সোমবার, মে ৬, ২০২৪

শিব মন্দির মাতিয়ে গেলেন গৌরী চৌধুরী : ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত মৃধা পরিবার

  • নিজস্ব প্রতিবেদক :
image

ওয়ারেন, ২৭ নভেম্বর : জমকালো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিব মন্দির টেম্পল অব জয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৬ নভেম্বর) মন্দির প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল গীতা পাঠ, বিষ্ণু পুজা, আলোচনা সভা, ক্রেস্ট বিতরণ, কেক কাটা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র। অনুষ্ঠানে সুরের মূর্চ্ছনায় দর্শকদের মুগ্ধ করলেন গ্রেট ব্রিটেনের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী এবং গানের শিক্ষক গৌরী চৌধুরী।


সন্ধ্যা ৬টায় মন্দিরে পৌঁছেই ড. দেবাশীষ মৃধা ও তার পরিবার পেলেন উষ্ণ সংবর্ধনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা। ভক্তদের ভালোবাসায় সিক্ত হন তারা। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে  শিব মন্দির টেম্পল অব জয়ের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্বোধন করেন ড. দেবাশীষ মৃধা, তাঁর সহধর্মিনী চিনু মৃধা ও কন্যা অমিতা মৃধা। এ সময় ড. দেবাশীষ মৃধাকে মন্দিরের প্রধান প্রিস্ট পুর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু এবং তাঁর সহধর্মিনী চিনু মৃধা ও কন্যা অমৃতা মৃধাকে  উত্তরীয় পরিয়ে দেন চন্দনা বানার্জী। 

পরে তাদেরকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করেন মন্দিরের ভক্তরা। মন্দিরে প্রবেশ করে তারা লবিতে স্থাপিত তাদের ম্যুরাল উন্মোচন করে কেক কাটায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২১ জনকে ক্রেস্ট, ৯ জনকে ট্রফি ৬০ জনকে সাটিফিকেট এবং অনেককেই গিফট বক্স প্রদান করা হয়েছে। 

মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চিনু মৃধার সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, খ্যাতিমান চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা, আর টিভির মিশিগান প্রতিনিথি কামরুজ্জামান হেলাল, জনকন্ঠ প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, মন্দিরের প্রিস্ট  পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু, মন্দিরের কো অর্ডিনেটন রতন হাওলাদার প্রমুখ।  

সঙ্গীতানুষ্ঠানে গ্রুপ নৃত্য পরিবেশন করেন অন্তরা অন্তি, রিয়া রায় ও কৃষ্টি পাল।  মহুয়া দাস সরকারের কোরিওগ্রাফিতে মিশিগান কালিবাড়ির শিল্পীরা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন। দলীয় শিল্পীরা হলেন-পৃথিকা দত্ত, অদিতি ধর, অরেল চ্যাটার্জি, গুনগুন গুহ, আনুশকা মন্ডল দেবশ্রী রায়, আরুশি চ্যাটার্জি। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করেন নটরাজ শিল্পী গোষ্ঠীর অজিত দাশ, চিনু মৃধা, সুস্মিতা চৌধুরী, নীলিমা রায়, সঙ্গীতা পাল, প্রতিভা কপালী, মিতা চৌধুরী, রূপাঞ্জলী চৌধুরী, সুমা দাশ, রাজশ্রী শর্মা, অপূর্ব চৌধুরী, স্মৃতি কর, গৌরি আচার্য্য বেবী, জ্যোস্না বিশ্বাস, কৃষ্ণ দাস, কাবেরী দে, স্বদেশ সরকার, রতন হাওলাদার। যন্ত্রে ছিলেন  ঋষিকেশ  দাশ, অতুল দস্তিদার, অশোক দাশ।

রাত সাড়ে ৮টায় মঞ্চে আসেন প্রখ্যাত শিল্পী গৌরী চৌধুরী। তিনি একে একে বেশ কয়েকটি দর্শকনন্দিত গান পরিবেশন করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের চিত্ত জয় করেন। রাধারমণের ভ্রমর কইও গিয়া  গানটি  গেয়ে তিনি সিলেটের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, গেয়েছেন সেই গানটিও। তার সুরের মূর্ছনায় হল ভর্তি দর্শক-শ্রোতা এক অভাবনীয় ব্যঞ্জনায় আবিষ্ট হয়ে পড়েন। 

সেই সাথে তার কোন কোন  গানের সঙ্গে নেচে গেয়ে  আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দর্শকরা। তাদের  উচ্ছ্বাস অনুষ্ঠানকে করে তোলে আরো প্রাণবন্ত। শিল্পীকে যন্ত্রে সহযোগিতা করেন গিটারে  শাওন বড়ুয়া, কীবোর্ডে অভিষেক চৌধুরী, অক্টোপ্যাডে আকাশ চৌধুরী এবং তবলায় শিমুল দত্ত।  

রাতের ডিনার শেষে অনুষ্ঠিত হয় র‍্যাফেল ড্র।  প্রথম পুরষ্কার স্বর্নের চেইন জিতেছেন শ্রদ্ধা হাওলাদার। দ্বিতীয় পুরষ্কার টেলিভিশন বকুল পাল, তৃতীয় ও পঞ্চম পুরষ্কার অমূল্য চৌধুরী, জিতেন গোপ চতুর্থ  এবং রাখি রঞ্জন রায় ৭ম পুরষ্কার পেয়েছেন। 


র‍্যাফেল ড্র নিয়ে  আকর্ষনীয় গান রচনা করেন প্রিস্ট পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু। তিনি ও তার দল এই গান গেয়ে  টিকেট বিক্রি করেন। দর্শক এবং টিকেট ক্রেতারা এটি উপভোগ করেন।

উল্লেখ্য, দৃষ্টিনন্দন এই মন্দিরটি প্রবাসী হিন্দুদের জন্য দান করেছেন সাগিনা সিটির বাসিন্দা, দানশীল ব্যক্তি, খ্যাতিমান চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা, তাঁর সহধর্মিনী চিনু মৃধা ও কন্যা অমৃতা মৃধা। গেল বছর মন্দিরটি স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার এক বছর পেরিয়ে ইতিমধ্যে মন্দিরটি দ্বিতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হয়েছে বর্ষপূর্তি।

মন্দির সূত্রে জানা গেছে, মন্দিরটি আরও আকর্ষণীয় করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে মন্দিরটি সাজছে নবরূপে । সৌন্দর্যায়নের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে জানা গেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামগ্রী এসে পৌছেছে মন্দির প্রাঙ্গনে। মন্দিরের বাইরে বসনো হবে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি। বিশেষ করে মন্দিরের সামনে সার্কুলার ড্রাইভে বসানো হবে ৭ ফুট উচ্চতার অপুর্ব  সুন্দর মার্বেলের তৈরী শিব মূর্তি, সাথে থাকবে পানির ফোয়ারা। 


মন্দিটির সংস্কারে প্রায় ৫ লাখ ডলার খরচ করা হবে। মিশিগানে এটি হবে বাঙালীদের জন্য একটি অতি সুন্দর দর্শনীয় উপাসনালয়। ৩ দশমিক ৫ একর জায়গার উপর ১৩ হাজার ২ শত ৮০ বর্গফুট  আয়তনের এই স্থাপনাটি প্রায় ১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কেনা হয়েছে।

 

 

 


এ জাতীয় আরো খবর