উপস্থাপনায় ছিলেন আটলান্টার সুপরিচিত কবি ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ চৌধুরী, যিনি শুরুতেই তিন কবির নির্বাচিত কবিতার অংশ আবৃত্তি করে শ্রোতাদের স্বাগত জানান।
আয়োজনের সূচনা হয় রবীন্দ্রসংগীতের সুরে। ক্ষুদে শিল্পী মর্মী বসু তাঁর সুমধুর কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘সফল কর হে প্রভু আজি এ সভা’, যা প্রথম মুহূর্তেই শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
এরপর বাঁশির সুরে সভাকে মোহিত করেন আটলান্টার বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত শিল্পী মাহবুব মোর্শেদ আনোয়ার। তাঁর সুরে পুরো হল যেন সঙ্গীতের নদীতে ভেসে যায়।
মঞ্চে প্রথম কবিতা পাঠ করেন নাহিদ ফারজানা, যিনি নানা আঙ্গিকের কবিতার মাধ্যমে শ্রোতাদের নিয়ে যান ভাষা, অনুভূতি ও বেদনার গভীরে। পরবর্তী পর্যায়ে কবিতা পাঠ করেন অংকন বসু এবং উৎপল দত্ত। তিনজনই তাদের কবিতার যাত্রা, প্রেরণা, জীবনদর্শন ও সৃষ্টিশীল সময়ের অভিজ্ঞতা আলোচনার মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন।

উপস্থাপক রাশেদ চৌধুরীর অনন্য প্রশ্নোত্তরভিত্তিক পরিচিতি পর্ব কবিদের আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে দর্শকের। গতানুগতিক পরিচয়ের বদলে এই সংলাপমুখর পদ্ধতি অনুষ্ঠানটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
টানা দেড় ঘণ্টা ধরে খালি কণ্ঠে কবিতা পাঠ এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। উপচে পড়া দর্শকগণ পিনপতন নীরবতায় বসে বা দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন পুরো আয়োজন। তাঁদের মনোযোগ ও আগ্রহই প্রমাণ করে প্রবাসে বাংলা কবিতা আজও কতটা জীবন্ত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাহিত্যপ্রেমীরা। দুই বাংলার মানুষের এই অংশগ্রহণ প্রমাণ করে সীমানা পেরিয়েও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বন্ধন অটুট, প্রাণবন্ত এবং সমৃদ্ধ।
মঞ্চের পাশে সাজানো ছিল তিন কবির প্রকাশিত বইয়ের টেবিল, যাতে দর্শকরা নিজেদের পছন্দের বই সংগ্রহ করার সুযোগ পান। অনুষ্ঠানে অতিথিগণকে ‘আলো-প্রদীপ’ উপহার দেওয়া হয়। যা কবিতা, শিল্প ও সাংস্কৃতিক আলোর প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে অর্থবহ।
অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি চা ও নাস্তার মাধ্যমে। কবি-শিল্পী ও দর্শকদের আন্তরিক আলোচনা, সৌহার্দ্য ও প্রেরণায় হয়ে ওঠে এক স্মরণীয় উপলক্ষ।
শহরে আবৃত্তি-গান নিয়মিত হলেও দীর্ঘ সময় ধরে শুধু কবিদের কণ্ঠে তাঁদের স্বরচিত কবিতা শোনানোর ধারণাটি ছিল নতুন। এই ভাবনা পরে পরিণত হয় এক যৌথ প্রয়াসে—প্রবাসে কবিতা পাঠকে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং মানুষকে কবিতা পড়তে উৎসাহিত করা।
দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, আয়োজনটি তার উদ্দেশ্যে সফল।

নিজস্ব প্রতিনিধি :