ঢাকা, ১১ জুলাই : রাজধানীর পুরান ঢাকায় ভয়াবহ ও নৃশংস এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্য দিবালোকে পাথর দিয়ে একের পর এক আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। নৃশংসতার এ দৃশ্য দেখে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনাকে আইনের শাসনের চরম অবক্ষয় বলে আখ্যা দিয়েছেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর জনমনে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
নিহত ব্যক্তির নাম লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯)। তিনি কেরানীগঞ্জের পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈনসহ ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত তার ওপর হামলা চালায়। পাথর দিয়ে একের পর এক আঘাত এবং বর্বর নির্যাতনের ফলে ঘটনাস্থলেই সোহাগের মৃত্যু ঘটে। হামলার সময় সোহাগের রক্তাক্ত মুখের ওপর এক ব্যক্তি বারবার কিল-ঘুষি মারছিল, আরেক তরুণ দৌড়ে এসে পড়ে থাকা নিথর দেহের ওপর লাফাচ্ছিল। হামলার সময় সোহাগের পরনের পোশাক পর্যন্ত খুলে ফেলা হয়, যা ঘটনাটিকে আরও ভয়াবহ ও অপমানজনক করে তোলে। চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন আতঙ্কিত চোখে এ দৃশ্য দেখলেও কেউ এগিয়ে যেতে সাহস করেননি। মানবিকতা ও নিরাপত্তাবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেওয়া এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সর্বত্র চরম ক্ষোভ ও ভীতির জন্ম দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়িক আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নিহত সোহাগের সঙ্গে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জের ধরেই ঘটে গেছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ঘটনার আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাতেও এলাকায় গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে, যা এ উত্তেজনারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নিহতের বন্ধু মামুন অভিযোগ করে বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে মঈন নিয়মিত সোহাগের কাছে চাঁদা দাবি করত। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্নভাবে হুমকি দিত। বুধবার সন্ধ্যায় সোহাগ একা থাকাকালে মঈনসহ চার-পাঁচজন মিলে তার ওপর পাথর দিয়ে আঘাত করে, পরনের কাপড় খুলে ফেলে, এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।”
এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিন (২২)। গ্রেপ্তার তারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। মহিন ঘটনার মূলহোতা।
স্থানীয়রা জানান, নিহত সোহাগ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন, টিটুসহ জড়িতরা ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তবে, তাদের কোনো পদ রয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan