সোমবার, মে ৬, ২০২৪

রঙে রঙিন শিব মন্দির

  • নিজস্ব প্রতিবেদক :
image

ওয়ারেন, ১২ মার্চ :  বসন্ত এসে গেছে...। আর বসন্ত মানেই হল তো দোলযাত্রা। গেলকাল শনিবার বিকেলে নগরীর শিব মন্দির টেম্পল অব জয়ে  নাচ, গান, কবিতায় বসন্ত উৎসব ও দোল পূর্নিমা  উদযাপিত হয়েছে। 
আর এ উৎসবে বর্ণিল সাজে অনুষ্ঠানে আসেন বসন্তপ্রেমীরাও। বাসন্তী রঙের শাড়ি, নানা রঙের পাঞ্জাবি এবং রঙিন ফুলে নিজেকে সাজিয়েছেন নানা বয়সের মানুষ। গানের তালে তালে চলে নৃত্য পরিবেশনা। সেইসঙ্গে আবৃত্তি, গানে মুগ্ধ সবাই। সেই সাথে একে অপরকে আবির মাখিয়ে বিনিময় করলেন দোলের শুভেচ্ছা। এ যেন এক প্রাণের উৎসব। 


অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন রুমানা রশিদ, পার্থ ঘোষ ও চিনু মৃধা।  সুকন্যা শুক্লার কোরিওগ্রাফিতে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন মৃত্তিকা সরকার ও অর্পিতা সেন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন তপন প্রভু ও  চিনু মৃধা। 
অন্তরা দাস অন্তির কোরিওগ্রাফিতে গ্রুপ নৃত্য পরিবেশন করেন নটরাজ নৃত্যকলা কেন্দ্রের শিশু শিল্পী অরিত্রি, আরিয়ানা, শোহানি, জেসিকা ও পুষ্পিতা। অপর শিশু শিল্পী গ্রুপ নৃত্য পরিবেশন করেন অনুষ্কা, স্বরনিকা, প্রমিতা এবং ওম্বিকা। কিশোরী গ্রুপ নৃত্য অংশ নেন  অমিতা, রিয়া, কৃষ্টি, ঈশিকা, কুয়াশা, অথয়, মৌ এবং অন্তরা।


অন্তরা দাস অন্তির কোরিওগ্রাফিতে  বড়দের গ্রুপ নৃত্যে অংশ নেন চিনু মৃধা, অন্তরা অন্তি, সুস্মিতা চৌধুরী, নীলিমা রায়, রাজশ্রী শর্মা, সঙ্গীতা পাল, কৃষ্ণা দাস, বেবী আচার্য্য, জোৎস্না বিশ্বাস, শিল্পী পাল, অনন্যা বহ্নি, চম্পা পুরকায়স্থ, চৈতি পাল, অনুপা ঘোষ।
দলীয় সঙ্গীত (মহিলা গ্রুপ) পরিবেশন করেন চিনু মৃধা, সুস্মিতা চৌধুরী, নীলিমা রায়, রাজশ্রী শর্মা, সঙ্গীতা পাল, সুমা দাস, চন্দনা ব্যানার্জী, কৃষ্ণ দাস, ফাল্গুনী সোম, বেবী আচার্য্য ও জোৎস্না বিশ্বাস।


সমবেত সঙ্গীত (পুরুষ গ্রুপ ) পরিবেশন করেন রতন হাওলাদার, স্বদেশ রঞ্জন সরকার, অতুল দস্তিদার, হিমেল দাস, দেবব্রত রাহুল, রাখি রঞ্জন রায়, অপূর্ব কান্তি চৌধুরী, ঝন্টু দাশ, কমলেন্দু পাল,  কুলেন্দু পাল, পূর্নেন্দু চক্রবর্তী অপু এবং অসিত বরন চৌধুরী। 

 
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট চিকিৎসক ও দার্শনিক ড. দেবাশীষ মৃধা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দেবাশীষ মৃধা বলেন, পৃথিবীর সবচেয় সুন্দরতম রঙ হলো  ভালোবাসার রঙ। তাই আপনাদের সকলকে ভালোবেসে ভালোবাসার রঙে সাজিয়ে দিলাম। তিনি বলেন, আনন্দের রঙ, জীবনের সবচেয়ে সুন্দরতম রঙ। আর সুখ হলো পরিবারে সুন্দরতম রঙ। তাই আসুন আমরা সবাই পরিবারের জন্য  সুখের রঙ তৈরি করি। শান্তি হচ্ছে এই মহা বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রঙ। এ বিশ্বকে শান্তির রঙে রাঙিয়ে দিতে দোল পুর্নিমা হোক এবারের শপথ। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৌরভ চৌধুরী ও মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা চিনু মৃধার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কামরুন  হায়দার, মৃধা বেঙ্গলি কালচারাল সেন্টারের কো অর্ডিনেটর মৃদুল কান্তি সরকার। সাউন্ড সিস্টেমে ছিলেন রাজর্ষি চৌধুরী গৌরব।


এছাড়াও অনুষ্ঠানে কেক কেটে ও মালা বদলের মাধ্যমে বিয়ে বার্ষিকী পালন করলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৌরভ চৌধুরী ও সুস্মিতা চৌধুরী এবং মন্দিরের একনিষ্ট ভক্ত কুলেন্দু পাল ও সঙ্গীতা পাল ।  আর শিব মন্দিরে এই অনুষ্ঠানের প্রচলন একেবারেই নতুন। খুবই আনন্দের সঙ্গে দম্পতিদের বিয়ে বার্ষিকী পালনের রীতি চালু করা হয়েছে। যা সকলের কাছে ক্রমশই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।


দোলযাত্রা মূলত একটি হিন্দু বৈষ্ণব উৎসব বলেই বিবেচিত হয়। তাহলেও সর্ব ধর্মের মানুষের সান্নিধ্যের মধ্য দিয়েই উৎসবের আসল প্রাপ্তি। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।  আবিরে ভেসে যাওয়া, রঙের খেলা, বাঙালির ইতিহাসে শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্যদেব সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।


দোল উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছেন রাধা-কৃষ্ণ। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। 


আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। দোল বা হোলি ধর্মীয় অনুষঙ্গের আড়ালে থাকা এক সামাজিক অনুষ্ঠানও, যার সার্বজনীন আবেদন আছে। দোলযাত্রা উৎসবের একটি ধর্মনিরপেক্ষ দিকও রয়েছে। এখন আর শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে হোলি খেলা নয়, বরং সব ধর্মের নারী পুরুষের মধ্যেই রং খেলার প্রবণতা দেখা যায়।

 


এ জাতীয় আরো খবর