আমেরিকা , শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ , ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ডিয়ারবর্ন হাইটসের মসজিদে হুমকি : ইলিনয়ের এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার ৮ দল চাইছে আলাদা গণভোট, তিন উপদেষ্টার অপসারণ মিশিগান মেডিসিনের নতুন কান প্যাভিলিয়ন : বছরের শেষে রোগী সেবা শুরু হ্যালোইন সন্ত্রাস মামলায় ডিয়ারবর্নের তিনজন অভিযুক্ত হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র নির্বাচন : বিতর্কিত ৩৭ ব্যালটের কারণে ফলাফল অনিশ্চয়তায় ড. ইউনূসের ঘোষণায় বিএনপি খুশি জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে : প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মামলার রায় ঘোষণা ১৭ নভেম্বর বাগদানের ১০ দিন পর অ্যালেন পার্কের  ডাক কেন্দ্রে কর্মী নিহত, তদন্ত চলছে ডেট্রয়েট পাবলিক স্কুলের শিক্ষক যৌন প্রস্তাবে অভিযুক্ত হ্যামট্রাম্যাকের মেয়র নির্বাচন ঘিরে নতুন আইনি জটিলতা সেন্ট ক্লেয়ার নদীর উত্তর চ্যানেল থেকে নিখোঁজ মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকবে ডেট্রয়েট পিপল মুভার ডেট্রয়েটে খালি গির্জায় আগুন, আহত একজন মিশিগানে শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতা প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির উজ্জ্বল ছোঁয়া, শেষ হলো মিশিগান বইমেলা সাহিত্য, সৃজন ও আনন্দের ছোঁয়া মিশিগান বইমেলায় ফেডারেল স্থবিরতা, কিন্তু ক্ষুধার বিরুদ্ধে সক্রিয় ডেট্রয়েট হার্পার উডস হাই স্কুলের ফুটবল খেলায় গুলিবিদ্ধ ১৭ বছরের এক কিশোর

রিজার্ভ চুরি: ন্যায়ের পথে দীর্ঘ লড়াই

  • আপলোড সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০২:৫৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৬-০৯-২০২৫ ০২:৫৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
রিজার্ভ চুরি: ন্যায়ের পথে দীর্ঘ লড়াই
ঢাকা, ২৬ সেপ্টেম্বর : ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির এক শীতল ভোরে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেছিল এক অভূতপূর্ব আর্থিক বিপর্যয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে জাল সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হয়ে যায় ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মুহূর্তেই বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়—“ইতিহাসের অন্যতম বড় সাইবার ডাকাতি”।
চুরি হওয়া অর্থের একটি অংশ, প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার, পৌঁছে যায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)–এর মাকাতি সিটির জুপিটার শাখায় খোলা ভুয়া হিসাবে। পরবর্তীতে এই অর্থ ক্যাসিনো খাতের অন্ধকার জগতে পাচার হয়ে যায়। অপরদিকে, শ্রীলঙ্কায় পাঠানো প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ফেরত আসে।
গত প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশ সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোর অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফল অবশেষে দৃশ্যমান হলো। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ফিলিপাইনের আদালত আরসিবিসি ব্যাংকে রাখা ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত করেছে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাজেয়াপ্ত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহর নেতৃত্বে সিআইডি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে। নিঃসন্দেহে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সাফল্য।

ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়; এটি দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তিতেও গভীর আঘাত হেনেছিল। হ্যাকারদের জাল সুইফট বার্তা ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ সহায়তা পাওয়ার অভিযোগ এবং দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সবকিছু মিলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল আমাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা।
ঘটনার পর তদন্তে বেরিয়ে আসে, কেবল আন্তর্জাতিক হ্যাকার চক্র নয়, দেশের ভেতরের কিছু অসাধু চক্রও এই অপরাধে জড়িত থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর থেকে শুরু করে একাধিক কর্মকর্তা পর্যন্ত তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

আইনি লড়াইয়ের পথ
২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে। এর আগে ফিলিপাইনের আদালতে আরসিবিসি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মায়া ডিগুইটো মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন।
তবে এত বছরেও পুরো অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করতে পেরেছে। এবার আদালতের রায়ে বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

রাষ্ট্রের জন্য বার্তা
এই ঘটনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো—সাইবার নিরাপত্তা অবহেলার বিষয় নয়। যখন একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারে, তখন আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আজকের বিশ্বে আর্থিক অপরাধের ধরন বদলে গেছে। হ্যাকাররা আর ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে যায় না; তারা কম্পিউটারের সুইচ অন করেই কোটি কোটি ডলার উধাও করতে সক্ষম।
বাংলাদেশের জন্য এটি সতর্কবার্তা—ডিজিটাল নিরাপত্তা অবকাঠামো আরও শক্তিশালী করতে হবে, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির পথ রুদ্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও অর্থ ফেরত আসার পথে থাকা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অগ্রগতি। এই অর্থ ফেরত পাওয়া শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণ নয়, বরং রাষ্ট্রের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এখনও যেসব হ্যাকার চক্র এবং অভ্যন্তরীণ সহযোগীরা দোষী প্রমাণিত হয়নি, তাদের বিচারের মুখোমুখি কবে আনা হবে?
বাংলাদেশের জনগণ সেই জবাবের অপেক্ষায়।
লেখক : গণমাধ্যম কর্মী

নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য

সর্বশেষ সংবাদ
ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাথে মেয়র প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের মতবিনিময়

ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাথে মেয়র প্রার্থী সিরাজুল ইসলামের মতবিনিময়