নিউইয়র্ক, ১৩ আগস্ট : জ্যামাইকা ইন্টারগেটেড বাংলাদেশী অফিসার্স নেটওয়ার্ক “জীবন” কর্তৃক আয়োজিত বিশেষ এন্ডোসমেন্ট অনুষ্ঠানে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানীকে সমর্থন জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি গত ৯ আগস্ট দুপুর ২টায় নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের সিরাজী বেনকুইট হলে অনুষ্ঠিত হয়।
“জীবন” এর সাধারণ সম্পাদক ডিটেকটিভ রাসেক মালিক এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জীবনের সভাপতি ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এছাড়া সহসভাপতি পুলিশ অফিসার মোঃ হালিম এবং নির্বাহী বোর্ডের সদস্য, পুলিশ অফিসার ও সাংবাদিক সর্দার আল মামুন বক্তব্য রাখেন।
জোহরান মামদানী তার বক্তব্যে জীবন কর্তৃক প্রাপ্ত সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, “আমি নিউইয়র্কের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করছি এবং আশা করছি সবাই আমার সাথে থাকবেন।”
জোহরান মামদানী শুধু প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী নন, তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তবে তার প্রকৃত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে দরিদ্রকেন্দ্রিক ও পুঁজিবাদবিরোধী নীতির কারণে।
নিউইয়র্ক সিটির প্রাক্তন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এবং বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের মত দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগ থাকলেও, জোহরানের নীতিমালা অন্য মেয়রদের তুলনায় বেশি কঠোর এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন এক মিলিয়ন ডলারের বেশি আয়কারী নাগরিকদের উপর অতিরিক্ত ২% কর আরোপ করবেন, যা ধনীদের জন্য “অতিরিক্ত কর” হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।
এর প্রভাব ইতিমধ্যে নিউইয়র্কের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে পড়তে শুরু করেছে। সিএনএন, ফক্স বিজনেস, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক পোস্টসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে এই নীতির কারণে ধনী ব্যবসায়ীরা ফ্লোরিডাসহ অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছেন বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নিউইয়র্কের বিলাসবহুল আবাসন ব্যবসায়ী জে বাতরা বলেন, “আমার দুই ক্রেতা ম্যানহ্যাটনে কোটি কোটি ডলারের বাড়ি কিনতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু জোহরানের মনোনয়নের পর তারা দ্বিতীয়বার ভাবছেন।”
সিএনএন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, নিউইয়র্কের ধনী জনগোষ্ঠী এখন বিনিয়োগে বেশি সতর্ক। গত ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই ব্যবসায়িক লেনদেনের মাত্রা কিছুটা কমেছে, যা জোহরানের প্রাথমিক বিজয়ের প্রভাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফক্স নিউজ জানিয়েছে, জোহরানের দলীয় মনোনয়নের পর ফ্লোরিডায় স্থানান্তরের আগ্রহ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লোরিডার বিলাসবহুল আবাসন ব্যবসায়ীরা নিউইয়র্কের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কর নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জোহরানের কর নীতির জন্য তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে ‘শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল’ বলেন। রিপাবলিকান নেতারা এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অভ্যন্তরীণ বিরোধীরা তার নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে, জোহরান নিজে সরাসরি কমিউনিস্ট নন বলে দাবি করেছেন। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আনা জিমালা এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক জিওফ্রে কার্টজের মত অনেক শিক্ষাবিদ তার ‘কমিউনিস্ট’ হওয়ার অভিযোগকে হাস্যকর বলছেন।
জোহরানের সমর্থকরা তাকে ‘জনবান্ধব’ হিসেবে দেখছেন, যিনি গণপরিবহন, বাড়িভাড়া ও খাদ্য সামগ্রীর দাম কমানোর জন্য কাজ করবেন। সরকারি খরচে কম খরচে গ্রোসারি দোকান চালু ও বিনামূল্যে যাতায়াত ব্যবস্থা চালুর মত প্রস্তাবগুলো তাদের মাঝে আশাবাদ সৃষ্টি করেছে।
তবে অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে জটিলতা রয়েছে। নিউইয়র্কের গভর্নরের সহযোগিতা ছাড়া বড় ধরনের পরিবর্তন আনা কঠিন হবে।
নিউইয়র্কের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে জোহরান মামদানির আগমন নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার প্রস্তাবিত নীতির প্রতি উৎসাহিত ও উদ্বিগ্ন উভয় পক্ষেই বড় সংখ্যক মানুষ রয়েছেন। আগামী নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে তার সম্ভাব্য বিজয় নিউইয়র্কের ভবিষ্যতকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা নজর রাখার বিষয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan