সিলেট, ৩ অক্টোবর : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শেষ হলো প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। এই দিনে দেবী দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে ফিরে যান স্বামীগৃহ কৈলাসে। তাই মণ্ডপে মণ্ডপে আজ বিরাজ করছিল বিষাদের ছায়া। উলুধ্বনি, শঙ্খ, ঘণ্টা এবং ঢাকঢোলের বাজনায় ছিল দেবী দুর্গার বিদায়ের সুর। বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত হয় দশমীর বিহিত পূজা,পরে মন্ডপে মণ্ডপে দর্পণ বিসর্জন সম্পন্ন হয়। পাঁচ দিনব্যাপী এই শারদীয় উৎসবের জন্য ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর।
পুরাণ মতে, বিজয়া দশমীর অন্যতম আয়োজন ‘দেবীবরণ’। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানান, যা সিঁদুর খেলা নামে পরিচিত।
দশমীর দিন বাঙালি ঘরে ঘরে একই সুর ‘শুভ বিজয়া’। অথচ এই দিনের আবহে যে বিষাদের রং, তা কে না জানে! প্রতিমা বিসর্জনের ঢেউ খেলানো সুর, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের গর্জন আর ভেজা চোখের ভিড়ের মধ্যেই আমরা একে অপরকে বলি এই আশীর্বাদময় শব্দ। কেন তবে বিদায়ের এই দিনে মনের কষ্ট লুকিয়ে ‘শুভ বিজয়া’ বলার প্রথা গড়ে উঠল? এর উত্তর মেলে পুরাণ, কাব্য আর লোকবিশ্বাসে।
প্রাচীন পুরাণে বলা হয়েছে- মহিষাসুরের সঙ্গে নয় দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে দশম দিনে বিজয়ী হয়েছিলেন দেবী দুর্গা। অশুভের উপরে শুভের, অন্ধকারের উপরে আলোর এই জয়লাভকে বলা হয় ‘বিজয়া’। তাই এই দিনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রীতি প্রচলিত। এভাবেই মানুষের মনে থেকে যায় এক চিরন্তন বার্তা অসুরকে হারিয়ে নারীশক্তির মহিমা চিরকালীন।
অন্য এক জনপ্রিয় বিশ্বাসে, আশ্বিন মাসে দুর্গা তাঁর চার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আসেন। চার দিন আনন্দঘন সময় কাটিয়ে দশমীতে তিনি ফিরে যান কৈলাসে, স্বামী শিবের কাছে। এই বিদায়ের দিনকে তাই বলা হয় বিজয়া দশমী। মায়ের শ্বশুরবাড়ি ফেরার পথে কন্যা বিদায়ের আবেগই হয়ে উঠেছে উৎসবের মূল প্রতীক।
বিজয়া শেষে প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শুরু হয়।দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও বিজয়া দশমীতে নারীরা মেতে উঠেছিলেন সিঁদুর খেলায়। এরপর জমে উঠে কিনব্রিজের উত্তরাপ্রান্ত। কয়েকশ’ ট্রাকে শোভাযাত্রার মাধ্যমে সেখানে জড়ো হন পূণ্যার্থীরা।
এসময় উলু, শঙ্খধ্বনীতে, ঢাকঢোল কাঁসর ঘন্টায় মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক। দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে প্রতিমা ট্রাকে নিয়ে শোভাযাত্রা করে পূণ্যার্থীরা জড়ো হতে থাকেন নগরীর কিনব্রিজের উত্তরপ্রান্তে, চাঁদনীঘাটে।
এসময় সুরমা পয়েন্ট, সুরমা মার্কেট, জেলা পরিষদের সম্মুখভাগ ছিল লোকেলোকারণ্য। ঢাক-ঢোল ও নৃত্যের সাথে ভক্তরা ‘বলো দুর্গা মাই কি’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেন চারপাশ। এছাড়াও রেকর্ডে বাজতে থাকে বিভিন্ন ধরনের গান। অবশ্য বিসর্জনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সচেতন মহলের অনেকে। এ বছর সিলেট জেলা ও মহানগরে মোট ৬১৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে সিলেট মহানগরে সার্বজনীন ১৪২টি ও পারিবারিক ২০টি পূজা অনুষ্ঠিত হয়। জেলায় সার্বজনীন ৪২৭টি ও পারিবারিক ২৯টি পূজা হয়েছে। রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে এবার দুর্গাপূজা শুরু হয়। পূজা কোথাও কোনো অঘটনের সংবাদ পাওয়া যায়নি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan