আমেরিকা , বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ , ২২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
পশ্চিম ডেট্রয়েটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলিতে ২ জন নিহত  জামায়াত সেক্রেটারির নেতৃত্বে যমুনায় ৮ দলের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, একজন নিহতের খবর ১১ ভোটের ব্যবধানে হ্যামট্রাম্যাক মেয়র নির্বাচনে হারলেন মুহিত মাহমুদ ডেট্রয়েটে দুটি পৃথক গুলিবর্ষণে দুজন নিহত, আহত ১ দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানে এই সপ্তাহান্তে তুষারপাতের সম্ভাবনা ম্যাকিনাকের নীল জলে বিরল মৃত্যু : আত্মহত্যা বলছে পুলিশ নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি তিন শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতি ইসির নিবন্ধন পেল তিন দল : প্রতীক ‘শাপলা কলি’, ‘কাঁচি’ ও ‘হ্যান্ডশেক’ নির্বাচনী ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আইন : ভোটার প্রতি ১০ টাকার সীমা ম্যাকম্বে ব্যবসায়ীকে গুলি : আরও দুই সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করল বিএনপি জুলাই সনদের ওপর নভেম্বরেই গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী জামায়াতের নেতৃত্বে স্থিতিশীলতা : আবারও আমীর ডা. শফিকুর রহমান ধর্মীয় বিদ্বেষে রক্তাক্ত গ্র্যান্ড ব্লাঙ্কের গির্জা : এফবিআই নিশ্চিত জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই : মির্জা ফখরুল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ গণভোট ও সনদ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক চায় জামায়াত ওকল্যান্ড কাউন্টিতে আইটি চুক্তি কেলেঙ্কারি

প্রবাসে শিকড়ের খোঁজ : মিশিগানের সবজি বাগানে বাংলার ছোঁয়া

  • আপলোড সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ০১:৫৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩১-০৭-২০২৫ ০১:৫৩:৫৯ পূর্বাহ্ন
প্রবাসে শিকড়ের খোঁজ : মিশিগানের সবজি বাগানে বাংলার ছোঁয়া


নিজের হাতে গড়া সবজিবাগানের পাশে হ্যামট্রাম্যাক সিটির বাসিন্দা ফয়সল আহমেদ।

হ্যামট্রাম্যাক, ৩১ জুলাই : প্রবাস মানেই বিচ্ছিন্নতা নয়, বরং কখনো কখনো প্রবাসেই মানুষ নতুন করে খুঁজে পায় নিজের শিকড়কে। সে খোঁজটা কখনো হয় ভাষার মাধ্যমে, কখনো খাবারের স্বাদে, আবার কখনো মাটির সঙ্গে আত্মিক এক বন্ধনে। মিশিগানের প্রবাসী বাঙালিদের গ্রীষ্মকালীন সবজি বাগানগুলো যেন সেই মাটির বন্ধনেরই এক জীবন্ত নিদর্শন।
মিশিগান অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। বছরের দীর্ঘ সময় জুড়ে এখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারপাত থাকে। কিন্তু জুন থেকে আগস্ট এই তিন মাসে আবহাওয়া থাকে তুলনামূলক উষ্ণ ও শুষ্ক, যা অনেকটা বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন সময়ের সঙ্গে তুলনীয়। এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসী বাঙালিরা নিজেদের বাড়ির পেছনের আঙিনা কিংবা সামনের লনে গড়ে তোলেন ছোট ছোট সবজি বাগান।
মাটি প্রস্তুত, বীজ বপন, চারা রোপণ, পানি দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার, বাঁশ বা কাঠের খুঁটি দিয়ে গাছকে আগলে রাখা সব মিলিয়ে এ এক পরিশ্রমসাধ্য কাজ। কিন্তু সেই পরিশ্রমে থাকে ভালোবাসা, আত্মপরিচয়ের অনুসন্ধান এবং প্রিয় মাটির ঘ্রাণ খোঁজার এক অবিরাম চেষ্টা।
এইসব সবজিবাগান অনেকটাই বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষিজ আঙিনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এখানে চাষ হয় নানা রকম পরিচিত ও প্রিয় সবজি। জনপ্রিয় সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে লাউ, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, যেগুলো মাচায় তুলে চাষ করা হয়। এসব গাছের ফুল অনেকের কাছে এক অমলিন স্মৃতি জাগায়।

ওয়ারেন সিটির বাসিন্দা চন্দনা বানার্জির পরিশ্রমে গড়া সবজিবাগানে সুন্দর কলমি শাক।

শিম, বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গার মতো সরু লতানো গাছগুলো মাচা বেয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বেগুন, ফুলকপি, ঢেঁড়স, টমেটো, শসা ইত্যাদি সাজানো সারিতে চাষ হয় জমির মতো নির্ধারিত বেডে। আবার অনেকে লাল শাক, কলমি শাক, পাট শাক, সর্ষে শাক, ধনে পাতা, পুঁইশাক, কচুর মতো শাকসবজি টব বা কাঠের তৈরি উঁচু বেডে চাষ করেন। বিভিন্ন ধরণের কাঁচা মরিচও চাষ হয়। মরিচের গাছগুলো ছোট হলেও পরিচর্যা করলে ফলন ভালো হয়। অনেকেই নিজের ঘরের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশীকেও ভাগ করে দেন সেই ঘ্রাণভরা মরিচ। পাশাপাশি টবে লেবু গাছও লাগানো হয়। 
এমনকি কিছু পরিবার শীতের সময় ইন্ডোর গ্রীনহাউস তৈরি করে বীজ অঙ্কুরোদ্গম করান, তারপর গ্রীষ্মে তা বাইরে রোপণ করেন। এই অভ্যাসটি এখন অনেকের কাছেই রীতিমতো বার্ষিক রুটিন হয়ে উঠেছে।
এই সবজি চাষের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালিরা শুধু দেশীয় খাবারের স্বাদই ফিরিয়ে আনেন না, বরং প্রজন্মান্তরের মাঝে বাংলাদেশের কৃষি-সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার সচেতন প্রয়াস করেন।

 মিশিগানের ফয়সল আহমেদের শখের সবজি বাগানে এখন নজরকাড়া সবুজ ছড়ানো। তার পরিচর্যায় গড়ে ওঠা ছোট্ট বাগানে সমৃদ্ধভাবে বেড়ে উঠছে বেগুন, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য শাকসবজি। 

নতুন প্রজন্মের অনেক শিশু বা কিশোর-কিশোরী যাদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা আমেরিকায়, তাদের জন্য এ এক শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা। কীভাবে বীজ থেকে গাছ হয়, কেমন করে লতানো করলার ডগা ধরে কুঁচকানো ফল হয়, কিভাবে লাউফুল থেকে লাউ ধরে, কোনটা পাকা টমেটো আর কোনটা কাঁচা সব শেখার মাঝে এক নিরব উত্তরাধিকার পৌঁছে দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে, পরিবারের মধ্যে একধরনের আন্তরিকতা তৈরি হয়। বাড়ির সদস্যরা একসঙ্গে বাগানে সময় কাটান, গাছের যত্ন নেন, পোকা দূর করেন, কেউ পানি দেন, কেউ ছবি তোলেন। সামাজিক মাধ্যমেও এই বাগানের ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার প্রবণতা বেড়েছে, যেটি আবার প্রবাসী কমিউনিটির মধ্যে এক ধরণের আত্মপরিচয়ের চর্চা হিসেবে কাজ করে।
মাত্র তিন মাসের এই গ্রীষ্মকালীন বাগান বছরজুড়েই বাঙালি প্রবাসীদের মনে রেখাপাত করে রাখে। এটি প্রমাণ করে, মানুষ যতই দূরে থাকুক না কেন, নিজের শেকড়কে ভুলে থাকা সম্ভব নয়। প্রবাসে থেকেও এই সবজিবাগানগুলো যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো এক টুকরো বাংলাদেশ। 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
টাঙ্গাইল থেকে নিউইয়র্ক : ইতিহাস লিখলেন বিচারপতি সোমা সায়ীদ

টাঙ্গাইল থেকে নিউইয়র্ক : ইতিহাস লিখলেন বিচারপতি সোমা সায়ীদ