ঢাকা, ১৭ নভেম্বর : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করা হয়।
রায়ে শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পাঠ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। ছয় অধ্যায়ের রায় পাঠের পর দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে তিন আসামির বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। যুক্তিতর্ক—পাল্টা যুক্তির শুনানি চলে ৯ কার্যদিন। প্রসিকিউশন যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার; যার মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, দালিলিক প্রমাণ ও জব্দতালিকা ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। মোট ৮৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
মামলার প্রথম অভিযোগে গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনের এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ উল্লেখ করে অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, তাঁর বক্তব্যের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র ছাত্র–জনতার ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। এতে দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা— এমন দাবি প্রসিকিউশনের। উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আলাপের অডিও রেকর্ডও আদালতে উপস্থাপিত হয়। এই নির্দেশ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ অভিযোগে তিনজনকেই ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’র আওতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
তৃতীয় অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
চতুর্থ অভিযোগে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার দায়েও শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও মামুন অভিযুক্ত।
পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয় নিরীহ আন্দোলনকারীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও তিনজনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্ক :