হবিগঞ্জ, ১৭ নভেম্বর : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি বহির্ভূত ৫৪টি আদেশে আটকে যাচ্ছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ২৫০০ প্রভাষকের পদোন্নতি। সারাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে (১৭ নভেম্বর) সোমবার বেলা ১২ টায় হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজে পদোন্নতি-বঞ্চিত প্রভাষকরা ‘নো প্রমোশন, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি পালন করেছেন।
জানা যায়, গত ৫ বছরের পদোন্নতি ১২ বছরেও হচ্ছে না শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য সকল কর্মকর্তার সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবিতে " বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষক পরিষদ " বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের মাঝে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ে পদোন্নতির ডিপিসি সভা সম্পন্ন করার পরও সরকারি আদেশ জারির মুহূর্তে আটকে যাচ্ছে ১২ বছর ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ২৫০০ প্রভাষকের পদোন্নতি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম ব্যাচ থেকে ৩৭তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতি যোগ্যদের অনতিবিলম্বে পদোন্নতি দাবি জানিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সদিচ্ছা ও যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ। কেননা পদোন্নতিযোগ্যদের তালিকায় থাকা ৩৫ ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ থাকছে না। অর্থাৎ বেতন কাঠামোতে কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা। সরকারের কোন আর্থিক খরচ ছাড়াই পদোন্নতি পেতে পারে এসব ব্যাচের কর্মকর্তারা।
৩২তম ও ৩৩তম বিসিএস ব্যাচের প্রায় চার শতাধিক প্রভাষক চাকরিতে যোগদানের এক যুগ পরেও প্রথম পদোন্নতি পাননি। এছাড়া ৩৪তম বিসিএস ১০ বছর, ৩৫তম বিসিএস ৯ বছর বছর এবং ৩৬তম বিসিএস ৮ বছর, ৩৭তম বিসিএস এর প্রভাষকরা ৭ বছরে পদার্পন করেছেন।
প্রভাষক হতে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির লক্ষে গ্রেডেশনভুক্ত কর্মকর্তার সংখ্যায় ৩২তম বিসিএসে রয়েছে ৫৪ জন, ৩৩তম বিসিএসে রয়েছে ৩৬১ জন, ৩৪তম বিসিএসে ৬৩১ জন, ৩৫তম বিসিএসে ৭৪০ জন ৩৬ বিসিএসে ৪৬০ জন, এবং ৩৭তম বিসিএসে ১৫৩ জন। উপরোক্ত ব্যাচের কর্মকর্তারা যোগ্যতা অর্জন করলেও আজ অবধি সবার পদোন্নতি হয়নি। অন্যদিকে একই ব্যাচের অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই প্রথম পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা যায়।
পদোন্নতি বঞ্চিত বৃন্দাবন সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক দীপক কুমার দাস বলেন, "আমাদের কর্মসূচি হচ্ছে, নো প্রমোশন নো ওয়ার্ক। দাবি হচ্ছে শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত পদোন্নতিযোগ্য সকল প্রভাষকের পদোন্নতি। উদ্দেশ্য হচ্ছে— শিক্ষায় যথাযথ সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে শিক্ষার্থীদেরকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা। পদোন্নতি কর্মক্ষেত্রে প্রণোদনা দেয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মরত কর্মকর্তারা সেই প্রণোদনা থেক বঞ্চিত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে।"
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩৪ ব্যাচের কর্মকর্তা বৃন্দাবন সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক জেসমিন আক্তার, "যথাসময়ে পদোন্নতি না হওয়ায় আমাদের মনোভাব ভেঙে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। তাই শিক্ষার উন্নয়নের জন্য, রাষ্ট্রকে শিক্ষার সুফল এনে দেওয়ার জন্য প্রভাষক পর্যায়ে কর্মরত বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান জরুরি।"
বৃন্দবন সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো: জলিলুর রহমান খান, "আমার ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত সকলের পদোন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমরা সকল শর্ত পূরণ করা শর্তেও পদোন্নতি পাচ্ছিনা। এতে আমরা সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের পদোন্নতি হলে আমরা আরও ক্লাসে মনোযোগী হতে পারতাম। এই পদোন্নতির জন্য আমরা আরও উচ্চতর ডিগ্রিও গ্রহণ করতে পারছি না।"
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

মনসুর আহমেদ :