ঢাকা, ১২ অক্টোবর : বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ)-এর প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে গভীর শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও মানবিক মূল্যবোধে পরিপূর্ণ এক অনুপ্রেরণামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হলো বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস ২০২৫। এবারের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ছিল — “Achieving the Promise: Universal Access to Palliative Care”, যার আলোকে অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত হয়েছে মানবিকতা, সেবার অঙ্গীকার এবং জীবনের শেষ প্রান্তে মর্যাদা রক্ষার দৃঢ় প্রত্যয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর ডা. এ. কে. এম. মতিউর রহমান ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, বিএমইউ। একটি প্রতীকী র্যালির মধ্য দিয়ে দিনের সূচনা হয়- যা সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবার দিকে একতার অগ্রযাত্রাকে চিহ্নিত করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ডা. নিজামউদ্দিন আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগ, বিএমইউ এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (PCSB); প্রফেসর ডা. মো. সারওয়ার আলম, সাবেক চেয়ারম্যান, ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, বিএমইউ; প্রফেসর ডা. সানজিদা শাহরিয়া, মহাসচিব, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ (PCSB); এবং ডা. রুমানা উদ দৌলা, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ প্যালিয়েটিভ ও সাপোর্টিভ কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং প্রধান, মেডিকো-মার্কেটিং বিভাগ, এ.সি.আই. ফার্মাসিউটিক্যালস। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষার্থী এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার দলের সদস্যরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসক, নার্স, হোম কেয়ার সার্ভিস প্রদানকারী ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট (PCA)-রা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তারা বলেন, মমতা ও সহানুভূতির ছোট ছোট উদ্যোগও একজন রোগীর জীবনের শেষ যাত্রাকে শান্ত, মর্যাদাপূর্ণ ও মানবিক করে তুলতে পারে। এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা উপস্থিত সকলকে গভীরভাবে আলোড়িত করে এবং এই বার্তাটি আরও দৃঢ় করে — মানবিক সেবাই মানবতার সর্বজনীন ভাষা।
দ্য ল্যানসেট কমিশন–এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ৭ কোটি ৩৫ লক্ষ মানুষ প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন অনুভব করে, কিন্তু মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষই এর সুবিধা পান। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭ লক্ষ ৮১ হাজার মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন হয়, অথচ বর্তমানে সেবা পৌঁছায় ১ শতাংশেরও কম মানুষের কাছে। এ বাস্তবতা সরকার, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সংগঠনগুলোর মধ্যে আরও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে আনে।
বিএমইউ ইতিমধ্যে এই সেবাকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, হোম-বেসড প্যালিয়েটিভ কেয়ার নেটওয়ার্ক গঠন, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে তাদের অঙ্গীকার—বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন ভূগোল বা অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের আওতায় আসতে পারেন।
অনুষ্ঠানের শেষে ছিল ধন্যবাদ জ্ঞাপন, কেক কাটা অনুষ্ঠান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মধ্যাহ্নভোজ, যা ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবিক বন্ধনের প্রতীক হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে প্রফেসর ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া বলেন: “প্যালিয়েটিভ কেয়ারে আমরা দিন গণনা করি না — আমরা প্রতিটি দিনকে অর্থবহ করে তুলি। প্রতিটি সেবার মুহূর্তেই থাকে আলো, করুণা, আর জীবনের প্রতি সম্মান।”
বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস ২০২৫ উদযাপন প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে একটি ক্রমবর্ধমান আন্দোলন গড়ে উঠছে — এমন এক আন্দোলন, যা নিশ্চিত করতে চায়, জীবনের শেষ মুহূর্তে যেন কেউ কষ্ট, নিঃসঙ্গতা ও বঞ্চনায় না থাকে, বরং পায় স্নেহ, সেবা ও মর্যাদাপূর্ণ যত্ন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan