ধ্যায়” ৮ জন শিল্পীর পরিবেশনা বই মেলাকে মুগ্ধ করে রাখে। এই যৌথ পরিবেশনায় ছিলেন নাজমুন নাহার ইউনা, শরীফ মজুমদার, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মেরিনা মজুমদার, সৈয়দা শামীমা জেসমিন, ছন্দা মুর্শিদ, পবিত্র জয়সাল সেন, দেবযানী সেন,পল্লব মজুমদার ও রাজেস ভান্ডারী।
নাজমুন নাহার ইউনা'র গ্রন্থনা ও পরিচালনায় ছিল "ষড়ঋতুর ছন্দ "। কবিতা, গান ও নৃত্যের সমন্বয়ে পরিবেশনা। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন এরিনা খান।
বই মেলার অনুষ্ঠানটি প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নানা রকম সাংস্কৃতিক সেগমেন্টে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য এবং কবিতার চমৎকার পরিবেশনা ছিল। এতে আহমেদ রুশো, রাজিব, নাহিদুল ইসলাম, আফিয়া তানজুম নিলয়, শোভন, মেরিনা মজুমদার, সাকিব, রজিনা করিম, ফেরদৌসী নাহার মুন্নী ও ইউথ প্রজেক্ট অংশগ্রহণ করেন।
বিশেষ আকর্ষণ ছিল ডক্টর কেয়া রোজারিওর কবিতা ও গানের সমন্বিত পরিবেশনা “আজি এ আনন্দ সন্ধ্যায়,” যা আটজন শিল্পীর চমৎকার পরিবেশনায় বইমেলাকে মুগ্ধ করে রাখে। এই যৌথ পরিবেশনায় উপস্থিত ছিলেন নাজমুন নাহার ইউনা, শরীফ মজুমদার, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মেরিনা মজুমদার, সৈয়দা শামীমা জেসমিন, ছন্দা মুর্শিদ, পবিত্র জয়সাল সেন, দেবযানী সেন, পল্লব মজুমদার ও রাজেস ভান্ডারী।
তাছাড়া, নাজমুন নাহার ইউনার গ্রন্থনা ও পরিচালনায় “ষড়ঋতুর ছন্দ” নামক পরিবেশনায় কবিতা, গান ও নৃত্যের সমন্বয় ছিল অনবদ্য। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন এরিনা খান।
সালমা রহমান মিনু ও মীম খানের পরিচালনায় ঢাকা ক্লাবের মহিলা সদস্যরা প্রদীপ নিয়ে একটি যৌথ পরিবেশনা সবার নজর কাড়ে। মীম খান ইসলামে বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে একটি ছোট বক্তব্য রাখেন।

দুপুর ২ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে বই মেলা। সাউথ ফ্লোরিডার নানা শহরের লেখক, কবি সাহিত্যিক ও বই প্রেমীরা উপস্থিত ছিলেন ৷ নৃত্য শিল্পী পারসা ইসলাম এর একটি ছোট পরিবেশনা ছিল।
সংগীত পরিবেশন করেন বই মেলার মুল অতিথি শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী। তিনি একাধারে অনেকগুলো গান পরিবেশন করেন। দিনাজ জাহান মুন্নির এর সাথে ডুয়েট করেন শিল্পী শোভন।
রাত সাড়ে দশটায় সালমা রহমান মিনুর পরিচালনা, নির্দেশনায় নীলাঞ্জনী নাট্যগোষ্টীর বিশেষ পরিবেশনা কাজী নজরুলের “মানুষ” কবিতাটি অনুকরনে নাটক মঞ্চস্থ হয় ৷ সেই নাটকটি দেখার জন্য সবাই রাত ১১ টা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। নাটকের সংলাপে ছিলেন আতিকুর রহমান ৷
রাত ১১ টায় বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় বিজয়ী ছাত্রছাত্রীদের সার্টিফিকট প্রদান করেন মীম খান, দিপু খান, মুজিব উদ্দিন, শেখ পবন, সাংবাদিক জুয়েল সাদত ।
বই মেলার উপস্থাপনায় ছিলেন সাদিয়া খন্দকার, ইন্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম বাবু ও নাজমুন নাহার ইউনা। ঢাকা ক্লাবের সভাপতি মীম খান- "শিল্পগ্রাম" নামে একটি দেশীয় কৃষ্টি কালচার, কারুশিল্প, মৃতশিল্প, দেশীয় পোশাক শিল্প,গ্রামীন জীবনের উপকরন এর একটি বিশাল কর্নার প্রদর্শন করেন। যা ছিল বই মেলার মুল আকর্ষণ। সেই কর্নারে পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতির বহি:প্রকাশ ঘটে। ছিল দেশীয় খাবারের স্টল।
পুরো বইমেলায় যারা জড়িত ছিলেন নাজমুন নাহার ইউনা, মীম খান, দীপু খান, ড. কেয়া রোজারিও, ড.জামসেদ বেগম,ফেরদৌসী নাহার, মেরিনা মজুমদার, সালমা রহমান, এরিনা খান, শেখ আহমেদ পবন, নাইম খান দাউদ, জুয়েল সাদত, চেমন উদ্দিন, ডা: আসমা আক্তার রুবি, ইন্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম বাবু, উপদেষ্টা রানা খান, উপদেষ্টা মুজিব উদ্দিন, সিনিয়র উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান ও এম রহমান জহির।
বই মেলার বিশেষ অতিথি ইউনিসেফ মিনা এওয়ার্ডস খ্যাত লেখক ও শিশু সাহিত্যিক হুনায়ুন কবীর ঢালী বলেন, বই মানুষের মনজগতকে সৃষ্টিশীল করে। যতই বড় পড়বেন, ততই জানতে পারবেন। আপনি এগিয়ে যাবেন।
বই মেলার অন্যতম অতিথি প্রকাশক মুক্তধারার বিশ্বজিত সাহা বলেন, এত সুন্দর আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে। ঢাকা ক্লাবের বই মেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করার প্রচেষ্টা অনুকরণীয়। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছিলেন বলেই আমরা একটা পাসপোর্ট পেয়েছিলাম।
বই মেলায় ড. গোলাম রাব্বানী রন্জু তার দু খন্ডের উপন্যাস "দুই শালিক" নিয়ে বসেছিলেন। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে তিনি বইয়ের বাজারজাত করেন। লেখক রন্জু বই মেলায় আসতে পেরে অনেক আনন্দিত জানালেন।
লেখিকা সারাওয়াত জাবীন লুবনা “পৃথিবীটা তোমাকে দিলাম ও “বেলোয়ারি স্বপ্নকাহন” নিয়ে এসেছিলেন।
৭ ম ফ্লোরিডা বই মেলায় ছিল বই নিয়ে আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, মোড়ক উন্মোচন এবং বই প্রকাশনার নানা দিক নিয়ে আলোচনা। বিভিন্ন প্রকাশনীর কর্নধাররা বই নিয়ে আলোচনা করেন নতুন লেখকদের সাথে।
ঢাকা ক্লাব সাউথ ফ্লোরিডার একটি ভাল সংগঠন। ১০ বছর আগে ঢাকা ক্লাব বই মেলার গোড়াপত্তন করে। এরপর করোনা সহ নানা প্রতিকুলতা থাকলেও ৭ম বইমেলা উপহার দিয়ে এবং বই মেলায় সবার অংশগ্রহণ ঢাকা ক্লাব কে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে জানান মুল উদ্যেক্তা দীপু খান, মীম খান ।
ঢাকা ক্লাব সভাপতি মীম খান বলেন, আজকে সাউথ ফ্লোরিডার সব গুলো সংগঠনের উপস্থিতি এবং সহযোগিতা আমাদের আগামী বই মেলা আরো বড় পরিসরে করার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বই মেলার মিডিয়া পার্টনার হিসাবে ছিল উত্তর আমেরিকা প্রথম আলো, জাতীয় দৈনিক রুপালি বাংলাদেশ ও সময় টিভি।