চৌধুরী পরিবারের এই বার্ষিক বনভোজন ছিল প্রাণবন্ত আনন্দ, হৃদ্যতা, আপ্যায়ন ও পারিবারিক বন্ধনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। দিনব্যাপী আয়োজনে ছিল নানা ধরনের খেলাধুলা, সঙ্গীতানুষ্ঠান, শিশুদের জন্য মজার প্রতিযোগিতা এবং আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র। টেলিভিশন, ফ্রিজসহ নানা চমকপ্রদ পুরস্কারসমূহ র্যাফেল ড্র-এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আনন্দের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
খাবারের আয়োজনে ছিল বর্ণিল বৈচিত্র্য। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য পরিবেশিত হয় সুস্বাদু খাসির বিরিয়ানি, ডিমের কারি, মুরগির ঝাল-মশলাদার তরকারি, এবং নিরামিষ নানা পদ। প্রতিটি খাবারই স্বাদ ও পরিবেশনের দিক থেকে ছিল অনন্য।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার লামাদুমকা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও শিক্ষিত চৌধুরী পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই প্রবাসে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করছেন। ১৯৯১ সালে পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য বিপ্লব চৌধুরী ওপি-১ ভিসায় প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। তার অনুপ্রেরণায় একে একে আরও ছয় ভাই ও তিন বোন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং এখানে পেশাগত ও পারিবারিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। এ পরিবারের অনেক সদস্যই শিক্ষা ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, অমূল্য চৌধুরী সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্য ভাইয়েরা কেউ শিক্ষক, কেউ অধ্যাপক, আবার কেউ প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, যা পরিবারটির উচ্চ শিক্ষাগত মান ও নৈতিক আদর্শের প্রতিফলন।
চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, ভ্রাতৃত্ব ও একতার যে দৃষ্টান্ত, তা এ বনভোজনে ছিল সুস্পষ্ট। তাদের ৯৫ বছর বয়সী শ্রদ্ধেয় মাতা প্রতিভা চৌধুরী এখনো সুস্থ ও সচল আছেন। সন্তানদের একত্রিত দেখে তিনি যেমন আনন্দিত হন, তেমনি সন্তানরাও তাকে ঘিরেই নিজেদের সুখ ও ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু মনে করেন। অমূল্য চৌধুরী জানান, মা প্রতিভা চৌধুরীর ত্যাগ ও প্রজ্ঞার কারণেই দেশে তাদের পরিবারটি ছিল একান্নবর্তী, এবং প্রবাসে এসেও সেই ঐক্যের বন্ধন অটুট রয়েছে।
এই বনভোজন কেবল একটি পারিবারিক মিলনমেলা নয়, বরং ছিল প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পারিবারিক মূল্যবোধকে জীবন্ত করে তোলার এক অনন্য প্রয়াস। অংশগ্রহণকারীরা সারাদিন প্রাণ খুলে হাসেছেন, খেয়েছেন, আনন্দ করেছেন, এবং পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছেন। চৌধুরী পরিবারের এই সুন্দর আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মন ভরে গেছে আনন্দে ও ভালোবাসায়, যা দীর্ঘদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে সবার হৃদয়ে। দিনশেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিবারের ৯৫ বছর বয়সী সম্মানিত মাতা প্রতিভা চৌধুরী, যিনি ছিলেন অনুষ্ঠানের অনন্য আকর্ষণ।