স্কটল্যান্ড, ১৭ নভেম্বর : স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষিক্ত হলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই। গতকাল ১৬ নভেম্বর (রবিবার) এডিনবরার ব্রিটানিয়া স্পাইস রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সেরিমনি অব ইনস্টলেশন অনুষ্ঠানে তার হাতে দায়িত্বপত্র তুলে দেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম। ১৬ বছর পর আবারও তাকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই আমাদের গৌরব। স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় তিনি এক নিবেদিতপ্রাণ রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা ও পরিচয় স্কটিশ সমাজে তুলে ধরতে তার ভূমিকা অনন্য। তিনি আরও জানান যে কনসালদের কর্মস্থল তাদের নিজস্ব শহরেই হওয়া উচিত, এবং এডিনবরায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার অফিস স্থাপনের পর থেকেই ড. ওয়ালীকে পুনরায় এই পদে নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই দীর্ঘদিন স্কটল্যান্ডে চিকিৎসা, সমাজসেবা এবং সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কাজ করে পরিচিত মুখ। চিকিৎসক হিসেবে পেশাগত অবদানের পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সংগঠিত করা, অভিবাসী তরুণদের শিক্ষায় আগ্রহী করা এবং বড় বড় আন্তর্জাতিক কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার সরব উপস্থিতি রয়েছে।
অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের সেবায় নিজেকে আবারও যুক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত। স্কটিশ জনগণ ও বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে সেতুবন্ধন আরও দৃঢ় করাই আমার প্রথম দায়িত্ব হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এডিনবরায় কর্মরত কূটনীতিক, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং বাংলাদেশি প্রবাসীরা। তারা ড. ওয়ালীর এই পুনর্বহালকে “বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বড় প্রাপ্তি” বলে উল্লেখ করেন। এই নিয়োগের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের কনস্যুলার কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
উল্লেখ্য, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই ১৯৯৩ সালে প্রথমবার স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে ২০০৯ সালে নতুন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর এই পদ স্থগিত হয়ে যায়।
ড. ওয়ালী ১৯৫২ সালে মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। একজন সফল ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা হিসেবে ব্রিটেন, ইউরোপ ও বাংলাদেশে তিনি খ্যাত। এডিনবরায় তিনি ‘বারান্দা’, ‘ল্যান্সার’ ও ‘ব্রিটানিয়া স্পাইস’ রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবিক কার্যক্রমে তার অবদানের জন্য ড. ওয়ালীর খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। তিনি ১৯৯২ সালে ‘ইয়ং স্কট অব দ্য ইয়ার’, ১৯৯৯ সালে ‘ইন্ডাস্ট্রি পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার’, ‘এশিয়ান জুয়েল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট’সহ বহু এওয়ার্ড লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে বৃটেনের রানী তাকে এমবিই উপাধিতে ভূষিত করেন এবং ১৯৮৪ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে ‘জাস্টিস অব পিস’ হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়া তিনি এডিনবরা নেপিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, হেরিওট ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুইন মার্গারেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক অনারারী ডক্টরেট লাভ করেছেন, যা কোনো বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ব্যক্তির জন্য বিরল।
ড. ওয়ালী অসংখ্য সেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইবিএফসিএ) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার আত্মজীবনী “Wali Uddin: Blessed Son of Two Nations” প্রকাশিত হয়েছে। অনারারী কনসালের মাধ্যমে ড. ওয়ালী স্কটল্যান্ড–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও গতিশীল করতে নিবেদিতভাবে কাজ করবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

শহিদুল ইসলাম :