রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

গোবর্ধন পুজোতেই মিলবে শ্রীকৃষ্ণের আশীর্বাদ!

  • সুপ্রভাত মিশিগান ডেস্ক :
image

কলকাতা, ২৫ অক্টোবর : সবকিছু ঠিক ছিল, কিন্তু মাঝে সূর্যগ্রহণ করে পিছিয়ে গেল গোবর্ধন পুজো। সাধারণত প্রতিবছর দীপাবলির পরের দিন ঘরে ঘরে গোবর্ধন পুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু ২০২২ এ সেই নিয়মে ছেদ পড়েছে। সূর্য গ্রহণের কারণে ২৫শে অক্টোবর নয়, ২৬শে অক্টোবর হবে গোবর্ধন পুজো। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এই পুজো হয় প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে। এই দিন মূলত আরাধনা করা হয় গোবর্ধন পর্বত এবং কৃষ্ণকে। শুভ তিথি মেনে, বাড়ির আঙিনায় গোবর দিয়ে বানানো হয় এই বিশেষ পর্বত। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। যার নেপথ্যে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে ৫৬ ভোগের নৈবেদ্যের আসল কারণ। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এই দিন শ্রীকৃষ্ণ গোবর্ধন পর্বতকে নিজের আঙুলে তুলে রেখেছিলেন। যার কারণে ইন্দ্রদেবের ক্রোধ থেকে রক্ষা পেয়েছিল ব্রজবাসী এবং পশু-পাখিরা।

নেপথ্যে কোন কাহিনী?
জনশ্রুতি অনুযায়ী, একদিন শ্রীকৃষ্ণ লক্ষ্য করেন ব্রজবাসীরা পুজোর মণ্ডপ সাজিয়ে নানান ধরনের খাবার তৈরি করছেন। সেই কাজে সবাই তুমুল ব্যস্ত। তখন তিনি যশোদা মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই পুজো কার জন্য। যশোদা উত্তর দেন ব্রজবাসীরা ইন্দ্রদেবের পুজোর আয়োজন করছেন। যেহেতু ইন্দ্রদেব আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যার কারণে শস্যশ্যামলা হয়ে ওঠে পৃথিবী। এই কথার উত্তরে কৃষ্ণ বলেছিলেন, বৃষ্টি বর্ষণ করা ইন্দ্রদেবের কর্তব্য। এক্ষেত্রে গোবর্ধন পর্বতকে পুজো করা উচিত। কারণ গোবর্ধন পর্বতের পাদদেশে গরু চরে বেড়ায়। এছাড়াও এই পর্ব থেকে নানান রকম ফল, ফুল, শাকসবজি পাওয়া যায়। কৃষ্ণের কথায় মুগ্ধ হয়ে ব্রজবাসীরা সেদিন থেকে গোবর্ধনের পুজো শুরু করেন। অপরদিকে এই কাজে অত্যন্ত রুষ্ট হন ইন্দ্রদেব।
অপমানের জ্বালা মেটাতে দেবতা ইন্দ্র ব্রজবাসীর উপর প্রবল বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করেন। ফলে ব্রজবাসী অত্যন্ত অসহায় হয়ে শরণাপন্ন হন কৃষ্ণের। কৃষ্ণ ব্রজবাসীর রক্ষার্থে বিশালাকায় গোবর্ধন পর্বত আঙুলের উপর তুলে ধরে থাকেন। উঁচু হয়ে যাওয়া গোবর্ধন পর্বতের নিচে আশ্রয় নেন ব্রজবাসীগণ। দেবতা ইন্দ্র সাতদিন ধরে নিরবধি এই বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছিলেন। সাত দিনই ব্রজবাসী আশ্রয় নিয়েছিলেন গোবর্ধন পর্বতের নিচে। মা যশোদা প্রতিদিন কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার করে খেতে দিতেন। তাই ব্রজবাসী ওই নিরন্তর বৃষ্টির মধ্যেও সাতদিন ধরে কৃষ্ণকে দৈনিক আট বার নানা সুস্বাদু পদ বানিয়ে দিতেন। সাত দিন ধরে দৈনিক আটটি পদ, অর্থাৎ মোট ছাপান্নটি পদ ব্রজবাসী কৃষ্ণের জন্য তৈরি করেছিলেন। তাই প্রতি বছর জন্মাষ্টমী এবং গোবর্ধন পুজোয় কৃষ্ণের নৈবেদ্যে রাখা হয় ছাপান্ন রকমের পদ। যদিও কৃষ্ণকে তাঁর ভক্তবৃন্দ খুশি হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী যতগুলি পদ নিবেদন করুক না কেন তিনি তাই গ্রহণ করেন। কৃষ্ণ প্রেমীরা তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী ডালা সাজিয়ে দেন। ছাপান্ন ভোগের মধ্যে রয়েছে চাটনি, মোহনভোগ, মালপোয়া, রাবড়ি, তিলের নাড়ু, কাজু, বাদাম, ক্ষীর, পিঠে, রসমালাই, খিচুড়ি, বেগুনি, নানা ধরনের শাকসবজি, মোহনভোগ, চাটনি, পাপড়, পায়েস, দই, মুগ ডালের হালুয়া, রসগোল্লা, জিলিপি, মাখন প্রভৃতি সুস্বাদু পদ। অনেক ভক্ত আবার ভালোবেসে প্রতিবছর কুড়ি রকমের মিষ্টি সাজিয়ে দেন শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে।
সূত্র : প্রথম কলকাতা


এ জাতীয় আরো খবর